ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে কেন হামলা চালাল ইসরায়েল
তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে ইসরায়েলি ড্রোন হামলার ঘটনা নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই হামলায় কারাগারের প্রহরী টাওয়ার, প্রশাসনিক বিভাগ ও আদালত কক্ষ লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
এভিন কারাগার ইরানের সবচেয়ে বিতর্কিত ও কুখ্যাত কারাগারগুলোর একটি। এখানে সাধারণত রাজনৈতিক বন্দী, পশ্চিমা দেশের নাগরিক ও দ্বৈত নাগরিকত্বধারীদের আটক রাখা হয়। মূলত এখানে আটকে রাখা বন্দীদের পশ্চিমাদের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা ও দর-কষাকষিতে ব্যবহার করে ইরান। এই কারাগারে রয়েছে বিশেষায়িত ইউনিট, যা পরিচালনা করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড।
পশ্চিমা অনেক নাগরিক বন্দী থাকার পরও ইসরায়েল কেন ওই কারাগারে হামলা চালিয়েছে, তা নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা কৌশলগত ও প্রতীকী উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইরান সরকারের নিপীড়নের প্রতীকী ঘাঁটিতে আঘাত হানার মতো। হামলার মাধ্যমে ইরানের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার ভঙ্গুরতা, বন্দীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মহলের সামনে আরও স্পষ্ট করতে চাইছে ইসরায়েল। বিশেষ করে, যখন জানা গেছে, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কারাগারে কোনো বোমা আশ্রয়কেন্দ্র পর্যন্ত নেই।
বর্তমানে প্রায় ২০ জন ইউরোপীয় নাগরিক এভিনে বন্দী আছেন। তাঁদের অনেকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেও তাঁদের পরিবার ও পশ্চিমা দেশগুলো তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফরাসি নাগরিক সেসিল কোহলার ও তাঁর সঙ্গী জ্যাক প্যারিস। ২০২২ সাল থেকে তাঁরা আটক আছেন।
সেসিল কোহলারের বোন নোয়েমি কোহলার ইসরায়েলের হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই হামলা দায়িত্বজ্ঞানহীন। সেসিল, জ্যাক ও অন্য বন্দীরা প্রাণঘাতী ঝুঁকিতে আছেন।’
নোয়েমি ফ্রান্স সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন এই হামলার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানাতে এবং ফরাসি বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে।
কোহলার পরিবারের আইনজীবী চিরিন আরদাকানি বলেছেন, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। বন্দীদের মধ্যে দাঙ্গা, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিশোধ ও রক্তপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুই পক্ষই সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে।
এদিকে হামলার পর ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র জানিয়েছে, কারাগারের ভবনসমূহ এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল।
No comments