স্বাস্থ্য খরচের চাপে আর্থিক বিপর্যয়ে ৪৪% পরিবার
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খরচের ভার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি পড়ে। অনেকেই চিকিৎসা নিতে পারেন না অর্থাভাবে। অনেকে আবার সঞ্চয় শেষ করে, ধারদেনা করে কিংবা সম্পদ বিক্রি করে চিকিৎসা ব্যয় মেটান। এ কারণেই আর্থিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বলতে বোঝায়, প্রত্যেকে আর্থিক বোঝা ছাড়াই প্রয়োজনীয়, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাবেন এবং অসুস্থতার কারণে কেউ দরিদ্র হয়ে পড়বেন না। এ লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়। শুরুতে কিছু অগ্রগতি হলেও ২০১৫ সালের পর থেকে কার্যক্রমে বড় ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়।
ডব্লিউএইচওর সূচকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ইউএইচসি স্কোর ছিল ৪৫। ২০২১ সালে তা বেড়ে ৫২ হলেও ২০২৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৪তে। অথচ ২০৩০ সালের ৭৪ স্কোর অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে। অথচ তা অর্জনে প্রয়োজনীয় গতি নেই।
অতিরিক্ত ব্যক্তি খরচও একটি বড় সংকট। ২০১২ সালে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৪ শতাংশই রোগীদের পকেট থেকে আসত। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন এই হার ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ কৌশলপত্রে বলা ছিল, ২০৩২ সালের মধ্যে এই হার নামিয়ে ৩২ শতাংশে আনা হবে।
এই বাস্তবতায় আজ শুক্রবার বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস’। জাতিসংঘের আহ্বানে ২০১৭ সাল থেকে ১২ ডিসেম্বর দেশে দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অসাধ্য স্বাস্থ্য ব্যয়? আমরা এ নিয়ে ক্লান্ত’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ইউএইচসি অর্জন আমাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। কারণ, নেই কোনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি; নেই প্রয়োজনীয় আইন বা নীতি ও অর্থায়ন।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ও আইসিডিডিআর,বির শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে মূলত দরিদ্র মানুষ। কিন্তু তাদের সুরক্ষায় গত ৮-১০ বছরে কোনো সরকারের কোনো কার্যকর কর্মসূচি ছিল না। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আলাদা তহবিল গড়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।’
আরও পড়ুন বৈষম্য নারীর মস্তিষ্কে অদৃশ্য ক্ষত তৈরি করে
ঢাকাভয়েস/এই


No comments