টাইফয়েড টিকা নিয়ে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর এখানে
টাইফয়েড জ্বর কী? কীভাবে এই রোগ ছড়ায়?
বাংলাদেশে সংক্রমণজনিত রোগের অন্যতম প্রধান কারণ টাইফয়েড। টাইফয়েড জ্বর "স্যালমোনেলা টাইফি” নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে।
টাইফয়েড প্রতিরোধে টিসিভি (টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন) টিকা কি কার্যকর ও নিরাপদ?
হ্যাঁ, টিসিভি খুবই নিরাপদ ও কার্যকরী।সারা বিশ্বব্যাপী এই টিকা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শিশুরা গ্রহণ করছে। পাকিস্তান, নেপাল ও বিভিন্ন দেশে এই টিকা প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত টিসিভি টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক যাচাইকৃত (প্রিকোয়ালিফাইড)। টিসিভি টিকা দেওয়ার পর সামান্য প্রতিক্রিয়া, যেমন: টিকা দেওয়ার স্থানে চামড়া লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, সামান্য ব্যথা, অল্প জ্বর, মাথা ব্যাথা, ক্লান্তি ভাব, এবং মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে; যেগুলি এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
ক্যাম্পেইনে টাইফয়েড টিকা কারা নিতে পারবেন?
টিকাদান ক্যাম্পেইন চলাকালে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি/সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ০৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের বিদ্যমান ইপিআই স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে এই টিকা প্রদান করা হবে।
টাইফয়েড টিকা শরীরের কোথায় প্রদান করা হয়?
০২ বছর এবং তার কম বয়সি শিশুদের ০.৫ এম.এল. পরিমাণ টিকা উরুর মধ্যভাগের বাইরের অংশের মাংসপেশিতে এবং ০২ বছরের অধিক বয়সিদের বাহুর উপরিভাগে বাইরের অংশে সমপরিমাণ ডোজ ডেল্টয়েড মাংসপেশিতে প্রদান করা হয়।
শুধুমাত্র শিশুদের কেন টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে?
বাংলাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুরাই টাইফয়েড রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। টিসিভি ১ ডোজ টিকা এই বয়সে প্রদান করলে অধিক মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ করে। সেজন্য এই ক্যাম্পেইনে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের এই টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে শুধুমাত্র ৯ মাস বয়সি শিশুদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে এই টিকা দেওয়া হবে।
১৫ বছরের বেশি বয়সি কেউ কি এই টিকা গ্রহণ করতে পারবে?
সরকারি উদ্যোগে এই ক্যাম্পেইনে শুধুমাত্র ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের ০১ ডোজ টিকা প্রদান করা হবে। ১৫ বছরের অধিক বয়সি যেকোন ব্যক্তি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজ ব্যবস্থাপনায় এই টিকা গ্রহণ করতে পারবে।
টিসিভি টিকা দিলে কি টাইফয়েড সংক্রমণ অথবা টাইফয়েড জ্বর হবে না?
সংক্রমণের পূর্বে এই টিকা গ্রহণ করলে পুনরায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায় এবং পরবর্তীতে টাইফয়েড জ্বর হলেও জটিলতা সৃষ্টি হয় না।
একজন মা প্রশ্ন করলেন, আমার মেয়েকে এই টিকা দিলে বিয়ের পর সন্তান ধারণে কোন সমস্যা হবে কি?
টিসিভি টিকা অত্যন্ত নিরাপদ এবং কার্যকর। এই টিকা নারীর গর্ভকালীন জটিলতা, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস কিংবা সন্তান ধারণে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না বরং এই টিকা টাইফয়েড জ্বর হতে সুরক্ষিত রাখে।
গর্ভবতী কিশোরী বা দুগ্ধদানকারী মা কি এই টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করতে পারবে?
না। গর্ভাবস্থায় বা দুগ্ধদানকারী মা-কে এই টিকা প্রদান করা যাবে না।
টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় একজন রোগী এই টিকা গ্রহণ করতে পারবে কি?
না, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় এই টিকা গ্রহণ করা যাবে না। তবে জ্বর থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পর এই টিকা গ্রহণ করা যাবে।
পূর্বে টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে কি টিকা গ্রহণ করা যাবে?
হ্যাঁ, গ্রহণ করা যাবে।
টাইফয়েড টিকা গ্রহণের সাথে অন্য টিকা গ্রহণের সম্পর্ক আছে কি?
টাইফয়েড টিকা গ্রহণের সময়, অর্থাৎ একইসাথে, পূর্বে কিংবা পরে অন্য যেকোন টিকা গ্রহণ করা যাবে।
পূর্বে টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করে থাকলে এই ক্যাম্পেইনে কি পুনরায় এই টিকা গ্রহণ করা যাবে?
০৯ থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুরা পূর্বে টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করে থাকলেও ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে তাদের ১ ডোজ টাইফয়েড টিকা অবশ্যই নিতে হবে।
টাইফয়েড ক্যাম্পেইন চলাকালীন নির্ধারিত এলাকার বাইরের কোন ছাত্র-ছাত্রী/শিশু যদি টিকা নিতে আসে, তবে তাকে টিকা দেওয়া যাবে কি?
হ্যাঁ, দেওয়া যাবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত টিকাদান সেশনে কোন ছাত্র বা ছাত্রী অনুপস্থিত থাকলে সে কি আর টাইফয়েড টিকা নেওয়ার সুযোগ পাবে?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট দিনে ছাত্র-ছাত্রী টাইফয়েড টিকা পাওয়া থেকে বাদ পড়লে ক্যাম্পেইন চলাকালীন যেকোনো নিয়মিত/স্থায়ী ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবে।
কমিউনিটির নির্ধারিত টিকাদান সেশনে কোন শিশু টিকা নিতে পারেনি; তাহলে সে কি আর টাইফয়েড টিকা নেওয়ার সুযোগ পাবে?
হ্যাঁ, পাবে। ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ের মধ্যে যে কোনো ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবে।
এই টিকা কি সরকারি উদ্যোগে প্রদান করা হবে?
হ্যাঁ। ১ ডোজ টাইফয়েড টিকা বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রসমূহে বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।টিকা গ্রহণের সময় হঠাৎ দেখা যায়- একইসাথে অনেক কিশোরী অসুস্থতা বোধ করে বা অজ্ঞান হয়ে যায়; অনেক ক্ষেত্রে তাদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। এর কারণ কী? এটি কি ভয়ের কিছু?না, আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে Mass Psychogenic Illness বলে, যা মূলত টিকা প্রদানের পূর্বে বা পরে মানসিক ভীতিজনিত কারণে একটি প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর ফলে একজন কিশোরী অসুস্থ বোধ করলে অন্য অনেক কিশোরীও ভয় পেয়ে অসুস্থ বোধ করে, যা সম্পূর্ণ মানসিক কারণ; এর সাথে টিকাজনিত অসুস্থতার কোন সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন যে অভ্যাসগুলো টিকিয়ে রাখবে নতুন দম্পতির সম্পর্ক
ঢাকাভয়েস/এই
No comments