Adsterra

লোড হচ্ছে...

যে কারণে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে জেন-জি আন্দোলন

যে কারণে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে জেন-জি আন্দোলন

সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা—সব মিলিয়ে ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্ম এখন রাস্তায়। নিজেদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে সরাসরি আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে জেন-জি বা ‘জেনারেশন জুমার্স’। জন্ম থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম এখন প্রচলিত রাজনীতি, সংস্কৃতি ও চিন্তার কাঠামো নাড়িয়ে দিচ্ছে এক অভূতপূর্ব তরঙ্গে।

বৈশ্বিক তরুণ আন্দোলনের ঢেউ

মরক্কোতে জেন-জি ২১২ আন্দোলন :

মরক্কোর বিভিন্ন শহরে টানা কয়েক রাত ধরে চলছে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ। ‘জেন-জি ২১২’ নামে এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে মূলত ছাত্র ও বেকার তরুণরা। তাদের দাবি—স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় দ্রুত সংস্কার।

অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকার ২০৩০ বিশ্বকাপের অবকাঠামোতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে সেবা নেই, শিক্ষাব্যবস্থা ভঙ্গুর এবং বেকারত্ব ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে আগাদির শহরে কয়েকজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর ঘটনায়। দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে সহিংসতা দমন করতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নোচ জানিয়েছেন, সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত; তবে আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি থেকে সরে আসেনি।

আফ্রিকায় তরুণদের উত্তাল মাদাগাস্কার

মাদাগাস্কারেও চলছে জেন-জি তরুণদের তীব্র আন্দোলন। পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করছেন।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, এ ঘটনায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। তবে সরকার এই সংখ্যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।

লাতিন আমেরিকায় তরুণদের দাবির ঝড়

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তরুণদের আন্দোলন এখন দুর্নীতিবিরোধী ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে রূপ নিয়েছে।

পেনশন আইন সংশোধন নিয়ে শুরু হলেও আন্দোলন এখন প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে সরকারের জনপ্রিয়তাকে তলানিতে নামিয়ে এনেছে। জুলাইয়ের জরিপ অনুযায়ী, তার জনপ্রিয়তা মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

নেপালে জেন-জি বিপ্লব

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরকার পতনের দিকে গড়ায়।

কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন; রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি ভবন আগুনে পুড়ে যায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও তরুণরা সোচ্চার হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকসের অধ্যাপক বার্ট কামার্টস বলেন,

“এই প্রজন্ম মনে করছে, তাদের স্বার্থ কেউ প্রতিনিধিত্ব করছে না। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস রাখে, কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থা তাদের আশা পূরণ করছে না।”

এসওএএস সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুবির সিনহা মনে করেন, “ক্ষমতাসীনদের অগ্রাধিকার তরুণদের বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। ফলে তাদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে হতাশা ও ক্ষোভ। ভবিষ্যৎ যেন বাতিল হয়ে গেছে—এমন অনুভূতি থেকে তারা সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবাদের সুর ছড়াচ্ছে।”

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে রাস্তায়

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই এখন জেন-জিদের প্রধান সংগঠনভিত্তি।

মরক্কোর ‘জেন-জি ২১২’ নামের একটি ডিসকর্ড সার্ভার কয়েক দিনের মধ্যেই ৩ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার সদস্যে পৌঁছে যায়।

মাদাগাস্কারে ‘জেন-জি মাদা’ ফেসবুক ও টিকটকের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আন্দোলনগুলো বিকেন্দ্রীকৃত ও নেতা ছাড়া পরিচালিত হওয়ায় সরকারগুলোর পক্ষে দমন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

জেন-জি প্রজন্ম এখন শুধু অনলাইনে নয়, বাস্তবেও পরিবর্তনের হাল ধরেছে—এবং সেই তরুণ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক পর্দা থেকে সরাসরি রাস্তায়।




No comments

Powered by Blogger.