প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসছে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ
‘ভুয়া তথ্য এখন শাসনযন্ত্রের অংশ’
ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার, অ্যালগরিদমনির্ভর প্রচারযুদ্ধ এবং রাষ্ট্রীয়-বেসরকারি শক্তির প্রতিযোগিতায় বিশ্বজুড়ে ‘সত্য’ ক্রমেই ঝাপসা হয়ে উঠছে– এমন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে ‘দ্য ডিসইনফরমেশন রিপাবলিক: হাউ লাইস বিকাম গভর্নমেন্ট টুলস’ শীর্ষক আলোচনায়।বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের গণতন্ত্র, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত এ বৈঠকে বক্তারা বলেন, ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য এখন শুধুই নির্বাচন প্রভাবিত করছে না; এটি জনগণের আস্থা, অংশগ্রহণ ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির কাঠামোকেও বদলে দিচ্ছে।আধুনিক গণতন্ত্র বিশ্লেষক আলভারো উতুরিয়া বলেন, গত কয়েক বছরে ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন শুধু সাধারণ মানুষ নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানও দ্রুতগতির প্রযুক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু নীতি ও নিরাপত্তা বিধানের দক্ষতা সেই অনুপাতে বাড়েনি। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বিচারকের ৪৪ শতাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাদের মাত্র ৭ শতাংশ জানেন, মানবাধিকার নির্দেশনার মধ্য থেকে তা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আগাম প্রস্তুতি নয়, বরং ভুল হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।ইউএনডিপি বাংলাদেশের নির্বাচন সহায়তা কর্মসূচির প্রধান প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা আন্দ্রেস দেল কাস্তিয়ো বলেন, ভুল তথ্য নতুন কিছু নয়, উপনিবেশিক যুগে থেকে শুরু করে ধর্মযাজকদের বয়ানেও তা দেখা গেছে। তবে নির্বাচনের মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রে এর প্রভাব আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি।গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভের মং মিন তোয়ং বলেন, ভুয়া খবর বা ঘৃণাবাচক বক্তব্য কী, তা নিয়ে আইনি সংজ্ঞার ঘোলাটে অবস্থা এবং ফ্যাক্ট চেকিংয়ের স্বাধীনতার সংকট রয়েছে। তাঁর বিশ্লেষণ, অনেক সরকার এখন প্ল্যাটফর্মকে বাধ্য করছে এমন নীতি গ্রহণ করতে, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট কনটেন্ট সরিয়ে ফেলা যায়। এর ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চাপ বাড়ছে। আলোচনায় নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ভুয়া তথ্য শুধু নির্বাচনী রাজনীতিকে নয়, সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও নাগরিক আস্থাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।
‘একটি দলিলে সব সংস্কার সম্ভব নয়, সনদ সূচনা মাত্র’
জুলাই জাতীয় সনদকে ভবিষ্যতের পথরেখা তথা সংস্কারের সূচনা বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিলোপের পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্বে আসা অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ‘ফ্রাজিলিটি অ্যাজ দ্য নিউ নরমাল স্টেটস ইন পার্মানেন্ট ইমারজেন্সি’ সেশনে সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে ভুয়া প্রচারেরও জবাব দেন।চলতি মাসের শুরুতে একজন বিএনপি নেতার বক্তব্যের বরাতে সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, ঐকমত্য কমিশন শুধু আপ্যায়ন নাশতাতেই ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। পরে জানায়, ৯ মাসে কমিশনের বেতন ভাতাসহ সাকল্য ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ টাকা। ৩০ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিন মাসের সংলাপসহ এই সময়ে আপ্যায়নে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।আলী রীয়াজ বলেছেন, ফলে যারা মিথ্যাচার পুনরাবৃত্তি করেছে, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যে কোনো ঘটনায় সর্বশেষ ভাষ্যটি লক্ষ্য করা জরুরি। যারা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তারা কিন্তু ব্যয়ের হিসাবের কোনো কথা বলেননি। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মিথ্যাচার করে থাকে, এই দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ কেন– এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, দেশে এখন কথার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যে কোনো কাজ করলে সমালোচিত হওয়াই স্বাভাবিক। ৩০ দলের সঙ্গে সংলাপে কমিশন একটি সনদ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করি, জনগণের সমর্থনে কাঠামোগত ও সাংবিধানিক সংস্কার সম্ভব হবে। আলী রীয়াজ বলেন, যারা মনে করে সংস্কারের ইস্যুটি মারা গেছে, তারা তা লিখতে পারেন। এই অভ্যাস তাদের আছে। তবে এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটুকু বলতে পারি, একটি দলিল দিয়ে সব সংস্কার সম্ভব নয়। এটি সূচনা মাত্র |
আরও পড়ুন ভূমিকম্প হলে কী করবেন, কী করবেন না
ঢাকাভয়েস/এই
.webp)

No comments