Adsterra

লোড হচ্ছে...

নবীজির জন্মের সময় আরবের ধর্মীয় অবস্থা

নবীজির জন্মের সময় আরবের ধর্মীয় অবস্থা,ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh

মানবজাতির সঠিক পথপ্রদর্শন ও হেদায়েতের জন্য আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে অসংখ্যা নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। তারা সবাই সততা ও আদর্শে ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ ও মহামানব। নবী ও রাসুল আগমনের এই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ দুনিয়াতে প্রেরিত হন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার আগমনটা ছিল খ্রিস্টাব্দ ৫৭১ সালের দিকে। অর্থাৎ যে বছর আবরাহা হাতি নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য মক্কা শরিফ আক্রমণ করেছিল।

ঐতিহাসিকদের মতে, এটি ছিল খ্রিস্টাব্দ ৫৭১ সালের ২০ এপ্রিলের ঘটনা। তখন পৃথিবী এতটা শান্ত ও সুশোভিত ছিল না, অসভ্য কোলাহলে জর্জরিত ছিল গোটা বিশ্ব। মানবজাতি আত্মধ্বংসের শেষ সীমান্তে পৌঁছেছিল এবং নিজেদের অপকর্মের কারণে টিকে থাকার সব অধিকার হারিয়েছিল। নীতি-নৈতিকতার কোনো তোয়াক্কা ছিল না, উন্মত্ত ও হিংস্র পশুর মতো আচরণ ছিল তাদের মাঝে। ঠিক তখনই কল্যাণ ও রমহতের বার্তা নিয়ে এ ধরায় আগমন করেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

রাসুলুল্লাহ (সা.) জন্মকালীন আরবের ধর্মীয় অবস্থা বেশ নাজুক ছিল। পৌত্তলিকতা, অশ্লীলতা, শিরক, বিদআত ও বহুত্ববাদের ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল গোটা সমাজ। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো।

শিরক : শিরক অর্থ অংশীদার স্থাপন করা ইমান কিংবা ইবাদতে। যারা আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে তাদের মুশরিক বলা হয়। এটা তাওহিদের বিপরীত। তৎকালীন আরবের লোকেরা পুরোপুরি আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করত না, তাদের অধিকাংশই আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করত। কিন্তু ইবাদত ও আমলে তার সঙ্গে অন্যকেও শরিক করত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন, তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ! তাহলে তারা দিকভ্রান্ত হয়ে কোন দিকে ফিরে যাচ্ছে?’ (সুরা আনকাবুত ৬১) এ ছাড়াও তারা বিশ্বাস করত, আল্লাহতায়ালাই আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে জমিনকে সতেজ করেন এবং মৃতকে করেন জীবিত। তারপরও তারা শিরক থেকে বিরত থাকত না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, কে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর তা দ্বারা ভূমিকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করেছেন, তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ! বলো, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না।’ (সুরা আনকাবুত ৬৩) আরবের মুশরিকদের বিভিন্ন গোত্র বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করত। তারা গাছ, পাথর ও মাটি দিয়ে মানুষ বা প্রাণ

ভ্রান্ত বিশ্বাস : আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় বসবাস করত। তারা মূল তাওহিদ থেকে বিচ্যুত হয়ে নানা ভ্রান্ত বিশ্বাস গ্রহণ করেছিল। ইহুদিরা উযাইর (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র দাবি করেছিল এবং খ্রিস্টানরা ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইহুদিরা বলল, উযাইর আল্লাহর পুত্র। আর খ্রিস্টানরা বলল, ঈসা আল্লাহর পুত্র। এটি তাদের মুখের কথা মাত্র। তারা তাদের আগে যারা কুফর করেছিল তাদের কথার অনুকরণ করছে। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন! তারা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে?’ (সুরা তওবা ৩০) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বলল, আল্লাহ তিনজনের একজন, তারা অবশ্যই কাফের হয়েছে। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। যদি তারা যা বলে তা থেকে বিরত না হয়, তবে তাদের মধ্যকার কাফেরদের কঠিন শাস্তি স্পর্শ করবে।’ (সুরা মায়েদা ৭৩)

হানিফ সম্প্রদায় : হানিফ অর্থ একনিষ্ঠ। পবিত্র কোরআনে কাবা নির্মাতা ইব্রাহিম (আ.)-কে হানিফ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাবাঘর, সাফা ও মারওয়া পাহাড়, জমজম কূপ ইত্যাদির কারণে পূর্ব থেকেই আরবের লোকেরা ধর্মীয় মূল্যবোধে উজ্জীবিত ছিল। তবে দীর্ঘদিন এ অঞ্চলে নবী ও রাসুলের আগমন না হওয়ায় অধিকাংশের মধ্যে একেশ্বরবাদের পরিবর্তে বহু ইশ্বরের পূজা তথা শিরক ও নানা কুসংস্কার প্রবেশ করে। সেখানে বসবাসরত ইহুদি, খ্রিস্টান এবং সাবেয়িরা ছাড়াও কিছু সংখ্যক লোক কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করত। সেই ঘোর অন্ধকার ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে যাদের শিরক, মূর্তিপূজা, রুসম-রেওয়াজ কোনো কিছুই স্পর্শ করতে পারেনি। তারা ‘দ্বীনে হানিফ’ তথা ইব্রাহিম (আ.)-এর দ্বীনের ওপর অটল ও অবিচল ছিল। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসলিম হোক বা ইহুদি, খ্রিস্টান হোক বা সাবেয়ি, যে কেউ আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের প্রতি ইমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তারা আল্লাহর নিকট নিজ প্রতিদানের উপযুক্ত হবে এবং তাদের কোনো ভয় থাকবে না। আর তারা কোনো দুঃখেও ভুগবে না।’ (সুরা বাকারা ৬২)

No comments

Powered by Blogger.