শান্তিপূর্ণ ভোট, গণনায় উত্তাপ
শীর্ষ তিন পদে ছাত্রশিবির বড় জয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ছিল উৎসবের আমেজ। শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে এসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন। দুই কেন্দ্রে দুটি ব্যালটে আগে থেকে পূরণ করে রাখা– এ ছাড়া আর কোনো শক্ত অভিযোগ ছিল না সারাদিন। তবে প্রার্থীদের মধ্যে কথার লড়াই ছিল। পাল্টাপাল্টি অভিযোগও ছিল কিছু। কিন্তু প্রতিপক্ষকে তেড়ে-ফুঁড়ে যাওয়ার ঘটনা নেই, হাতাহাতি নেই। ছিল ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি। কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রে ছিল স্বতঃস্ফূর্ততা। তাদের ভোটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদে জয়ের পথে রয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।
গতকাল রাত ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ে সহসভাপতি (ভিপি) পদে শিবিরের আবু সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দিন খান জগন্নাথ বাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশে হলে জয়ী হন। অন্যান্য প্রার্থীর সঙ্গে বড় অঙ্কের ভোট ব্যবধানের কারণে তাদের জয় প্রায় নিশ্চিত। প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের ডাকসুতে জয় পেল শিবির।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে ফল প্রত্যাখ্যান করেন রাত আড়াইটার দিকে। তবে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের রায়কে সম্মান জানান।
আরও পড়ুন ডাকসুতে শিবির প্যানেলের বাইরে জয়ী হলেন যারা
তবে দিনের চিত্র ছিল ভিন্ন। চিরাচরিত ভাষায় উৎসবমুখর বলা যায় গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছেন। রেকর্ড ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। যদিও সন্ধ্যার পর গণনা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় ক্যাম্পাসে। ছাত্রদলের পক্ষে বিএনপির নেতাকর্মী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে অবস্থান নেন। উত্তেজনা কমাতে সরকারের উপদেষ্টারা দুই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। দুই দলই আশ্বস্ত করে, সংঘর্ষে জড়াবে না।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চে ডাকসুর নির্বাচন হয়। সেবার ভিপি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাদে বাকি সব পদে জয় পেয়েছিল ছাত্রলীগ। ওই নির্বাচনের প্রচারে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। গুলি এবং আগের রাতে ভোট দেওয়াসহ নানা অনিয়ম আলোচনায় আসে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবেশে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনের প্রচারে সামাজিক মাধ্যমে ‘সাইবার বুলিং’ হলেও হামলা, মারধর, ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি একটিও। ভোটের দিনও একই চিত্র অব্যাহত ছিল। উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও অভিযোগে সীমাবদ্ধ ছিল সবকিছু। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই জীবনে প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পান এবার। তারা দল বেঁধে ছবি তুলে, হৈ-হুল্লোড় করে তা উদযাপনও করেন।
ভোট দিয়ে উচ্ছ্বাস
সকাল ৮টায় ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়। সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই ছিল দীর্ঘ সারি। অনাবাসিক ভোটারদেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল। সকাল ৮টার দিকে কার্জন হলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর লাইন দেখা যায়। সকাল ১০টা গড়াতে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দোয়েল চত্বরে শিক্ষার্থীরা একের পর এক লাল বাস থেকে নামতে থাকেন। দল বেঁধে কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী শাকিল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করেছে– এমন প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছি। সে অনুযায়ী ভোট দিয়েছি।’ পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সামিনা ইসলাম বলেন, ‘দল আর প্যানেল মুখ্য নয়। যারা অতীতে পাশে ছিল, তাদের তালিকা ধরে ভোট দিয়েছি।’
টিএসসি কেন্দ্রে ভোট দেন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে অন্তত দেড়শ মিটার লম্বা লাইন হয়ে যায়।
ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দিলেন ফারুক
সকালে উদয়ন স্কুল কেন্দ্রে ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ফারুক হাওলাদার। পরে এটিকে ‘চমৎকার অভিজ্ঞতা’ বর্ণনা করেন সূর্য সেন হলের এ ছাত্র। ফারুক বলেন, ‘অনেক খুশি। ব্রেইল পদ্ধতিতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছি। চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনেও যেন ব্রেইল পদ্ধতিতে আমাদের ভোট নেওয়া হয়।’
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
সকাল ৯টার দিকে ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান টিএসসি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করলে প্রথম বিতর্কের সূত্রপাত। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে প্রার্থী কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন। আবিদুল ইসলাম জানান, তিনি অনুমতি নিয়েই কেন্দ্রে গেছেন।
সন্ধ্যায় ভোট গণনার সময় শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে প্রবেশ করলে তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়।
ভোট শেষে ছাত্রদল সংবাদ সম্মেলনে কারচুপির অভিযোগ করে আবিদ জানান, ফলাফল কারচুপির চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের পোলিং এজেন্ট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের প্যানেল নম্বর দিতে গিয়ে বাধায় পড়তে হয়েছে। তবে তিনি কোন কোন কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটেছে তা স্পষ্ট করেননি।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অভিযোগ, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রে তাদের এজেন্টকে বের করে দিয়েছে ছাত্রদল।
কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন আরেক ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা, বাগছাস সমর্থিত প্যানেল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারও। কোথায় কীভাবে কারচুপি হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তারা। উমামার অভিযোগ, তাঁর এক কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টকে আরেক কেন্দ্রে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে সাদিক কায়েমও কারচুপির অভিযোগ তোলেন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে। জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের দাবি, বিএনপিপন্থি কর্মচারীরা সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করেছে। তবে ফলাফল যাই হোক, তা মেনে নেওয়ার কথা জানায় ছাত্রশিবির।
ব্যালট বিতর্ক, বিতণ্ডা
শিক্ষার্থীরা ভোটের পরিবেশে নিয়ে সন্তোষ জানালেও প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন ও কারচুপির অভিযোগ তোলেন। সকালে প্রথমে শিবিরের প্রার্থীরা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ভোটারদের লিফলেট ও স্লিপ বিতরণের অভিযোগ তোলে। ছাত্রদল অভিযোগ অস্বীকার করে। দুপুরের পর থেকেই মূলত এ দুই প্যানেলের প্রার্থীরা একে অপরের প্রতি নানা অভিযোগ আনতে থাকেন। এমনকি তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ছাত্রদলের প্রার্থীর নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ব্যালট দেওয়া হয় কার্জন হলের দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত অমর একুশে হলের ভোটকেন্দ্রে। এ ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পোলিং অফিসার জিয়াউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, একজন শিক্ষার্থীকে ভুলবশত দুটি ব্যালট পেপার দেওয়া হয়েছিল। তিনি একটিতে ভোট দিয়ে অন্যটিও পূরণ করেন এবং তা ব্যালট বাক্সে না ফেলে ফেরত দেন। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন বিষয়টি নিষ্পত্তি করে।
টিএসসি কেন্দ্রেও এ ধরনের একটা অভিযোগ আসে। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদপ্রার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তাঁর বান্ধবী ব্যালট হাতে পেয়ে দেখতে পান তাতে আগেই শিবিরের প্রার্থীদের ভোট দেওয়া। যদিও শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা সেই ভোটারের নাম পরিচয় প্রকাশ করেননি। সেই ভোটারও নিজে অভিযোগ জানাননি।
শ্রেষ্ঠার অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. নাসরিন সুলতানা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সব ব্যালট পরীক্ষা করেছি। কোথাও এমন সমস্যা পাইনি। অভিযোগকারী ব্যালট নিয়ে গোপন বুথে যান। তখন কিছুই বলেননি। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে বলেন, ব্যালটে ভোট দেওয়া। এমন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। তবু অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে আরেকটি ব্যালট দেওয়া হয়েছে।
তবে ঘটনার উদাহরণ দিয়ে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেন ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট সমর্থিত ভিপি প্রার্থী তাহমিনা আক্তার।
ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম বলেন, টিএসসি কেন্দ্রে শিবিরের প্রার্থীদের ভোট দেওয়া ব্যালটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। শিবিরের এস এম ফরহাদ বলেন, ছাত্রদল বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি।
কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার তোপের মুখে পড়েন ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ। শেহরীন আমিনের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান তিনি।
বিকেলে টিএসসি কেন্দ্রে প্রার্থীদের প্রবেশ সীমিত করা হয়। এ সময়ে সাদিক কায়েম প্রবেশ করলেও বাধা দেওয়া হয়নি। এতে সেখানে হট্টগোল হয়। এরপর স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ছাত্র পরিবহন সম্পাদক রাফিজ খান প্রবেশ করতে চাইলে বাধার মুখে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এসে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া, রাফিজ খানসহ অন্যান্য প্রার্থীর তোপের মুখে পড়েন সহকারী প্রক্টর এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন ছাত্র অধিকার পরিষদ প্যানেলের ভিপি বিন ইয়ামিন মোল্লাও। শিবির নিজেদের প্রার্থীদের পদ ও ব্যালট নম্বরসহ একটি তালিকা দেয় ভোটারদের। এ নিয়ে আপত্তি তোলেন উমামা। ছাত্রদলের আবিদ অভিযোগ করেন, তাদের স্লিপ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া না হলেও, শিবিরের তালিকা নিতে দেওয়া হচ্ছে।
কারচুপি ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিকেলে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে অভিযোগ দেয় ছাত্রদল। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ অভিযোগ করে।
ছাত্রদল তিনটি অভিযোগ করে। এগুলো হলো– আটটি প্রবেশপথে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর ব্যাপক উপস্থিতি, প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা জামায়াতসংশ্লিষ্ট ও নির্বাচনে কারচুপি।
অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, দিনভর গণমাধ্যমের সদস্যরা ছিলেন। তারা বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রবেশ করে পরিস্থিতি দেখেছেন। কোথাও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। ভোট গণনার চিত্র বাইরে দেখানো হবে। সুতরাং নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।
নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের। রাতে টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে এবং ছাত্রদল বাইরে থেকে ‘মেকানিজম’ করেছে। আবদুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য নয়; বরং এটি স্পষ্টত জামায়াত-বিএনপি, ছাত্রদল-শিবিরের মধ্যে হিসাব-নিকাশ ও ক্ষমতার ভাগাভাগির নির্বাচন হচ্ছে।
ত্রুটি দেখলেও নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলছে না শিক্ষক নেটওয়ার্ক
ভোট গ্রহণে ছোটখাটো কিছু অসংগতি এবং ব্যবস্থাপনাগত ভুলত্রুটি থাকলেও ‘গ্রহণযোগ্য না’– এমন মনে হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের। গতকাল ভোট পর্যবেক্ষণ করার পর সন্ধ্যায় সিনেট ভবনে ব্রিফিংয়ে এ বক্তব্য এসেছে প্ল্যাটফর্মটি থেকে। দিনভর পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংগঠক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে। প্রচুর তথ্যের গ্যাপ রয়ে গেছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে একটি সিদ্ধান্ত পাইনি। যার কারণে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের যেটা মনে হয়েছে– আমরা ছোটখাটো যা দেখেছি তা হলো অসংগতি বা ব্যবস্থাপনাগত ভুল। এ বাদে আমরা মনে করিনি যে, বড় কোনো ধরনের অসংগতি ছিল এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না– এটি আমাদের কখনও মনে হয়নি।
সব পদে ভোট দেননি অনেকে
ডাকসু ও হল সংসদে মোট ছয়টি ব্যালট পেপারে ভোট দেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যালট ডাকসুর; একটি হল সংসদের। ডাকসুর ব্যালটে ২৮ এবং হল সংসদের ব্যালটে ১৩ জন করে মোট ৪১ জনকে ভোট দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ভোট দিতে ১০ মিনিট করে সময় পান।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাকে ভোট দেবেন, তা আগেই ঠিক করে আসেন। ফলে ভোট দিতে পাঁচ-ছয় মিনিটের বেশি লাগেনি। যারা মনস্থির করতে পারেননি, তাদের ১০ মিনিটের বেশি লেগেছে। আবার অনেকে কয়েকটি পদে ভোট দেননি। বিশেষ করে ডাকসুর সব সদস্যপদে ভোট দেননি অনেকে। কারণ হিসেবে ভোটাররা বলেছেন, প্রার্থীদের অনেককে তারা চেনেন না।
ফলাফলে সময় লাগার কারণ জানালেন প্রধান রিটার্নিং অফিসার
ভোটের ফলাফল গণনায় দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ব্যালটে পাঁচটি পাতা। এগুলো মেশিনে দেওয়ার জন্য প্রথমে আলাদা করতে হচ্ছে। একটি বাক্স খোলার সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করার কাজ করতে হচ্ছে। এ জন্য সময় লাগছে।
আজ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা আজ বুধবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। গতকাল রাতে জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
No comments