Adsterra

লোড হচ্ছে...

আবর্জনার বিনিময়ে যেখানে খাবার মেলে

 

আবর্জনার বিনিময়ে যেখানে খাবার মেলে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News

টাকা নয় ময়লা-আবর্জনার বিনিময়ে মেলে খাবার। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিষয়টি বাস্তবে রূপ দিয়েছে ভারতের ছত্তিশগড়ের অম্বিকাপুর শহরের ‘গার্বেজ ক্যাফে’। সেখানে এক কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ভরপেট খাবার, আর আধা কেজি প্লাস্টিকের বদলে সিঙ্গারা কিংবা বড়া পাভ পাওয়া যায়। ‘মোর দ্য ওয়েস্ট, বেটার দ্য টেস্ট’- এই স্লোগান নিয়ে ২০১৯ সালে শুরু হওয়া গারবেজ ক্যাফে শুধু ক্ষুধার সমাধান করেনি, একইসঙ্গে শহরকে করেছে পরিচ্ছন্ন।অম্বিকাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (এএমসি) পক্ষ থেকে এই ক্যাফে পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিনোদ কুমার প্যাটেল। তিনি জানান, এই ক্যাফেতে প্রতিদিন ক্ষুধার্ত মানুষ এসে হাজির হন গরম খাবারের আশায়। কিন্তু খাবারের খরচের জন্য তারা টাকা দেন না। পরিবর্তে দেন পুরোনো প্লাস্টিকের ব্যাগ, খাবারের মোড়ক, প্লাস্টিকের জলের বোতল ইত্যাদি।তিনি বলেন, এক কেজি প্লাস্টিক বর্জ্যর পরিবর্তে একজন ভরপেট খাবার পেতে পারেন। সেখানে থাকে দু’রকমের তরকারি, ডাল, রুটি, সালাদ ও আচার। আর আধা কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে তারা জলখাবার পান, যেমন সিঙ্গারা বা বড়া পাও।ছত্তিশগড়ের এই শহর অভিনব উপায় বের করেছে যাতে ক্ষুধার নিবারণও হয়, আবার বর্জ্য প্লাস্টিকের কারণে হওয়া দূষণের মোকাবিলাও করা যায়। এই উদ্যোগের জন্য অর্থ এসেছিল এএমসি-র স্যানিটেশন বাজেট থেকে। শহরের প্রধান বাস স্ট্যান্ডের কাছেই চালু করা হয় এই ক্যাফে।‘গার্বেজ ক্যাফে’র নেপথ্যে চিন্তাটা খুব সহজ। নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষত ঘরহীন মানুষ এবং যারা আবর্জনা সংগ্রহ করে জীবিকা চালান তাদের রাস্তা বা আস্তাকুঁড়ে থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করতে উৎসাহ দেওয়া। ওই বর্জ্যের বিনিময়ে তাদের গরম খাবারের ব্যবস্থা করা। এই ক্যাফেতে নিয়মিত আসেন স্থানীয় বাসিন্দা রশ্মি মণ্ডল। তিনি প্রতিদিন সকালবেলা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের খোঁজে। পুরনো খাবারের মোড়ক থেকে শুরু করে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল- কিছুই বাদ যায় না তার সংগ্রহের তালিকা থেকে। এটাই তার কাছে বেঁচে থাকার একটা মাধ্যম। রশ্মি মণ্ডল বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে এই কাজ করছি। এখন যে প্লাস্টিক সংগ্রহ করছি তার বদলে বাড়ির লোকের জন্য খাবার কিনতে পারছি। এটা আমাদের জীবনে একটা বড় বদল এনেছে।’ক্যাফেটিতে প্রতিদিন গড়ে ২০ জনেরও বেশি মানুষকে খাওয়ানো হয় বলে জানান বিনোদ প্যাটেল। তিনি বলেন, ‘ক্যাফেতে আসা ব্যক্তিদের বেশিরভাগই অত্যন্ত দরিদ্র।’ভারত সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন আরবান’-এর আওতায় অম্বিকাপুরের স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা রীতেশ সাইনি জানিয়েছেন, এই ক্যাফে শহরের প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। এই ক্যাফে ২০১৯ সাল থেকে প্রায় ২৩ টন প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছে। তা না হলে এই আবর্জনা মাটিতে গিয়ে স্তূপ হতে থাকত। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বছরে ওই শহরে ল্যান্ডফিলের পরিমাণ ছিল ৫.৪ টন, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে দুই টনে।ক্যাফেতে আসা প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় পুরোটাই ইতোমধ্যে রিসাইকেল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাইনি। ‍তিনি বলেন, ‘এই শহরে দৈনিক ৪৫ টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এককালে এখান থেকে ৩.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ১৬ একর বিস্তৃত ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা ফেলা হতো। বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ফেলা নিয়ে হিমশিমও খেতে হয়েছিল।’তবে ২০১৬ সালে এএমসি ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডকে পার্কে রূপান্তরিত করে। 'জিরো-ওয়েস্ট ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম' বা শূন্য-বর্জ্য বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা চালু করা হয় যাতে এই জাতীয় ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দরকারই না পড়ে।ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও 'গার্বেজ ক্যাফে' গড়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালে একটা প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। সেই বছরই তেলেঙ্গানার মুলুগু শহরে একটা নতুন প্রকল্পের আওতায় এক কেজি প্লাস্টিকের বদলে সেই ওজনের চাল দেওয়া শুরু করেছিল।স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্ণাটকের মাইসুরুতে, ২০২৪ সালে একটা প্রকল্প চালু করা হয় যার আওতায় স্থানীয়রা যে কোনো রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত 'ইন্দিরা ক্যান্টিনে' ৫০০ গ্রাম প্লাস্টিকের বদলে জলখাবার খেতে পারেন। এক কেজি প্লাস্টিকের বদলে পেতে পারেন পেট ভরা খাবার।উত্তরপ্রদেশে এমনই এক উদ্যোগের আওতায় প্লাস্টিক বর্জ্যের বদলে নারীদের হাতে স্যানিটারি প্যাড তুলে দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে ২০২০ সালে 'গার্বেজ ক্যাফে' চালু করা হয়েছিল প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। এর ২০টারও বেশি আউটলেট ছিল। কিন্তু এই উদ্যোগ তেমন সফলতা পায়নি।ভারতের বাইরে কম্বোডিয়াতেও ক্ষুধা নিবারণ এবং বর্জ্য মোকাবিলা করার জন্য এমন উদ্যোগ নিতে দেখা গিয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যার সঙ্গে যোঝা টনলে স্যাপ লেকের আশেপাশের বসাবাসকারী সম্প্রদায়ের মানুষ প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে ভাত পান। 

No comments

Powered by Blogger.