Adsterra

লোড হচ্ছে...

পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কী? কীভাবে এটি করা হয়, কতক্ষণ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ

 

পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কী, কীভাবে এটি করা হয়, কতক্ষণ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla new

ইরান-ইসরাইল সংঘাতের শুরু থেকেই গণমাধ্যমের খবর এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে দুটি শব্দ ঘুরে ফিরে শোনা যাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে—পরমাণু সমৃদ্ধকরণ। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের পরেই মূলত বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। খবর বিবিসি বাংলার।

নেতানিয়াহু দাবি, ইরান বহু বছর ধরেই ইউরোনিয়ান সমৃদ্ধ করছে এবং বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি রয়েছে। এমন দাবি করার পর গত ১৩ জুন ইরানের ওপর আকস্মিকভাবে হামলাও চালিয়ে বসে তেলআবিব। জবাবে তেহরানও পালটা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে শুরু হয় সংঘাত।


১২ দিন ধরে চলা এই সংঘাতের একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে হলে ৯০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার প্রয়োজন হয়।

সেখানে ইরান এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশের মতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে বলে গত মার্চে জানায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।

ইরান দাবি করেছে, তারা কোনো পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না, বরং বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো শান্তিপূর্ণ কাজের জন্যই পরমাণু সমৃদ্ধকরণ করা হচ্ছে।

কিন্তু এই পরমাণু সমৃদ্ধকরণ আসলে কী? কীভাবে সেটি করা হয় এবং কতক্ষণ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বলে মনে করা হয়?


ইউরেনিয়াম আসলে কী ?

পারমাণবিক বোমা বানানোর ক্ষেত্রে যে উপাদানটি সবচেয়ে বেশি দরকার হয়, সেটি হলো ইউরেনিয়াম। এটি একটি ধাতব পদার্থ, যা পৃথিবীর মাটিতেই পাওয়া যায়। ইউরেনিয়ামে ভিন্ন ভিন্ন ভরের (আইসোটোপ) পরমাণু থাকে। বিজ্ঞানীরা সেগুলোকে সংক্ষেপে 'ইউ-২৩৮' এবং 'ইউ-২৩৫' নামে চিহ্নিত করে থাকেন।

প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ইউরেনিয়ামে 'ইউ-২৩৮'ই সবচেয়ে বেশি থাকে, যা প্রায় ৯৯ দশমিক তিন শতাংশ। অন্যদিকে, মাত্র শূন্য দশমিক সাত শতাংশ থাকে 'ইউ-২৩৫'।

কিন্তু শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই 'ইউ-২৩৫' আইসোটোপই সবচেয়ে কার্যকর এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তবে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামে যেহেতু এটি খুবই কম পরিমাণে পাওয়া যায়, সেজন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় এটি বাড়ানোর প্রয়োজন হয়।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এটাকেই বলা হয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বলতে মূলত 'ইউ-২৩৫' আইসোটোপের পরিমাণ বৃদ্ধি করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। কারণ এই আইসোটোপটি পারমাণবিক বিক্রিয়ায় সহজে বিভাজিত হয়, যার ফলে প্রচুর পরিমাণে শক্তি তৈরি হয়। এক্ষেত্রে খনি থেকে আকরিক ইউরেনিয়াম তুলে প্রথমে গুঁড়ো করা হয়।

পরিশোধনের পর সেটিকে 'ইয়েলো কেকে'র আকৃতি দেওয়া হয়। এরপর রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় 'ইয়েলো কেক'টিকে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইডে রূপান্তর করা হয়। এর পর ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইডকে একটি সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে ঘোরানো হয়।


                             ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

পরমাণু সমৃদ্ধকরণের প্রক্রিয়া


সেন্ট্রিফিউজ

সেন্ট্রিফিউজ একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র, যা পরমাণু সমৃদ্ধকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি দেখতে অনেকটা টিউবের মতো, যা অনেক দ্রুতগতিতে ঘুরতে সক্ষম। এই ঘূর্ণন শক্তি ব্যবহার করে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড গ্যাস থেকে ইউরেনিয়াম আইসোটোপ 'ইউ-২৩৫' কে আলাদা করা হয়।

তবে একবারে সেটি সম্ভব না। হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজ একসাথে টানা ঘোরার মাধ্যমে পরমাণু সমৃদ্ধকরণের কাজটা করে থাকে।

এক্ষেত্রে সেন্ট্রিফিউজ যত আধুনিক হবে, তত দ্রুত এবং বেশি মাত্রায় 'ইউ-২৩৫' আইসোটোপ তৈরি করা সম্ভব বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।


পারমাণবিক বোমা

মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাকে বিজ্ঞানের ভাষায় 'পরমাণু' বলা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের চারপাশের যা কিছু রয়েছে, তার সবকিছুই তৈরি হয়েছে পরমাণু দিয়ে। এক্ষেত্রে প্রতিটি পরমাণুর একটি কেন্দ্র থাকে, যাকে বলা হয় নিউক্লিয়াস। এই নিউক্লিয়াসের ভেতরে পরমাণুর শক্তি জমা থাকে, যা সাধারণ অবস্থায় বের হয় না। নিউক্লিয়াসকে ভেঙে ওই শক্তিটি বের করে আনতে বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন, যাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিশন বা পরমাণু বিভাজন।

যখন বড় কোনো পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস ভাঙা শুরু হয়, তখন সেই ফিশন বিক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি তৈরি হয়। শুধু শক্তি নয়, প্রতিটি ফিশনে আরও নিউট্রন তৈরি হয়, যা আবার পাশের পরমাণু ভেঙে ফেলে। এইভাবে শুরু হয় চেইন রিঅ্যাকশন।


১. তাপ

বিস্ফোরণের সময় উৎপন্ন হয় হাজার হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ। এর ফলে মানুষ, ঘরবাড়ি, গাড়ি—সব পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে।

২. চাপ তরঙ্গ

এই তরঙ্গ এত শক্তিশালী হয় যে বিস্ফোরণস্থল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের দালানও ভেঙে পড়ে।

৩. তেজস্ক্রিয়তা

ফিশনের সময় যে বিকিরণ তৈরি হয়, তা মানুষের শরীর ও প্রকৃতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

এতে ক্যানসার হতে পারে, শিশুদের জন্মগত সমস্যা দেখা দেয়, এবং মাটিতে অনেক বছর ধরে বিষক্রিয়া থাকে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- এই পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তিন থেকে পাঁচ শতাংশ ইউরোনিয়ান সমৃদ্ধ করা যথেষ্ঠ হলেও সেটি দিয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব নয়।

পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে হলে ৯০ শতাংশের ওপরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার প্রয়োজন হয় বলে বিবিসি বাংলাকে বলেন অধ্যাপক ইসলাম।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের তথ্যমতে, বর্তমানে ৯টি দেশের কাছে পরমাণু অস্ত্র আছে।

সেগুলো হলো- রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, পাকিস্তান, ভারত, ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়া।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরানসহ ১৯১টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করেছে, তবে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত এটি সই করেনি।

No comments

Powered by Blogger.