Adsterra

লোড হচ্ছে...

জাপানি চায়ে বিশ্ব কেন মাতোয়ারা?

 

জাপানি চায়ে বিশ্ব কেন মাতোয়ারা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh

বেশ কয়েক বছর ধরে এক কাপ চায়ের জন্য মানুষ লম্বা লাইনে দাঁড়াচ্ছে, ইনস্টাগ্রামে হ্যাশট্যাগে ভেসে যাচ্ছে লাখো ছবি, আর সুপারমার্কেটে মাচা ফ্লেভারের ডোনাট, কেক, লাটে বা আইসক্রিমের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে পরিচিত সব স্বাদ। নাম তার মাচা। জাপানি এক বিশেষ ধরনের সবুজ চা। এটা এখন শুধু পানীয় নয় বরং আধুনিক খাদ্য সংস্কৃতির এক আলাদা ট্রেন্ড। এই চায়ের প্রতি আকর্ষণ যেন এক নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিশ্বজুড়ে এখন ‘মাচা ম্যানিয়া’। যুক্তরাজ্যের স্টারবাকস হোক কিংবা সিঙ্গাপুরের ক্রিসপি ক্রিম, সবাই যেন মাচার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোভিড–পরবর্তী সময়ে বেড়ে যাওয়া জাপান ভ্রমণের হার, জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের ভ্লগ সব মিলিয়ে মাচার জনপ্রিয়তা এখন আকাশছোঁয়া।মাচা হলো এক ধরনের বিশেষ গ্রিন টি যা অন্য সব চায়ের চেয়ে আলাদা। এটি সাধারণভাবে পাতা ফুটিয়ে খাওয়ার চা নয়। বরং তেনচা নামের বিশেষ চা-পাতা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে পাথরের চাকি দিয়ে গুঁড়ো করে বানানো হয় এই মাচা। এরপর এই গুঁড়োই সরাসরি পানিতে মিশিয়ে পান করা হয়। ফলে পাতার সব পুষ্টি উপাদান সরাসরি শরীরে যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল সব কিছুই একসাথে মেলে। তাই একে অনেকে ‘গ্রিন টি’র সুপার ভার্সন’ বলেই মনে করেন।মাচা এখন শুধু চা-কাপেই সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন রেসিপি যেমন কেক, লাটে, ডোনাট, আইসক্রিম কিংবা স্মুদি সবখানেই এই সবুজ গুড়ার ব্যবহার বেড়েছে। এর কোমল ও কাঁচা স্বাদ, যাকে বলা হয় ‘উমামি’ সেটাই মূলত সবাইকে মুগ্ধ করছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ক্যাফে এখন প্রতিদিন এক কেজির মতো মাচা চাইছে। অথচ এতটা চাহিদা মেটানো জাপানের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার চা উৎপাদনে বড় ধাক্কা লেগেছে, বিশেষ করে কিয়োতো অঞ্চলে, যেখান থেকে আসে সেরা মানের তেনচা।একই সাথে জাপানের মুদ্রার দাম কমে যাওয়ায় মাচা কিনতে আগ্রহ বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। ফলে যে চা আগে মাসখানেক চলত, এখন সেটা কয়েক দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক দোকান এক গ্রাহককে একটি টিনের বেশি দিচ্ছে না। ক্যামেলিয়া টি সেরিমনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকেও টিনপ্রতি সীমা বেঁধে দিতে হয়েছে।জাপানি চা মাস্টার রিয়ে তাকেদা বলছেন, আগে অর্ডার পেতে যেত কয়েক দিন, এখন সেটা পেতে লেগে যাচ্ছে এক সপ্তাহেরও বেশি। চাহিদা এতই বেশি যে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে মাচার দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তাঁর কথায়, “এই আগ্রহটা আসলে জাপানি সংস্কৃতির সাথে যোগাযোগের এক জানালা খুলে দিচ্ছে।”মাচা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা টিকটকে মাচা তৈরির ভিডিও, নতুন নতুন রেসিপি, ‘মাচা টেস্ট রিভিউ’ এসব বিষয় এখন মিলিয়ন ভিউ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ‘মাচা টক’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ইতিমধ্যে কোটি কোটি মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছে।এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এখন স্থানীয় ও স্বাস্থ্যবান্ধব পণ্যের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এই ‘সতর্ক উপভোগ’ বা মাইন্ডফুল কনজাম্পশনের ধারায় অনেকেই মাচাকে বেছে নিচ্ছেন। কারণ এটি একসাথে স্বাস্থ্যকর, ট্রেন্ডি এবং রুচিশীল।জাপানের কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মাচা উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ২০২৪ সালে শুধু সবুজ চা থেকেই জাপান আয় করেছে প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ইয়েন, যার বড় অংশই মাচা থেকে এসেছে।তবে সমস্যা হচ্ছে, এত চাহিদার পরও উৎপাদনে তরুণদের আগ্রহ কমছে। জাপানের বয়স্ক কৃষকদের জায়গায় নতুন চাষি পাওয়া যাচ্ছে না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু সমস্যা, শুল্কবৃদ্ধি, পরিবহন সংকট।তাই অনেক বিশেষজ্ঞ এখন বলছেন মাচা যেন শুধু ফ্যাশনের বিষয় না হয়, বরং সবাই যেন এটা উপভোগ করে সচেতনভাবে। দামি মাচা রান্নায় ব্যবহার না করে, মূল স্বাদ ধরে রেখে পান করাই শ্রেয়।সবুজ চায়ের এই নতুন রাজা এখন শুধু এক কাপ চা নয়। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন সংস্কৃতি জানার এক দারুণ বাহন। মাচা এখন শুধু জাপানের সম্পদ নয়, বরং বিশ্বব্যাপী রুচির এক নতুন ভাষা।

আরও পড়ুন বিয়ের পর যেসব কারণে বদলে প্রিয়জনের সম্পর্কের সমীকরণ

ঢাকাভয়েস/এই

No comments

Powered by Blogger.