Adsterra

লোড হচ্ছে...

গালমন্দ হচ্ছে ঈমানবিরোধী কুপ্রবৃত্তির প্রভাব


গালমন্দ হচ্ছে ঈমানবিরোধী কুপ্রবৃত্তির প্রভাব , ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News

অন্যের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ার অন্যতম মাধ্যম গালি। গালি হলো কাউকে নিন্দা, অপমান বা অভিশাপ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত শব্দগুচ্ছ। ভাষার এই অংশকে মানুষ অকথ্য ভাষা বলে চিহ্নিত করে থাকে। গালি দেওয়া ইসলাম ও সামাজিক দিক থেকে নিন্দনীয় হলেও এর চর্চা সমাজে এতটাই ব্যাপক যে কোনো কোনো সাহিত্যিক তাঁদের গল্প বা কবিতায় এসব ‘অকথ্য ভাষা’খ্যাত শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে রসবোধ আনার চেষ্টা করেছেন।কখনো আবার কোনো অসংগতিকে নিন্দা করার চেষ্টা করেছেন। কখনো আবার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য রাজনৈতিক মিছিলেও গালির ব্যবহার দেখা যায়।গালি হলো দুর্বল লোকের হাতিয়ার। কারো ওপর ক্ষিপ্ত হলে একমাত্র এই অস্ত্র ব্যবহার করেই কিছুটা মানসিক শান্তি অনুভব করার চেষ্টা করে দুর্বল চিত্তের মানুষরা।গালিপ্রবণতা শুধু দুর্বল চিত্তের মানুষের হাতিয়ার নয়, বরং দুর্বল ঈমানের মানুষেরও হাতিয়ার। তারা এর মাধ্যমে শক্তিশালী হওয়ার ভান করে। এ জন্যই হয়তো নবীজি (সা.) বলেছেন, (প্রকৃত) মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২৭)

শুধু ইসলাম ধর্ম নয়, অন্য ধর্মেও গালমন্দকে ভালো চোখে দেখা হয় না।অমুসলিম দার্শনিকরাও গালমন্দের বিরোধিতা করেছেন। যেমন—মার্কিন লেখক, দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক এরিক হফার বলেন, Rudeness is the weak man’s imitation of strength. দুর্বল চিত্তের মানুষেরা শক্তিশালী হওয়ার ভান করার জন্য রূঢ় আচরণ করে। গালমন্দ করে।গালমন্দ করা যদি কারো অভ্যাসে পরিণত হয়, স্বাভাবিক কথাবার্তায় যদি এ ধরনের শব্দের প্রয়োগ অধিক হারে হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে, তার ঈমান হুমকির মুখে আছে। তার অন্তরে নিফাক বাসা বাঁধছে।

কারণ মহানবী (সা.)-এটাকে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোনো একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। ১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে, ২. কথা বললে মিথ্যা বলে, ৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে, এবং ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালমন্দ করে। (বুখারি, হাদিস : ৩৪)

গালমন্দের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য গালমন্দ হলো মা-বাবা তুলে গালি দেওয়া। মহানবী (সা.) মা-বাবা তুলে গালাগাল দেওয়াকে জঘন্যতম কবিরা গুনাহ বলে আখ্যা দিয়েছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯০২)

এবং এই কাজকে ঈমানবিরোধী কাজ বলে সতর্ক করেছেন। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিস্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৭)

অন্য হাদিসে পাওয়া যায়, মহানবী (সা.) আয়েশা (রা.)-কে বলেছেন, হে আয়েশা! আল্লাহ অশ্লীল কথক ও অশ্লীলতার বাহককে পছন্দ করেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯২)

তাই মুমিনের উচিত প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে গালিকে ব্যবহার না করা। হাসির ছলেও কাউকে গালি না দেওয়া, অন্যকে আনন্দ দিতে গালি ও অশ্লীলতা সংবলিত কোনো কনটেন্ট শেয়ার করা থেকেও বিরত থাকা।কারণ অনেকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তাদের প্রতিবাদের ভাষায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্টে গালি ও অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করে। কেউ আবার খুশির চোটে গালি দিয়ে বসে। ড. বার্ন বলছেন, ‘গালি হচ্ছে এমন এক ধরনের ভাষা, যা আমরা চমকিত বা স্তম্ভিত বা উত্ফুল্ল হলে ব্যবহার করি, অথবা ব্যবহার করি মজা করার জন্য বা কারো প্রতি আক্রমণাত্মক হওয়ার জন্য।’ (বিবিসি)অথচ ইসলাম খুশির সময় শোকর করা এবং রাগের সময় ধৈর্য ধরার শিক্ষা দেয়।মহান আল্লাহ সবাইকে সব ধরনের অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।


No comments

Powered by Blogger.