Adsterra

লোড হচ্ছে...

নেপালে বিক্ষোভ, কারফিউ- তরুণদের ফুঁসে ওঠার কারণ কী

 

নেপালে বিক্ষোভ, কারফিউ- তরুণদের ফুঁসে ওঠার কারণ কী, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh

নেপালে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তরুণদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৯জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বারো বছর বয়সের একজন শিশুও রয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) বা ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে 'জেনারেশন z' বা জেন জি-র ডাকে এদিন সোমবার কাঠমান্ডুতে দেশের পার্লামেন্টের সামনে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল।

সেই ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হলে পরিস্থিতি একটা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা কারফিউ বিধিনিষেধ ভেঙে পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের সুরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়লে রাজধানীতে সেনাবাহিনী নামানো হয়।

নেপালের যোগাযোগমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা বিবিসিকে বলেছেন, পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর বল প্রয়োগ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

তিনি জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের নিশানা করে জলকামান ও রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়, চার্জ করা হয় ব্যাটনও।

এর আগে সরকার বলেছিল, ফেক নিউজ (ভূয়া খবর), হেইট স্পিচ (বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার) বা অনলাইন জালিয়াতির মোকাবিলায় নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করা জরুরি।

কিন্তু সে দেশে ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী আছেন, যারা খবর, বিনোদন বা ব্যবসায়িক কাজে এই অ্যাপগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

ফলে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তারা এই বিক্ষোভের ডাক দেন।


ফেসবুক, ইউটিউবে ব্যান-ই একমাত্র কারণ নয়

তবে এদিন প্রতিবাদকারীদের হাতে 'এনাফ ইজ এনাফ' (ঢের হয়েছে) বা 'এন্ড টু কোরাপশন' (দুর্নীতি খতম হোক) লেখা প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারও দেখা গেছে।

অনেক বিক্ষোভকারী বলেন, তারা এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন সরকারের 'আধিপত্যবাদী মানসিকতা'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।

য়ুজান রাজভান্ডারী নামে ২৪ বছর বয়সী এক ছাত্র এএফপি-কে বলেন, "সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হলেও আমাদের প্রতিবাদের পেছনে সেটাই একমাত্র কারণ নয়।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা আসলে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, যেটা নেপালে একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।"

চালু থাকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে জনৈক প্রতিবাদকারীকে বলতে শোনা যায়, "নেতা-মন্ত্রীদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হলে আমাদের কেন হবে না?"

ইকশামা তুমরোক নামের এক ছাত্রী বলেন, "আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই!"

"আমাদের আগের প্রজন্মগুলো অনেক অবিচার সহ্য করেছে। কিন্তু আমরা চাই আমাদের প্রজন্মেই এই যন্ত্রণার অবসান হোক", আরও বলেন তিনি।


পরিস্থিতি যেভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো

প্রতিবাদ মিছিলটি যখন নেপালের পার্লামেন্টে সাধারণের প্রবেশের জন্য নিষিদ্ধ এলাকার দিকে এগোচ্ছিল, জনাকয়েক বিক্ষোভকারীকে কমপ্লেক্সের প্রাচীরের ওপরে উঠে পড়তে দেখা যায়।

পুলিশ বাহিনীর মুখপাত্র শেখর খানাল বার্তা সংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন, "বিক্ষোভকারীরা রেস্ট্রিক্টেড এলাকাতে জোর করে ঢুকে পড়েছিলেন বলেই তাদের ওপর জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়।"

কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসনের একজন মুখপাত্র জানান, বিক্ষোভকারীরা ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন দেখে পার্লামেন্ট ভবন-সহ আশেপাশের সব এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়।

প্রথমে কারফিউ ছিল শুধুমাত্র কাঠমান্ডু শহরের বাণেশ্বর এলাকায়।

কিন্তু পরে রাজধানীর সব হাই সিকিওরিটি এলাকায় সেই কারফিউ সম্প্রসারিত করা হয় – যার মধ্যে ছিল প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ (শীতল নিবাস), লেইনচাউরে ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, মহারাজগঞ্জ, সিংহ দরবারের চারদিক, বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর নিবাস ও আশেপাশের এলাকা।

শহরবাসীকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন এই সব এলাকায় চলাফেরা না করেন বা কোনও জমায়েতের চেষ্টা না করেন।

নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসনেট বিবিসিকে বলেছেন, কারফিউ জারি করার পরেই কেবল শহরের রাস্তায় সৈন্যদের একটি 'ছোট ইউনিট'কে মোতায়েন করা হয়।

এদিকে রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ দেশের আরও নানা প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

পোখরাতেও বিক্ষোভকারীদের হামলায় প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কারফিউ জারি করেছেন।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকও ডেকেছেন।


সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে সরকার যা বলছে

এর আগে গত সপ্তাহে নেপালের কর্তৃপক্ষ মোট ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে সে দেশে 'ব্লক' করার নির্দেশ দিয়েছিল।

এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, যে সময়সীমার মধ্যে এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে নেপালের যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নথিভুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল তারা সেটা মানেনি।

বস্তুত গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) থেকেই নেপালের ইউজাররা এই প্ল্যাটফর্মগুলো অ্যাকসেস করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছিলেন। অনেকে আবার 'ভিপিএন' ব্যবহার করে সেই সমস্যা পাশ কাটানোরও চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।

এদিকে এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর অন্তত দুটি প্ল্যাটফর্ম মন্ত্রণালয়ে নিজেদের নথিভুক্ত করেছে বলে জানা গিয়েছে – এরপর ওই দুটিকে নেপালে আনব্লক করা হয়েছে।

নেপালের সরকার নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে চাইছে যে তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে 'নিষিদ্ধ' করতে চায় না – কিন্তু সেটা যাতে নেপালের বিদ্যমান আইন ও বিধিনিষেধ মেনে চলে সেটাই কেবল নিশ্চিত করতে চাইছে।

তবে আজকের সংঘর্ষ ও প্রাণহানির পর সরকারি সূত্রগুলো থেকে জানা যাচ্ছে যে, সরকার এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, এরপরই সরকার এগুলোর বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করে।

অতীতেও অবশ্য বিভিন্ন জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অ্যাকসেস করার ক্ষেত্রে নেপালে নানা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে।

গত জুলাই মাসেই নেপালে 'টেলিগ্রাম' মেসেজিং অ্যাপের অ্যাকসেস ব্লক করে দেওয়া হয়। তখন যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, এই অ্যাপটি অনলাইন জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিং-এর (অর্থ পাচার) মতো অপরাধে মদত দিচ্ছে।

তারও আগে নেপালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল টিকটক-ও। সে দেশের যাবতীয় বিধিনিষেধ তারা মেনে চলবে, টিকটক এই মুচলেকা দেওয়ার পরই ন'মাস পরে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.