বিএনপির জন্য বড় ধাক্কা
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করলেও ছাত্রদলের তা ছিল না। তপশিল ঘোষণার পর তাড়াহুড়ো করে প্যানেল গঠন করেন দায়িত্বশীল নেতারা। তারা সংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপকে এককাতারে আনতে পারেননি। আবার নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দলের সব স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থককে পাশে টানতেও পারেননি। শুধু প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজের ওপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেয়েছে সংগঠনটি। শিক্ষক, নারী ভোটার কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ সেতু ছিল দুর্বল। মূলত দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনাই ছিল না সংগঠনটির। ছাত্রদলের নেতারা জানান, যেসব নেতাকর্মী নিজস্ব উদ্যোগে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছিলেন, তাদের কেন্দ্র থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাধাও দেওয়া হয়। কেন্দ্রের নেতাদের বক্তব্য ছিল– কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হলে তার দায়ভার ওই নেতাকে নিতে হবে। কেন্দ্রের এমন মনোভাবের কারণে অনেক ছাত্রনেতাই নিজেদের গুটিয়ে নেন।ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সালেহ মো. আদনান সমকালকে বলেন, বিগত দিনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের তীব্র আক্রমণ, হামলা-মামলা আর শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় এই সংগঠনকে এড়িয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা। পক্ষান্তরে শিবির তার নিজস্ব কৌশলে গুপ্ত রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের ব্যানারে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। ফলে যেখানে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, সেখানে ছাত্রশিবির গোপনে কাজ করেছে। আবার গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রদল যখন ক্যাম্পাসে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে থাকা শিবির মব সৃষ্টি করে শিক্ষাঙ্গনে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে। যার কারণে গত এক বছর ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে পড়ে। এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে ছাত্রশিবির।
সমন্বয়হীনতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে কোনো সমন্বয় গড়ে তুলতে পারেনি সংগঠনটি। যে যার পক্ষের নেতাকে জয়ী করতে কাজ করেছেন। কিন্তু সমন্বিত প্যানেলকে জেতাতে তেমন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। আবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠন যেভাবে অর্থ ব্যয় করেছে, তার ধারেকাছেও ছিল না ছাত্রদল। এমনকি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস
ফল বিপর্যয়ের জন্য বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেও কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারাসহ বিএনপির দায়িত্বশীলরা মনে করেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজনীতি সচেতন, মেধাবী। তারা কখনোই কোনো ইসলামী সংগঠনকে ভোটে জেতাবে না। ছাত্রশিবিরের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংকের বাইরে তারা ভোট পাবে না বলে অঙ্ক কষেছিল। সেটা শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিযোগ
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টরিয়াল বডিসহ নির্বাচনে সম্পৃক্ত শিক্ষক এবং অন্যদের বেশির ভাগ জামায়াত-শিবির সমর্থিত ছিল। ফলে নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল আলাদা সুবিধা পেয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রায় পুরোটাই জামায়াত-শিবির সমর্থিত। ফলে তারা নির্বাচনে একচেটিয়া সুবিধা পেয়েছে। ভোটে কারচুপি হলেও তা ওই সুবিধার কারণে ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয় ছাত্রশিবির। আবার নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের আঁতাতের কারণেও নির্বাচনের ফলাফলের মোড় ঘুরে যায় বলে দাবি করেন তিনি। খোরশেদ আলম বলেন, ভোটের হার যেটা দেখানো হয়েছে, সেটাও সন্দেহজনক। ভোটের দিন সকালে ভোটারদের উপস্থিতি থাকলেও দুপুরের পর তা ছিল না। তাহলে এত ভোট কীভাবে পড়ল?
শিক্ষকদের কাজে লাগাতে ব্যর্থতা
বিএনপিপন্থি সাদা দলের শিক্ষকদের কাজে লাগাতে পারেনি ছাত্রদল। নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। সেখানে সাদা দলের শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। প্যানেল ঘোষণার আগেও শিক্ষকদের মতামত নেওয়া হয়নি। তাদের এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় শিক্ষকরা ছাত্রদলের পাশে সেভাবে এগিয়ে যাননি।
No comments