সুন্নাতে নববী ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে ডান কাতে ঘুম
ঘুম মানবজীবনের এক অনিবার্য চাহিদা। দিনের ক্লান্তি ও শ্রমের পর নিদ্রার শান্ত ছায়া মানুষের শরীর ও আত্মাকে প্রশান্ত করে। কিন্তু ঘুম শুধু শারীরিক বিশ্রাম নয়, এটি সুস্থ জীবন ও সুশৃঙ্খল মানসিকতার অপরিহার্য ভিত্তি। আশ্চর্যের বিষয় হলো— আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ঘুমানোর ভঙ্গিমা সম্পর্কেও এমন সুস্পষ্ট শিক্ষা দিয়েছেন, যা শুধু আধ্যাত্মিক উপকারই নয়, বরং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও বহুবিধ কল্যাণ বয়ে আনে।
হাদিসের নির্দেশনা :
রাসুলুল্লাহ (সা.) বারা ইবনে আযিব (রা.)-কে বলেছিলেন—
إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وَضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلٰى شِقِّكَ الأَيْمَنِ
‘যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন নামাজের ন্যায় অজু করবে এবং ডান কাত হয়ে শোবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩১১) এই হাদিস প্রমাণ করে ঘুমের শুরু ডান কাতে হওয়া সুন্নাত এবং এটি মুমিনের জন্য বরকতময় একটি অভ্যাস।
আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে ডান কাতে ঘুম :
১. হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ কমায় - হৃৎপিণ্ড শরীরের বাঁ দিকে অবস্থিত। ডান দিকে শোওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিকভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, এতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমে স্বস্তি আসে।বিশেষ করে হার্টের সমস্যা আছে এমন রোগীদের জন্য ডান কাতে ঘুমানো আরামদায়ক হতে পারে।
২. লিভারের ওপর চাপ হ্রাস - লিভার শরীরের ডান পাশে থাকে। ডান দিকে শুলে লিভার নিচের দিকে থাকে এবং তার ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। এতে হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং দেহের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজ হয়।
৩. অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমায় - বাম দিকে শুলে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরে উঠে এসে বুক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। অথচ ডান কাতে শোওয়া অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও হার্টবার্নের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৪. লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের কার্যকারিতা - ঘুমের সময় শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম। কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ডান কাতে শোয়া লিম্ফ প্রবাহকে সহজ করে এবং দেহ থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
৫. গর্ভবতী নারীদের জন্য ব্যতিক্রম - যদিও ডান কাতে শোওয়া অধিকাংশ মানুষের জন্য উপকারী, তবে গর্ভবতী নারীদের জন্য বাঁ কাতে শোওয়া অধিকতর সুপারিশ করা হয়।এতে জরায়ুতে রক্তপ্রবাহ ভালো থাকে এবং শিশুর বিকাশে সহায়ক হয়।
৬. শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি - যাদের স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নিদ্রায় শ্বাসকষ্ট হয়, তাদের জন্য ডান কাতে শোয়া অনেক সময় উপকারী হয়। এটি শ্বাসনালি খোলা রাখতে সাহায্য করে এবং নাক ডাকার প্রবণতা কমাতে পারে।
নববী সুন্নাত কেবল আধ্যাত্মিক জীবনকে নয়, বরং শারীরিক স্বাস্থ্যকেও পরিপূর্ণতা দান করে। ডান কাতে ঘুমানো তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।একদিকে এটি রাসুল (মা.)-এর নির্দেশ মানার কারণে সওয়াবের কাজ, অন্যদিকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এটি হৃদযন্ত্র, হজম, শ্বাসপ্রশ্বাস ও দেহের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী।অতএব, ডান কাতে ঘুমানো মানে হলো দুনিয়ায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং আখিরাতে সওয়াব অর্জনের এক অপূর্ব সমন্বয়।
No comments