Adsterra

লোড হচ্ছে...

যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে এই শাবানা মাহমুদ

যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে এই শাবানা মাহমুদ,ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh
 

যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন শাবানা মাহমুদ। তিনি দেশটির অভিবাসনসংক্রান্ত নীতিমালা, শরণার্থী, পুলিশ এবং জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করবেন। যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন জনমত জরিপে যখন ডানপন্থী রিফর্ম পার্টির ক্রমাগত উত্থান হচ্ছে, তখনই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্বে এমন পরিবর্তন আনা হয়।

এর আগে যুক্তরাজ্যের আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শাবানা মাহমুদ। উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার পদত্যাগ করার পর গত শুক্রবার যুক্তরাজ্য সরকারের একটি বড় রদবদলের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শাবানা। এটি যুক্তরাজ্যের শীর্ষ চার রাষ্ট্রীয় কার্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের একটি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কোনো মুসলিম নারীর দায়িত্ব পাওয়ার ঘটনা দেশটিতে এটিই প্রথম।

যুক্তরাজ্যের শীর্ষ চার রাষ্ট্রীয় কার্যালয় হচ্ছে — প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়।

স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাবানা মাহমুদের জন্ম বার্মিংহামে। তাঁর মা-বাবা দুজনেরই বাড়ি পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। শাবানা মাহমুদ ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। ভবিষ্যতেও তা বজায় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০১০ সালে পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার পর থেকে শাবানা যা যা করেছেন, সেগুলোর তালিকা নিজের ওয়েবসাইটে রেখে দিয়েছেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তিনি এ ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করে থাকেন।

২০১০ সালে গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলা জাহাজে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়ে দেওয়া একটি প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিলেন শাবানা। ওই হামলায় ১০ জন নিহত হন। প্রস্তাবটিতে গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ দ্রুত শেষ করার দাবি জানানো হয়।

শাবানা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ইসরায়েলের হাতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি। অবৈধ ইসরায়েলি বসতিতে ব্যবসা পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর নাম প্রকাশ করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শাবানা।

২০১০ সালে গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলা জাহাজে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়ে দেওয়া একটি প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিলেন শাবানা। ওই হামলায় ১০ জন নিহত হন। প্রস্তাবটিতে গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ দ্রুত শেষ করার দাবি জানানো হয়।

২০১৪ সালে শাবানা সেন্সবারি সুপারমার্কেট চেইনের একটি শাখার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা পণ্যের বিক্রি বন্ধ করতে সুপারমার্কেটটির কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

ওই সময় যুক্তরাজ্যের ইহুদিদের সংগঠন জিউয়িশ লিডারশিপ কাউন্সিল শাবানার সমালোচনা করেছিল। তারা বলেছিল, শাবানা জনগণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা উসকে দিচ্ছেন। এ বিশৃঙ্খলাকে কেন্দ্র করে একটি সুপারমার্কেট বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার থাকা মানুষেরা শাবানার কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন তিনি। শাবানা লেবার পার্টির নেতৃত্বের পক্ষে অবস্থান নেন। যদিও দলের ভেতরের অনেকেই ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।

এর ফলে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বার্মিংহাম লেডিউড আসনে শাবানা মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখমেদ ইয়াকুব। তিনি মূলত গাজার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রচার চালান।

নির্বাচনে শাবানার সঙ্গে ভোটের ব্যবধান মাত্র ৩ হাজার ৪২১-এ নামিয়ে আনতে সক্ষম হন ইয়াকুব। ২০১৯ সালে ভোটের ব্যবধান ছিল ২৮ হাজার ৫৮২।

এমপি ওয়ার ক্রাইমস’ নামের একটি ওয়েবসাইটে শাবানা মাহমুদকে ‘স্পষ্টত ফিলিস্তিনবিরোধী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়েবসাইটটি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের সাম্প্রতিক অবস্থান মূল্যায়ন করে থাকে। ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, শাবানা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিঠিতে স্বাক্ষর করেননি। তিনি ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রাখার চিঠিতেও স্বাক্ষর দেননি।

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, মন্ত্রিসভার শীর্ষ ব্যক্তিদের যাঁরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকে আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শাবানাও আছেন। তবে যাঁরা ভেবেছিলেন শাবানা নিষিদ্ধ সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নিয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান বদলাবেন, তাঁরা সম্প্রতি হতাশ হয়েছেন।

অবশ্য ওয়েবসাইটে এটাও বলা হয়েছে, শাবানা মাহমুদ লেবার ফ্রেন্ডস অব প্যালেস্টাইনের সদস্য। গত বছর তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠান বর্জন, সেখান থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন।

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, মন্ত্রিসভার শীর্ষ ব্যক্তিদের যাঁরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকে আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শাবানাও আছেন। তবে যাঁরা ভেবেছিলেন শাবানা নিষিদ্ধ সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নিয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান বদলাবেন, তাঁরা সম্প্রতি হতাশ হয়েছেন।

গত রোববার শাবানা বলেন, ‘ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানো এবং নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো এক জিনিস নয়।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলছে

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু শনিবারই লন্ডনে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮৯০ জন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শাবানা এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান মার্ক রাউলির কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিতে দেখা গেছে, শনিবার বিক্ষোভ চলাকালীন বিশেষ অভিযানসংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে আছেন তাঁরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থকদের গ্রেপ্তারে তিনি (শাবানা) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমর্থন দিয়েছেন।’

প্যালেস্টাইন অ্যাকশন ইস্যুতে শাবানার অবস্থানের সঙ্গে পূর্বসূরি ইভেট কুপারের অবস্থানের মিল রয়েছে। নিজের এমন অবস্থানের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন শাবানা।

জনমত জরিপ অনুযায়ী, লেবার পার্টির সমর্থন ক্রমাগত কমছে। তাই শাবানা মাহমুদকে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সতর্কভাবে ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। ২০২৯ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে ওই নির্বাচন হওয়ার কথা।

No comments

Powered by Blogger.