ঐক্যবদ্ধ জাতি ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কঠিন
ঐক্যবদ্ধ জাতি ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এম. নাজিম উদ্দিন আল-আজাদ বলেন, ঐক্যবদ্ধ জাতি ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতিকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছেন। তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান যেখানে ছোট দলগুলোর যোগ্য নেতাদেরও সামিল করা হবে।মহান মুক্তিযুদ্ধকে একটি সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছয় দফার ভিত্তিতে শেখ মুজিব সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২৫ মার্চের পর রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হলে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাই জাতিকে পথ দেখায়। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্তদের অধিকাংশই ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্য। স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক সেই সেনাবাহিনীকে এখন রাজনীতির মধ্যে জড়িয়ে বিতর্কিত করা হচ্ছে।জুলাইয়ের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানকে বিপ্লব আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য এই বিপ্লব নয়, বরং জাতি একটি মৌলিক রূপান্তর চায়। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের রক্ত শুধু একটি নির্বাচনের জন্য দেওয়া হয়নি, বরং বিচার ব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের মূল ভিত্তি হিসেবে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করতে হবে। নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, রাজনীতিবিদরা বারবার ওয়াদা করলেও তা রক্ষা করতে পারেন না এবং জাতিকে গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। যেমন স্বৈরাচারবিরোধী তিনদলীয় ঐক্যজোটের সমঝোতা সবাই ভঙ্গ করেছে, যা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পরবর্তীতে ক্ষমতার পালাবদলের শক্তি হয়ে ওঠে।তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা মৌলিক পরিবর্তনের একটি অংশ মাত্র। তিনি সতর্ক করে বলেন, আগামী পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না আসলে সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান পাশ করা সম্ভব হবে না। তিনি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আইনকে একটি কালো আইন বলে অভিহিত করেন।তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল পিন্ডির (পাকিস্তান) দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, দিল্লির (ভারত) দাসত্ব করার জন্য নয়। আমাদের বাংলাদেশি পরিচয়কে মনে রাখতে হবে। আমরা বাঙালি বটে কিন্তু আমরা বাংলাদেশি। আমাদের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত হয়ে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সব নাগরিকের বাংলাদেশি পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বাঁচতে হবে।অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় সংস্কার জোটের চেয়ারম্যান মেজর (অব.)আমিন আহমেদ আফসারি। এছাড়া আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদ, সম্মিলিত জাতীয় জোটের চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি, বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নূর (বিএনজেপি) প্রমুখ।
No comments