Adsterra

লোড হচ্ছে...

অর্জিত সওয়াব নষ্ট হয় যেভাবে

ইসলামিক ফতোয়া, চিকিৎসক নৈতিকতা, ওষুধ কোম্পানি, ডাক্তার উপহার, ইসলাম ও চিকিৎসা, ঘুষ ও হারাম, শরীয়তের বিধান, দারুল উলুম করাচি, ফতোয়া বাংলা, ডাক্তারদের


মানুষের জীবনে অর্জিত সওয়াব এমন এক অমূল্য সম্পদ, যা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণ বয়ে আনে। মানুষ যত ইবাদত করে, সৎকাজের উদ্যোগ নেয়, সবকিছুর উদ্দেশ্য এই সওয়াব অর্জন। কারণ সওয়াবই পরকালের মুক্তির পুঁজি, জান্নাতের পথের আলোকবর্তিকা। কিন্তু এই অমূল্য সম্পদ অনেক সময় মানুষ নিজেই নষ্ট করে ফেলে এমন কিছু কাজের মাধ্যমে, যা সে তুচ্ছ মনে করে। গিবত বা পরনিন্দা তেমনই এক মারাত্মক ব্যাধি, যা অজান্তেই মানুষের অর্জিত নেক আমলগুলো ধ্বংস করে দেয়। বাহ্যিকভাবে গিবত হয়তো সামান্য কথোপকথনের মতো মনে হয়, কিন্তু কোরআন ও হাদিসে এটি এমন ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে চিত্রিত হয়েছে, যা শিউরে ওঠার মতো।

আল্লাহতায়ালা গিবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। একবার চিন্তা করুন, একজন মানুষের পক্ষে নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা কতটা জঘন্য ও ঘৃণিত, গিবতের আসল রূপও ঠিক তেমনই। অথচ সমাজে আজ গিবত যেন সাধারণ আলাপচারিতার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চায়ের দোকান, অফিস, বন্ধুর আড্ডা, এমনকি ধর্মীয় পরিবেশেও মানুষ অনায়াসে অন্যের দোষচর্চা করে। কেউ শারীরিক দোষ নিয়ে হাসাহাসি করে, কেউ অন্যের ব্যর্থতা নিয়ে ব্যঙ্গ করে, আবার কেউ সামাজিক বা পারিবারিক দুর্বলতা নিয়ে কুৎসা রটায়। অনেকে মনে করে, এসব কথা নেহাতই মজা বা সাধারণ আলোচনা। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এসবই গিবতের অন্তর্ভুক্ত, যা আমলনামাকে শূন্য করে দেয়। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা বেশি ধারণা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা পাপ। আর তোমরা ছিদ্রান্বেষণ কোরো না এবং পরস্পরের পেছনে গিবত কোরো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? বস্তুত তোমরা সেটি অপছন্দ করে থাকো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বাধিক তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত ১২)

গিবতের ভয়াবহতা শুধু পরকালের শাস্তিতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব পড়ে দুনিয়াতেও। গিবত মানুষের অন্তরকে কলুষিত করে, সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং পারস্পরিক ভালোবাসা নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে মানুষ শুধু অন্যের সম্মান নষ্ট করে না, নিজের আত্মিক মর্যাদাকেও ধ্বংস করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) গিবতকে এমন এক অদৃশ্য আগুনের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা মানুষের নেক আমলগুলোকে ছাই করে দেয়।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, মানুষ বড় গুনাহ যেমন ব্যভিচার, সুদ বা মদ্যপান থেকে ভয় পায়, কিন্তু গিবতকে গুনাহ বলেই গণ্য করে না। অথচ এটি বান্দার হকের সঙ্গে জড়িত এক গুরুতর অপরাধ। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে তওবা করলেও গিবতের পাপ থেকে ক্ষমা লাভের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মেরাজের রাতে এমন কিছু মানুষকে দেখেছিলেন, যারা নখ দিয়ে নিজেদের মুখ ও বুক ছিঁড়ে ফেলছিল। জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন, এরা সেই মানুষ, যারা দুনিয়ায় অন্যের মানহানি করত, গিবত করত, মানুষের সম্মানে আঘাত করত। এই দৃশ্য কল্পনা করলেই গিবতের ভয়াবহতা অনুধাবন করা যায়।

গিবত শুধু মুখে উচ্চারিত শব্দেই সীমাবদ্ধ নয়। আজকের যুগে তা ছড়িয়ে পড়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেমন ফেসবুকের পোস্টে, মেসেঞ্জারের চ্যাটে, সংবাদমাধ্যমে বা সামাজিক আলোচনায়। আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম গিবতের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে, যেখানে একজনের চরিত্র হনন কয়েক সেকেন্ডেই হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। অথচ গিবতের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ইঙ্গিত, প্রতিটি লেখা মানুষের নেকির ভাণ্ডার থেকে সওয়াব কেড়ে নেয়।

এ কারণেই ইসলাম মুমিনদের সতর্ক করেছে, যেন তারা গিবত শোনার পরিবেশ থেকেও দূরে থাকে।

যার গিবত করা হয়েছে যদি তার কাছে ক্ষমা চাইতে গেলে আরও সমস্যা তৈরির আশঙ্কা থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে অনেক ইসলামি স্কলার বলেছেন, যার গিবত করা হয়েছে তার জন্য মাগফিরাত কামনা করা, দান-সদকা করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।


আরও পড়ুন   টাইফয়েড টিকা নিয়ে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর এখানে 

ঢাকা ভয়েস /এসএস

No comments

Powered by Blogger.