Adsterra

লোড হচ্ছে...

ধ্বংসলীলা আর গণহত্যার সমার্থক শব্দ যেন গাজা উপত্যকা

গাজা যুদ্ধ, গাজা উপত্যকা, ইসরায়েল হামলা, ফিলিস্তিন মানবাধিকার, গাজা ধ্বংসযজ্ঞ, মানবিক সংকট, শারীরিক ও মানসিক আঘাত, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা, ইউনিসেফ গাজা,

গত দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হত্যালীলা ও ধ্বংসযজ্ঞ সেখানকার মানুষের সমাজকে এমনভাবে ছিন্নভিন্ন ও বিশৃঙ্খল করে দিয়েছে যে, শুধু বেঁচে থাকা ছাড়া মানুষ যেন কোনো স্বপ্ন দেখতেই ভুলে গেছে। বলা হচ্ছে, গাজায় ধ্বংসের পরিমাণ এতটা ব্যাপক যে, এর ফলে সেখানকার মানুষের মনে সৃষ্ট মানসিক ও শারীরিক ক্ষত গোটা একটি প্রজন্মকে বহন করে যেতে হবে। তবুও মানুষ আশায় বাঁচে। সে হিসেবে ভয়ংকর বর্তমানে গাজার বাসিন্দারা কায়দা করেই কোনোমতে বেঁচে আছেন ভবিষ্যতে দেশে শান্তি ফিরবে, সে আশায়। 

সোমবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে শারীরিক-মানসিক ক্ষতের সঙ্গে গাজাবাসীর লড়াইয়ের চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েল ও হামাসের নীতিনির্ধারকরা সোমবার মিসরের কায়রোতে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে দেশটির কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে। এটি এমন একটি অগ্রগতি, যা বহু ব্যর্থ চেষ্টার পর গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নতুন শান্তি পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তবে একটি বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়, যদি ট্রাম্পের পরিকল্পনা কাজ করে, তাহলে ফিলিস্তিনের ওই ভূখণ্ড আসলে কে শাসন করবে। অথবা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠন ও সামাজিক যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের খরচ কে বহন করবে।

গাজার মানুষ কীভাবে শারীরিক ও মানসিক আঘাতের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তা উঠে আসে হামজা সালেম নামে এক ব্যক্তির বক্তব্যে। যুদ্ধের আগে একটি গ্যাস স্টেশনের কর্মী হিসেবে কাজ করা হামজা ইসরায়েলের বোমা হামলায় দুটি পা হারিয়েছেন। এক সময় তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন গাজার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায়। পাঁচ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েসহ অন্য ছেলেরাও স্কুলে যেত। কিন্তু যুদ্ধ তাদের জীবন ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষ হলেই শুধু যুদ্ধ-পরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবনা আসে। আল্লাহর শুকরিয়ায় আমাদের জীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু যুদ্ধ সবকিছু বদলে দিল।

আরও পড়ুন ট্রাম্পের চোখে নেতানিয়াহু ‘বোঝা’ হয়ে উঠছেন — ইসরায়েলি বিশ্লেষকের মন্তব্য 

হামজা সালেম এবং তাঁর বাবা আবদেল নাসের সালেম একই হামলায় আহত হন। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তারা দুজনেই এখন চিকিৎসা পেতে সংগ্রাম করছেন। হামজা জানান, যে বিস্ফোরণে তিনি আহত হন, তাতে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেছিলেন। ১০ দিন পর জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখেন তাঁর দুটি পা নেই। হাসপাতালে দুর্বল স্যানিটাইজেশনের কারণে তাঁর ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হয়। কিন্তু তাঁকে কোনো ওষুধ ছাড়াই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দেয়। এখন তাঁকে নিজের যন্ত্রণার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে।

হামজা জানান, ইসরায়েল গাজা শহরে হামলা শুরু করার পর গত সেপ্টেম্বরে তাঁর পরিবার বাড়ি ছেড়ে হেঁটে মধ্য গাজার দিকে যায়। এ সময় তিনি ও তাঁর বাবাকে বালুভরা রাস্তায় হুইলচেয়ার ঠেলে ঠেলে চলতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। বর্তমানে তাঁর পরিবার বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তাদের কাছে জামাকাপড় সামান্য, অর্থ কম এবং যদি আবার পালাতে হয় তবে ঘুমানোর জন্য কোনো তাঁবুও নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আহত এক লাখ ৬৭ হাজার গাজাবাসীর এক-চতুর্থাংশের বেশি ‘জীবন পরিবর্তনকারী আঘাত’ পেয়েছেন। অঙ্গহানি হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের। গাজার ৩৬টি হাসপাতালের অর্ধেকেরও কম আংশিকভাবে কাজ করছে। দেখা দিয়েছে ওষুধ সংকট। ক্যান্সার চিকিৎসা ও ডায়ালাইসিসের মতো সেবা দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। 

গাজায় ইউনিসেফের মুখপাত্র টেস ইনগ্রাম বলেন, গাজার শিশুদের প্রতিদিন অসুস্থতা ও মৃত্যুর এক চিরন্তন হুমকির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এটি এমন এক বিষাক্ত মানসিক চাপের সৃষ্টি করছে, যা শুধু ক্ষতিকর নয়, দীর্ঘ মেয়াদে প্রাণঘাতীও হতে পারে।


ঢাকা ভয়েস /এসএস




No comments

Powered by Blogger.