‘টাইটানিক’ খ্যাত অভিনেত্রী কেট উইন্সলেটের নতুন অধ্যায়
হ্যাভেনলি ক্রিয়েচারস (১৯৯৪), সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি (১৯৯৫), হ্যামলেট (১৯৯৬), টাইটানিক (১৯৯৭), আইরিশ (২০০১), ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড (২০০৪), ইটারনাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড (২০০৪), লিটল চিলড্রেন (২০০৬), রেভল্যুশনারি রোড (২০০৮), দ্য রিডার (২০০৮)-সহ প্রতিটি সিনেমায় অভিনয়ের দ্যুতি ছড়ানো হলিউডের তারকা অভিনেত্রী কেট উইন্সলেটকে দেখা যাবে আরেক নতুন ভূমিকায়।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনের মতোই পরিপক্বতার ছাপ রেখে তিনি প্রথমবার ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নিজের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘গুডবাই জুন’ পরিচালনা করেছেন, যার চিত্রনাট্য লিখেছেন তাঁরই ছেলে জো অ্যান্ডার্স। এই মা-ছেলের সহযোগিতার মাধ্যমে নির্মিত চলচ্চিত্রটিকে ঘিরে ইতোমধ্যেই আগ্রহ তৈরি হয়েছে দর্শক, সমালোচক ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রমহলে।
কেটের ক্যারিয়ারের সিনেমা নির্মাণ এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ‘গুডবাই জুন’ একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল পারিবারিক গল্প, যা মৃত্যু, অপূর্ণতা ও পুনর্মিলনের আবেগকে কেন্দ্র করে তৈরি। অনেকের মতে, সিনেমার গল্পের ভেতর উইন্সলেটের নিজের মায়ের (যিনি ২০১৭ সালে ক্যান্সারে মারা যান) মৃত্যুর অভিজ্ঞতার ছায়া আছে; পারিবারিক অভিজ্ঞতা থেকেই জন্ম হয়েছে এই সিনেমার মূল প্রেরণা। ফলে ‘গুডবাই জুন’ শুধু একটি পারিবারিক ড্রামা নয়; বরং এক মায়ের জীবন ও তাঁর সন্তানদের সম্পর্কের গভীর অনুসন্ধান।
সিনেমার নাম ভূমিকায় টার্মিনাল ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রবীণ নারী জুনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী হেলেন মিরেন। ক্রিসমাসের ঠিক আগে, মায়ের স্বাস্থ্যের অপ্রত্যাশিত অবনতিতে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চার সন্তান ও তাদের বাবাকে একত্রিত করে এই সংকট। মায়ের শয্যার পাশে বসে তারা মুখোমুখি হয় নিজেদের অতীতের, শৈশবের স্মৃতি, ভাঙা সম্পর্ক আর জমে থাকা ক্ষোভ-অনুশোচনার। এই চার সন্তান জুলিয়া, মলি, হেলেন ও কনরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যথাক্রমে– কেট উইন্সলেট, অ্যান্ড্রিয়া রাইজবরো, টনি কোলেট ও জনি ফ্লিন। বাবা বার্নির চরিত্রে রয়েছেন টিমোথি স্পল। দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষত ও ভুল বোঝাবুঝি এই হাসপাতালের কক্ষেই খুলতে থাকে ধীরে ধীরে।
পরিবারের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে নির্মিত এই সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সবচেয়ে কাছের মানুষকেও হারিয়ে ফেলে। দূরত্বের আড়ালে জীবনের অনিশ্চয়তা এসে কীভাবে সম্পর্ককে নতুন অর্থ দেয়। বহুদিনের না-বলা কথাগুলো কীভাবে শেষ সময়ে এসে বুকে তীব্র চাপের মতো ফিরে আসে আর ভালোবাসা। যাকে আমরা কখনোই ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারি না, শেষ মুহূর্তে এসে হয়ে ওঠে একমাত্র ভাষা। হাসপাতালের একটি ঘর কীভাবে চার ভিন্ন জীবনের গল্পকে এক বিন্দুতে এনে দাঁড় করায়, সেটিই ‘গুডবাই জুন’-এর মূল মানবিক শক্তি।
কেট উইন্সলেট বহু বছর ধরেই পরিচালনায় আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু ব্যস্ত অভিনয় জীবন তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি। ‘গুডবাই জুন’-এর গল্পটি যখন ছেলে জো অ্যান্ডার্সের খসড়ায় তার সামনে আসে, তখনই তিনি বুঝতে পারেন। এটি তারই নির্মাণ করা উচিত। পরিচালক হিসেবে তিনি অত্যন্ত সংযত ভঙ্গিতে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে নিয়েছেন। শুটিং করেছেন মাত্র ৩৫ দিনের একটি নির্ধারিত সময়সীমায়। তিনি অভিনেতাদের গায়ে ছোট মাইক্রোফোন লাগিয়ে শুটিং করেছেন, যাতে ক্যামেরার কাছাকাছি স্বাভাবিক অভিনয়ের একটি ঘনিষ্ঠ পরিবেশ তৈরি হয়।
উইন্সলেটের পরিচালনায় নিজস্ব অভিনয়শৈলীর ছাপও রয়েছে। অতিরিক্ত আবেগ নয়; বরং সূক্ষ্মতা, মৃদু প্রকাশ এবং চরিত্রের গভীরতাকে প্রাধান্য দেওয়া। হেলেন মিরেনকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই সিনেমায় কেট উইন্সলেট, টনি কোলেট, অ্যান্ড্রিয়া রাইজবরো ও জনি ফ্লিন– প্রত্যেকেই নিজেদের চরিত্র বেশ ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন বলেই সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া থেকে জানা গেছে।
চলচ্চিত্রটি দুটি ধাপে মুক্তি পাচ্ছে। ২০২৫ সালের ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেক্ষাগৃহে এবং তার ঠিক পরেই, ২৪ ডিসেম্বর নেটফ্লিক্সে, ক্রিসমাসের ঠিক আগের রাতে। হলিউডের একাধিক গণমাধ্যম এটিকে বড়দিনের ছুটির সময় পরিবারকে কেন্দ্র করে একটি আবেগঘন গল্প বলছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে, যখন পরিবারের ভেতরকার দূরত্ব, মানসিক জটিলতা এবং অন্তরঙ্গতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার গল্পগুলো আরও প্রাসঙ্গিক, তখন ‘গুডবাই জুন’ দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন নির্বাচনের তপশিল কী? এতে যা যা থাকে
ঢাকাভয়েস/এই


No comments