Adsterra

লোড হচ্ছে...

নেপালে কেন ‘আন্দোলন ছিনতাইয়ের’ শঙ্কা, দেশ চালাচ্ছে কারা


নেপালে কেন ‘আন্দোলন ছিনতাইয়ের’ শঙ্কা, দেশ চালাচ্ছে কারা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News

দুই দিনের সহিংসতার পর নেপালজুড়ে সেনা মোতায়েন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে টহল দিচ্ছে। জব্দ করা হয়েছে বেশকিছু ভারী অস্ত্র ও সরঞ্জাম। বুধবার নেপালের বিভিন্ন সড়ক ছিল ফাঁকা। সেনাবাহিনী জমায়েত ও সভা, সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা পদত্যাগের পর বিভিন্ন স্থানে লুটপাট চলে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সরকারি ভবন ও স্থাপনা। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের অনেকেই নিজেদের রাজপথ থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তারা এখন বলছেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একটি গোষ্ঠী তাদের বিজয় ছিনতাই করছে।নেপালের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, তারা পরিবর্তন চেয়েছেন। কিন্তু এত ধ্বংসযজ্ঞ চাননি। এটি তাদের হতবাক করেছে। ললিতপুরের বাসিন্দা ও উদ্যোক্তা প্রভাত পৌদেল বলেন, সুপ্রিম কোর্টসহ বেশকিছু সরকারি ভবনে ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি। কারণ, এগুলো সাধারণ নেপালিদেরই সম্পদ। অনেক বিক্ষোভকারী বলছেন, তাদের আন্দোলন অনুপ্রবেশকারীদের হাতে গেছে। দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও এমনটা বলা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসেন্ত বিবিসিকে বলেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একটি পক্ষ লুটপাট ও আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী চেষ্টা করছে এগুলো নিয়ন্ত্রণের।বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের আন্দোলন ছিল অহিংস। এখন তারা নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সম্পদ রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকা পালন করছেন। এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়নি। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে কারফিউ কার্যকরের আহ্বান জানানো হয়েছে।

দেশ চালাচ্ছে কারা

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও কয়েকজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলেও বর্তমান মন্ত্রীসভার অধীনেই দেশ পরিচালিত হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌদেল।রামচন্দ্র পৌদেল অজ্ঞাত স্থান থেকে আন্দোলনকারী ‘জেন জি’ প্রতিনিধিদের আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং কোথায় রাখা হয়েছে- সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করেনি নেপালি সেনাবাহিনী।বিবিসির পক্ষ থেকে নেপালি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসেন্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিসহ শীর্ষ নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে তিনি ‘অজ্ঞ’।রামচন্দ্র পৌদেল সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংবিধানের নিবন্ধ ৭৭ এর ধারা তিন অনুযায়ী নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রীসভার অধীনেই দেশ পরিচালিত হবে।রাষ্ট্রপতি পৌদেল প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে ‘সংবিধান অনুযায়ী নতুন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত’ কে পি শর্মাকে কাজ চালানোর দায়িত্ব দেন। যদিও শর্মার কোনো উপস্থিতি প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা চলছে যে কে পি শর্মা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ একজন ব্যক্তি দাবি করেছেন, তিনি নেপালেই আছেন এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সুরক্ষায় আছেন। 

কেন সেনা মোতায়েন হলো

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত দশটা থেকে নেপালজুড়ে সেনা মোতায়েন হয়েছে। নেপাল সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি রিসার্চ (এসসিসিআর)-এর বিশ্লেষক বিষ্ণু রাজা আল জাজিরাকে বলেন, নেপালে সচরাচর সেনা মোতায়েন হয় না। এমন ঘটনা বহু আগে ঘটেছে। এটি ছিল মাওবাদীদের বিদ্রোহের পর। ১৯৯৬ সালে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) রাজতন্ত্র পতনের দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। এই গৃহযুদ্ধ ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলে। সেনা মোতায়েনের এটিই সবচেয়ে বড় উদাহরণ।চলতি সপ্তাহেও সেনাবাহিনী ব্যারাকে ছিল। কিন্তু নেপালের পুলিশ আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হওয়ার পর সেনাবাহিনী রাস্তায় নামে। বিষ্ণু রাজা বলেন, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌদেল সেনা মোতায়েনের আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এটি ছিল কেবল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য।  সেনা মোতায়েনের আগে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান। এতে বলা হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেকোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ ও লুটপাট শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে বলে, বিক্ষোভে অরাজকতা সৃষ্টিকারীরা প্রবেশ করেছে। তারা অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর, সহিংস হামলা এমনকি যৌন নিপীড়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী জননিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেষ্ট থাকবে।

সেনাবাহিনী কি কর্তৃত্ব নিয়েছে

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মার পদত্যাগের পর প্রশাসনিক যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনী এখনো নেয়নি। পোখারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক যোগ রাজ লামিচানে আল জাজিরাকে বলেন, বর্তমানে সেনাবাহিনী শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। তবে এসসিসিআর-এর বিশ্লেষক বিষ্ণু রাজা বলছেন, সেনাবাহিনী কার্যতই দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কারণ, জেন-জিরা প্রেসিডেন্ট পৌদেলেরও পদত্যাগ চায়। তারা মনে করে বর্তমান প্রেসিডেন্টও আগের প্রশাসনের দোসর। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস করা কঠিন।

অন্তর্বর্তী সরকার কি গঠন হবে

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর মঙ্গলবারই সেনাপ্রধান আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদেরকে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ করতে বলেছেন। এই বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই।কাঠমান্ডু পোস্টের সাংবাদিক অনিশ ঘ্রিমে জানান, ডিসকর্ড নামে সামাজিক যোগাযোগের একটি মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ২০০ নেপালি তরুণ পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলাপ করেছেন। কারা আলোচনায় অংশ নেবে, কোন কোন বিষয় উত্থাপন করা হবে তারা সেগুলো নির্ধারণ করছেন। ঘ্রিমে বলেন, আন্দোলনকারীদের সম্ভাব্য দাবির মধ্যে থাকতে পারে, সংসদ ভেঙে দেওয়া, ছয় মাস বা সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন এবং সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে চার বছর করার প্রস্তাব দিতে পারে জেন-জি’রা। 

আপৎকালীন দায়িত্ব কে নেবেন

পোখারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক যোগ রাজ লামিচান বলছেন, যদি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় তাহলে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকে আপৎকালীন বা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হতে পারে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি যদি বিধির বাইরে চলে যায়, তখন সাবেক প্রধান বিচারপতিদের বিবেচনা করা হতে পারে। অথবা তরণদের পছন্দের কেউও দায়িত্বে আসতে পারেন।নেপালের তরুণরা বর্তমানে ৩৫ বছর বয়সী বালেন্দ্র শাহকে বেশি পছন্দ করছেন। এক সময়ের র‌্যাপার বালেন্দ্র সামাজিক মাধ্যমে বালেন নামেই বেশি পরিচিত। তিনি বর্তমানে কাঠমান্ডুর মেয়র।অনলাইনে অনেক নেপালি বালেনকে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করছেন। বালেন নিজেও আন্দোলনের সময় তরুণদের সমর্থন দিয়েছেন। ২০২২ সালে মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর বালেন তাঁর কাজের মাধ্যমে দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিষয়গুলো সামনে আনেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধেও কিছু বিতর্ক আছে। তিনি ‘বৃহত্তর নেপাল’ ধারণার সমর্থনকারী। এই ধারণা অনুযায়ী, ভারতের কিছু এলাকা নিয়ে বৃহত্তর নেপাল গঠিত হবে।

 আরও পড়ুন ডাকসুতে শিবির প্যানেলের বাইরে জয়ী হলেন যারা

 

No comments

Powered by Blogger.