চাকরির ভবিষ্যৎ— মানুষ না মেশিনের হাতে ?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আজ আর কোনো সায়েন্স ফিকশনের বিষয় নয়; এটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বাস্তব হয়ে উঠেছে। ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয় সেবা থেকে শুরু করে অনলাইন কেনাকাটার সাজেশন, চিকিৎসায় রোগ নির্ণয় থেকে সংবাদ লেখার খসড়া তৈরি— সবখানেই এআইয়ের ছোঁয়া। এ কারণে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে, ভবিষ্যতে কি আমাদের চাকরির জায়গা মেশিন নিয়ে নেবে ?
ইতিহাস বলছে, প্রযুক্তি যতবার এগিয়েছে, ততবারই মানুষের কাজের ধরন বদলেছে। শিল্পবিপ্লবের সময় মেশিন কৃষিকাজে শ্রমিকদের ভূমিকা কমিয়ে দিয়েছিল, আবার একই সঙ্গে তৈরি করেছিল কারখানায় নতুন কাজের সুযোগ। একইভাবে কম্পিউটার আসার পর টাইপিস্টদের চাকরি হারালেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হাজারো নতুন পেশার জন্ম হয়েছে। অর্থাৎ প্রযুক্তি কিছু কাজকে অপ্রয়োজনীয় করে তোলে, কিন্তু অন্যদিকে নতুন দরজা খুলেও দেয়।
এআইয়ের ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা ঘটছে। সহজ, পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ— যেমন ডেটা এন্ট্রি, প্রাথমিক কাস্টমার সার্ভিস, বা সাধারণ হিসাব-নিকাশ— ক্রমশ মেশিনের হাতে চলে যাচ্ছে। এতে মানবশক্তির প্রয়োজন কমছে ঠিকই, কিন্তু তার পাশাপাশি বাড়ছে এমন সব কাজের সুযোগ, যেখানে সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণী দক্ষতা, আবেগ বোঝার ক্ষমতা ও মানবিক যোগাযোগ প্রয়োজন। একজন ডাক্তারকে হয়তো এআই রোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করবে, কিন্তু রোগীর চোখের দিকে তাকিয়ে ভরসা জোগাতে পারবে না। একজন শিক্ষক হয়তো অনলাইন কনটেন্ট ব্যবহার করবেন, কিন্তু শিক্ষার্থীর মন বোঝার কাজ এখনও মানুষেরই।
তবে ঝুঁকিও অস্বীকার করা যায় না। অনেক খাতে চাকরি সংকুচিত হবে, বিশেষ করে যেখানে কাজ পুরোপুরি নিয়মভিত্তিক বা পুনরাবৃত্তিমূলক। যারা পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন না, তাদের জন্য ভবিষ্যৎ কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন নতুন দক্ষতা অর্জন করা। ডিজিটাল লিটারেসি, এআই ব্যবহার করার কৌশল, সৃজনশীল চিন্তা, সমস্যা সমাধান ও মানবিক যোগাযোগ— এসব দক্ষতা আগামী দিনের চাকরির বাজারে সবচেয়ে মূল্যবান হবে।
সবশেষে বলা যায়, এআই মানুষকে প্রতিস্থাপন করতে আসেনি, বরং মানুষের সামর্থ্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে এসেছে। প্রশ্নটা তাই শুধু চাকরি হারানোর নয়, বরং আমরা কীভাবে নিজেদের নতুনভাবে প্রস্তুত করছি, সেটাই মূল বিষয়। মেশিন হয়তো অনেক কাজ দ্রুত করবে, কিন্তু মানুষের কল্পনা, আবেগ আর সৃজনশীলতার জায়গা এখনও মেশিন পূরণ করতে পারবে না। তাই ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানে টিকে থাকার আসল চাবিকাঠি হলো— পরিবর্তনকে ভয় না পেয়ে, পরিবর্তনের সঙ্গে পথ চলতে শেখা।
No comments