Adsterra

লোড হচ্ছে...

পোষা প্রাণী ঘরে থাকলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি বাড়ে ?


পোষা প্রাণী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, আমিশ সম্প্রদায়, ইমিউন সিস্টেম, অ্যালার্জি, একজিমা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, মাইক্রোবায়োম, কুকুর, বিড়াল, শিশুর স্বাস্থ্য,

গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণীর উপস্থিতি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কুকুর, বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে বসবাস করলে হাঁপানি, একজিমা, অ্যালার্জি এমনকি কিছু অটোইমিউন রোগের ঝুঁকিও কমে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

আমিশ সম্প্রদায়ের রহস্য

অষ্টাদশ শতকে ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় আসা আমিশ সম্প্রদায় আধুনিক জীবনযাত্রা থেকে দূরে থেকে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে জীবনযাপন করে। তারা গবাদি পশু লালন-পালন করে এবং প্রাণীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে বসবাস করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, আমিশদের মধ্যে হাঁপানি, একজিমা ও অ্যালার্জির হার আশ্চর্যজনকভাবে কম — যা তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

একই ধরনের জীবনযাপন করেও হুটেরাইটস সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে এসব রোগের হার বেশি। কারণ তারা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং প্রাণীদের সংস্পর্শে কম আসে।

২০১৬ সালের এক যুগান্তকারী গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যায়, আমিশ শিশুদের ‘টি-সেল’ (T-cell) বেশি সক্রিয়, যা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শৈশবে প্রাণীর সাহচর্য

বিভিন্ন দেশের গবেষণায়ও দেখা গেছে, শৈশবে প্রাণীর সঙ্গে বড় হওয়া শিশুদের হাঁপানি বা অ্যালার্জির ঝুঁকি অনেক কম।

‘মিনি ফার্ম ইফেক্ট’ নামের এই ধারণা অনুযায়ী, শৈশবের প্রথম দিকেই যদি শিশু প্রাণীর সংস্পর্শে আসে, তার ইমিউন সিস্টেম আরও শক্তিশালীভাবে গড়ে ওঠে।

অধ্যাপক জ্যাক গিলবার্ট জানিয়েছেন, যারা কুকুরের সঙ্গে বড় হয়, তাদের অ্যালার্জির ঝুঁকি প্রায় ১৩–১৪% কমে যায়।

কুকুরের উপস্থিতি ও একজিমা প্রতিরোধ

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, জিনগতভাবে একজিমাপ্রবণ শিশুরা যদি কুকুরের সাহচর্যে বেড়ে ওঠে, তাদের ওই রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

তবে যাদের ইতিমধ্যে একজিমা আছে, তাদের ক্ষেত্রে নতুন করে কুকুর পোষা বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।

প্রাণী ও মাইক্রোবায়োমের সম্পর্ক

গবেষকরা মনে করেন, প্রাণীর দেহে থাকা মাইক্রোব আমাদের ত্বক ও অন্ত্রে এসে সাময়িকভাবে বসতি গড়ে। এটি আমাদের মাইক্রোবায়োম সমৃদ্ধ করে এবং রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে সক্রিয় রাখে।

উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিয়া সাফদার এমন এক পরীক্ষা চালানোর কথা ভাবছেন যেখানে পোষা প্রাণী ও তাদের মালিকের অন্ত্রের মাইক্রোব তুলনা করে দেখা হবে—একই প্রজাতির উপকারী ব্যাকটেরিয়া উভয়ের মধ্যে স্থানান্তর হয় কি না।

অন্যদিকে অধ্যাপক গিলবার্ট মনে করেন, প্রাণীর ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে স্থায়ীভাবে থাকে না, তবে তা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে “উদ্দীপিত” করতে সাহায্য করে।

প্রাচীন মাইক্রোব ও মানব স্বাস্থ্য

আয়ারল্যান্ডের অধ্যাপক ফার্গুস শানাহান দেখিয়েছেন, প্রান্তিক আইরিশ ট্র্যাভেলারস সম্প্রদায় ও আফ্রিকার কিছু উপজাতির মাইক্রোবায়োম আধুনিক সমাজের তুলনায় অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ।

তারা প্রাণীদের কাছাকাছি থাকায় তাদের ইমিউন সিস্টেমও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী, এবং অটোইমিউন রোগের হার খুবই কম।

উপসংহার

গবেষকরা বলছেন, প্রাণীর সাহচর্য শুধু মানসিক প্রশান্তিই নয়, শারীরিক সুস্থতারও চাবিকাঠি হতে পারে।

পোষা প্রাণীর মাধ্যমে আমাদের শরীর আরও বেশি মাইক্রোবের সংস্পর্শে আসে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

তবে যাদের অ্যালার্জি বা একজিমা ইতিমধ্যে আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া নতুন প্রাণী পোষা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।



No comments

Powered by Blogger.