Adsterra

মার্কিন হামলার পরও কি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা আছে

মার্কিন হামলার পরও কি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা আছে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,

যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানের ‘বাংকার ব্লাস্টার’ হামলায় ইরানের মূল তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ওয়াশিংটন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে স্থবির করতে পারলেও সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারেনি।

গত রোববার মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময় ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান থেকে নিক্ষেপ করা ১৪টি জিবিইউ-৫৭ বাংকার ব্লাস্টার বোমা ইরানের নাতাঞ্জ, ইস্পাহান ও ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার ওপর আঘাত হানে। প্রতিটি বোমার ওজন ছিল প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড, সব মিলিয়ে ছিল প্রায় ২০০ টন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ হয়েছে। তবে পেন্টাগনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ইরানের ‘গুরুতর ক্ষতি’ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু তাদের কাছে এখনো সুরক্ষিত গুদামে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ৪০০ কেজির বেশি মজুত রয়েছে; যা পরবর্তী সময়ে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করলে প্রায় ৯টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যাবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের কাছে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত আছে, তা দিয়েও তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।

                             ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ইস্পাহানে ইউরেনিয়াম গ্যাসে রূপান্তরের জন্য থাকা ইউনিট এবং সেটিকে আবার ধাতুতে রূপান্তর করে বোমার উপযোগী করার প্ল্যান্টও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল। এগুলো তুলনামূলকভাবে সহজ লক্ষ্য হওয়ায় ধ্বংস হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে মাটির ৯০ মিটার গভীরে থাকা সেন্ট্রিফিউজ চেম্বারে ১২টি বাংকার ব্লাস্টার নিক্ষেপ করা হয়। স্যাটেলাইট চিত্রে পাহাড়ের গায়ে গর্ত দেখা গেছে। এর থেকে ধারণা করা হয়, এসব হামলায় চেম্বার ধ্বংস না হলেও তা ভেঙে ফেলতে পারে। আর নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় তুলনামূলক কম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরমাণু বিশ্লেষক এবং বর্তমানে মার্কিন গবেষণা সংস্থা মিডলবুরি ইনস্টিটিউটের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক পরিচালক ইয়ান স্টুয়ার্ট বলেন, ‘ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে আবার তা গড়ে তুলতে পারবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান সম্ভবত বিকল্প সাইটে গোপনে কিছু সেন্ট্রিফিউজ সংরক্ষণ করে রেখেছে। ফলে দেশটি চাইলে দ্রুত আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে।

২০২০ সালে মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার মধ্য দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মস্তিষ্ক’ হারালেও এই কর্মসূচি এখনো চলমান। সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ১০ জন পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন, তবে দেশটিতে রয়েছে হাজারো বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী—যাঁদের বহু বছরের অভিজ্ঞতা এই কর্মসূচি টিকিয়ে রাখতে সক্ষম।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের ফেলো দারিয়া ডলজিকোভা বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভৌত অবকাঠামো ধ্বংস করা গেলেও তাদের জ্ঞান মুছে ফেলা অসম্ভব।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের কাছে থাকা ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বর্তমানে দেশটির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কয়েকটি সেন্ট্রিফিউজের সহায়তায় এগুলোকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করলেই এগুলো থেকে অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির (এনটিপি) সদস্য। এখানে বলা আছে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় রাখা আছে, তা আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থাকে (আইএইএ) জানাতে হবে। ইরান যদি এই তথ্য গোপন রাখে কিংবা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে ইউরোপীয় দেশগুলো (ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি) ২০১৫ সালের আধা-অকার্যকর পারমাণবিক চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু করতে পারে। এর ফলে ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় জারি হতে পারে। ২০১৫ সালের এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবরে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি নতুন চুক্তি চান। কিন্তু সেটি হবে তাঁর ‘নিজের শর্তে’।

মার্কিন হামলার পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে গেছে। ইরানের কাছে এখনো যথেষ্ট পরিমাণে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এবং বিশেষজ্ঞ জ্ঞান রয়েছে, যা তাদের এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির গতিপথের ওপর।

No comments

Powered by Blogger.