শীতকালে কেন বেড়ে যায় আগুনের ঘটনা?
শীত মৌসুম শুরু হলে দেশে আগুনের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় ১৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১৩টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
২৫ নভেম্বর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রায় দেড় হাজার ঘর পুড়ে যায়। বাসিন্দারা নিঃস্ব হয়ে যান। ২৬ নভেম্বর শাহবাগের বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চতুর্থ তলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে। ২৭ নভেম্বর মগবাজারের দিলু রোডের একটি আটতলা ভবন ও তেজগাঁওয়ের কারওয়ান বাজারের ঝুপড়িঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
৩০ নভেম্বর সচিবালয়ের ২০ তলা ভবনের ৯ তলায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন লাগে। ১ ডিসেম্বর বিকেলে মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লায় ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠতলায়, একই দিনে চকবাজারের রহমতগঞ্জে দুটি ভবনে পৃথক আগুন লাগে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল, সেগুনবাগিচা ও গুলিস্তানের হোটেল রমনার পাশে মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, শীতকালে অগ্নিদুর্ঘটনা বেশি ঘটে। শুষ্ক আবহাওয়া ও দাহ্য বস্তু শুকিয়ে থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসে জলকণা কম থাকায় আগুন প্রতিরোধে সহায়তা পাওয়া যায় না। শর্ট সার্কিট ও মাল্টিপ্লাগের অতিরিক্ত ব্যবহারও অগ্নিকাণ্ডের কারণ।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে আগুনের ঘটনা হয়েছে ২১,৭২৭টি। বছরের শুরুতে শীতকাল হওয়ায় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১২,২৫৯টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। ২০২৪ সালে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত আগুনের ঘটনা বেশি; জুন থেকে নভেম্বরে সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমে আসে।
২০২০ থেকে ২০২৩ সালের তিন বছরে ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ৭ মাসে আগুন লাগে ৫২,৭৫৩টি, যেখানে বাকি ৫ মাসে অগ্নিদুর্ঘটনা ২০,৫৩৪টি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, শীতকালে সব ধরনের দাহ্যবস্তু শুকিয়ে যায়, ফলে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে। চুলা জ্বালানো, মশার কয়েল, ধূমপান ও লাকড়ি জ্বালানো শীতকালে আগুনের কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। জনসাধারণকে সচেতন করতে ফায়ার সার্ভিস গণসংযোগ, মহড়া, সার্ভে ও পরিদর্শন চালায়। বড় স্থাপনায় অটোমেটিক ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম স্থাপন, প্রশিক্ষিত পাহারাদার রাখার মাধ্যমে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
শীতকালে আগুন প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো না হলে ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পায়। তাই দেশের সবাইকে অগ্নিনিরাপত্তায় সচেতন ও সাবধান থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।


No comments