ধূসর যৌনতা’র প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে জেন জ়ি-র
সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য যেমন ভালবাসা ও বিশ্বাসের প্রয়োজন, ঠিক তেমনি প্রয়োজন দৈহিক মিলনে পরিতৃপ্তি। তবে প্রত্যেক মানুষের যৌন চাহিদা ভিন্ন। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি, সমলিঙ্গ ও উভলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন এমন যৌনচাহিদার পাশাপাশি আরও একটি যৌনচাহিদার অস্তিত্বের কথাও উঠে আসছে সমাজমাধ্যমে। যা ধূসর যৌনতা বা ‘গ্রে সেক্সুয়ালিটি’।
এমন এক শ্রেণির মানুষ রয়েছেন যাঁদের কারও প্রতি যৌন আকর্ষণই তৈরি হয় না। অনেক মানুষ যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন না। সেটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি বিষয় বলে ধরে নেওয়া হয়। যাঁরা যৌনবাসনা অনুভব করেন না, তাঁদের সাধারণত নিষ্কাম বা ‘অ্যাসেক্সুয়াল’ বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
যৌনতাকে সব সময়ই সমকামী, বিষমকামী বা উভকামী এই চেনা সমীকরণে মাপা যায় না। সমস্ত ধরনের যৌনচাহিদার মাঝামাঝি এমন একটি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে যাঁদের যৌনতার সংজ্ঞাকে ধরাবাঁধা কোনও ছকের মধ্যে ফেলা যায় না। সাদা বা কালোর মাঝামাঝি ধূসর অংশে বিচরণ করে এই গোষ্ঠীটি। ধূসর যৌনতা বা ‘গ্রে সেক্সুয়ালিটি’। ততটা পরিচিত শব্দ না হলেও জেন জ়ি-র মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে। কদাচিৎ অথবা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যৌন আকর্ষণ অনুভব করছেন এঁরা।
সহজ কথায়, এক জন ‘ধূসর লিঙ্গ’-এর ব্যক্তি সম্পূর্ণ রূপে নিষ্কাম নন। তবে তাঁরা বেশির ভাগ মানুষের মতো ঘন ঘন বা তীব্র ভাবে যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন না। গ্রে সেক্সুয়াল শব্দটি প্রথম ২০০৬ সালে ‘অ্যাসেক্সুয়াল ভিজিবিলিটি অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। তার পর থেকে এটি তাঁদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হয়ে উঠেছে, যাঁরা নিষ্কাম ও যৌনতা পছন্দ করার মাঝামাঝি পর্যায়ে অবস্থান করেন।
নিয়মিত যৌন আকর্ষণ অনুভব করা এবং কোনও যৌন অভিজ্ঞতা না থাকা দুই ধরনের মানুষই হঠাৎ করে নিজেদের ধূসর যৌনতার ক্ষেত্রটিতে আবিষ্কার করতে পারেন। আশ্চর্যজনক ভাবে, বহু মানুষই এখন ‘ধূসর’ হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে পছন্দ করছেন। তাঁদের যৌনচাহিদার অনুভূতির কথা সর্বসমক্ষে তুলে ধরতেও দ্বিধা করছেন না।
সমাজমাধ্যম রেডিটে প্রায় ৮ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি সদস্যের একটি গোষ্ঠী রয়েছে। তাঁরা তাঁদের যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং ঘনিষ্ঠতার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সেখানে পোস্ট করছেন। নিজেদের ‘গ্রে সেক্সুয়াল’ হিসাবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন তাঁরা। যৌনতা নিয়ে নিজেদের মতামত ও যৌনচাহিদার কথা ব্যক্ত করেন এখানে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু মানুষের যৌনচাহিদা প্রবল। আবার কিছু মানুষের চাহিদা একেবারেই নেই। তাঁদের মাঝামাঝি পর্যায়ে অবস্থান করেন এই গোত্রের মানুষজন। তাঁদের সম্পর্কে যৌনতা খুব একটা প্রাধান্য পায় না। সঙ্গীর প্রতি খুব একটা যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন না তাঁরা।
তবে কখনও কখনও নির্দিষ্ট পরিস্থিতি এলে তাঁদের যৌনচাহিদা প্রকাশ পায়। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি অথবা নির্দিষ্ট মানসিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে যৌনতা ব্যতীত অন্য কোনও উপায়ে মানসিক ঘনিষ্ঠতা বা আলিঙ্গনের মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করতে ইচ্ছুক হন এঁরা।
নিজেদের যৌনচাহিদার বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকেন গ্রেসেক্সুয়ালিটির নর-নারীরা। তাঁরা খুব স্পষ্ট ভাবেই জানেন, তাঁদের যৌনতার প্রতি আগ্রহ অন্যদের মতো নিয়মিত নয়। সমাজমাধ্যমে তাঁদের চাহিদার বিষয়গুলি সোজাসাপটা ভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছেন।
নতুন প্রজন্মের অধিকাংশ তরুণ-তরুণী গ্রে সেক্সুয়ালিটির তকমাকে তাঁদের যৌন পরিচয়ের জন্য অত্যন্ত সহায়ক বলে চিহ্নিত করেছেন। জেন জ়ি প্রজন্মের এক ইউটিউবার লিখেছেন, এটি মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে যে গ্রে সেক্সুয়াল গোত্রের মানুষ যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন। তাঁরাও যৌনমিলনে আগ্রহী। যৌনতা এবং যৌনতা নিয়ে ফ্যান্টাসি উপভোগ করতে পছন্দ করেন তাঁরা। তবে অনেকের তুলনায় সেগুলির গুরুত্ব তাঁদের কাছে উল্লেখযোগ্য ভাবে কম।
আবার ‘গ্রে সেক্সুয়াল’ গোত্রের একাংশ নিজেদের ‘ডেমিসেক্সুয়াল’ হিসাবেও পরিচয় দেন। তাঁদের দাবি, একমাত্র শক্তিশালী মানসিক বন্ধন তৈরি করার পরেই তাঁরা যৌন আকর্ষণ বা যৌনচাহিদা অনুভব করে থাকেন।
No comments