রাজধানীর বাসাবাড়িতে সাপের উপদ্রব: সাড়ে তিন মাসে উদ্ধার ৩২১টি
রাজধানীর কোন এলাকাগুলো বেশি ঝুঁকিতে
ঢাকার উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বনশ্রী, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, বছিলা ও নিকেতন এলাকায় বেশি সাপ উদ্ধার হয়েছে বলে জানান আদনান আজাদ। এ ছাড়া মিরপুর, কাফরুল ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতেও সাপ দেখা গেছে।সংস্থার সদস্যরা বলছেন, শুধু পুরোনো ভবন নয়, বরং নতুন নির্মিত আবাসিক ফ্ল্যাটেও সাপ ঢুকে পড়ছে। এটি এখন নগরবাসীর জন্য এক নতুন ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
সাম্প্রতিক উদ্ধার অভিযানের বিবরণ
অ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে বনশ্রীর একটি ফ্যাক্টরি থেকে বিশাল আকারের গোখরা উদ্ধার করা হয়। জুন মাসে মোহাম্মদপুরের একটি বহুতল ভবনের নবম তলা থেকে একসঙ্গে তিনটি সাপ উদ্ধার করা হয়। একই মাসে উত্তরার একটি পঞ্চম তলা ফ্ল্যাট থেকে আরেকটি গোখরা উদ্ধার করা হয়। আগস্টে কাফরুল ও বছিলা এলাকার দুটি ভবন থেকে বিষধর সাপ উদ্ধার করা হয়। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে নিকেতনের একটি বিলাসবহুল আবাসিক ভবন থেকে প্রাণঘাতী গোখরা উদ্ধার করা হয়। অক্টোবরের শুরুতে বনশ্রীর একটি বাসা থেকে বিশাল সাইজের গোখরা উদ্ধার করা হয়। সংস্থার সদস্যরা জানান, এসব সাপ উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়, যাতে মানুষ ও প্রাণী উভয়ের নিরাপত্তা বজায় থাকে।
সাপ কেন ঢুকছে শহরের ঘরে
আদনান আজাদ বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী উদ্ধার হওয়া সাপগুলোর বেশিরভাগই পদ্মগোখরা। এরা পানিপ্রেমী প্রাণী। আগে আফতাবনগর, বনশ্রী, বছিলা, এমনকি টিভি ভবনের আশপাশেও বড় জলাশয় ছিল। এখন সেগুলো ভরাট হয়ে আবাসন প্রকল্প তৈরি হয়েছে। জলাশয় কমে যাওয়ায় সাপগুলো আশ্রয়ের সন্ধানে শুষ্ক স্থানে চলে আসছে। বৃষ্টির সময় ড্রেন ও গর্তে পানি জমে গেলে তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে।”তিনি আরও বলেন, “মানুষের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খাবারের কারণে ইঁদুরের বংশবিস্তার ঘটছে। ইঁদুরই আবার সাপকে আকৃষ্ট করে। ইঁদুর ধরতে এসে সাপ গলিতে ঢুকে পড়ে, পরে ঘরের ফাটল, ড্রেন বা বাথরুমের পথে ঢুকে যায়। এখন এভাবেই নগরজীবনে সাপের উপস্থিতি বেড়ে যাচ্ছে।”
নগরবাসীর আতঙ্ক ও সচেতনতার ঘাটতি
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাসাবাড়িতে সাপ দেখার নানা পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। তবে আদনান আজাদ জানিয়েছেন, “আমরা সচেতনতার জন্য কাজ করছিআতঙ্ক তৈরির জন্য নয়। তাই ইচ্ছে করেও অনেক উদ্ধার ভিডিও ফেসবুকে দিই না। এতে অযথা ভয় ছড়াতে পারে।” তিনি বলেন, “অনেক সময় মানুষ না জেনে বিষহীন সাপকেও মেরে ফেলে। অথচ বেশির ভাগ সাপই ইঁদুর খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।”
অক্টোবরে বাড়বে সাপের সংখ্যা
আদনান আজাদের মতে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় পদ্মগোখরার ডিম পাড়ার মৌসুম। এ সময় মাটির গর্ত, ড্রেন বা ফাঁকা জায়গায় তারা ডিম পাড়ে। ফলে এই সময় সাপের সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। তিনি বলেন, “আমরা শুধু সাড়ে তিন মাসে ৩২১টি সাপ উদ্ধার করেছি, যার মধ্যে বাচ্চাও ছিল। ডিম ফুটলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। তবে আমরা সর্বাত্মকভাবে উদ্ধার ও সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।”
সতর্কতা ও করণীয়
- বাসার আশপাশে ময়লা-আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলে রাখবেন না
- বাথরুম ও রান্নাঘরের ড্রেন ঢেকে রাখুন
- বাড়ির বাগান বা গ্যারেজে পানি জমে থাকতে দেবেন না
- সাপ দেখলে নিজে কিছু না করে বিশেষজ্ঞ বা সাপ উদ্ধার টিমকে খবর দিন
No comments