Adsterra

লোড হচ্ছে...

উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ

 

উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh

অবিভক্ত ভারতে মুসলিম শাসকদের আগমনের বহু আগেই উপমহাদেশে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা আমাদের অনেকের অজানা। সেটি হলো ‘চেরামন জুমা মসজিদ’। মসজিদটি বর্তমান দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের ত্রিচুর জেলার কোডাঙ্গালু তালুকের অন্তর্গত মেথলায় অবস্থিত। ৬২৯ সালে সাহাবি মালিক বিন দিনার (রা.) ওই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটি বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হয়েছে। সময়ের চাহিদানুসারে সম্প্রসারণও করা হয়েছে।

উপমহাদেশের এই প্রথম মসজিদটি নিয়ে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ইন্টারনেট ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চেরামন পেরুমলের রাজধানী কোডাঙ্গালু নৈসর্গিক রূপে আরবসাগরে বিরাজিত। কিংবদন্তি আছে, একদিন চেরামন পেরুমল চন্দ্র স্বপ্নে দেখেন আকাশের চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রাজা তার সভার বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে স্বপ্নের অর্থ জানতে চাইলে, কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। রাজার মনে অস্বস্তি থেকেই যায়। সে সময় ভারতের সঙ্গে আরবের বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক ছিল।

আরব দেশীয় বণিকরা সমুদ্রপথে ভারতে এসে বাণিজ্য করত। রাজার স্বপ্নের কিছুদিন পরই একদল আরব মুসলমান বণিক রাজা চেরামনের সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছায়। রাজা বণিকদের ডেকে তাদের কথা শোনেন এবং বুঝতে পারেন, তার স্বপ্নে তিনি এ ঘটনাটিরই ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। অবশেষে আরব বণিকদের সঙ্গে রাজা পেরুমল এ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। আরব বণিকরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলে রাজা অত্যুৎসাহী হয়ে পড়েন। রাজা পেরুমলের ইচ্ছানুসারে এবং স্থানীয় প্রশাসকদের উদ্যোগে ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে (৫ হিজরি) চেরামন জুমা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মালিক বিন দিনার (রা.) সেই মসজিদের প্রথম স্থপতি ছিলেন।

তিনি তার রাজকার্য কয়েকজনের ওপর অর্পণ করে সুদূর মক্কায় চলে যান। সেখানে গিয়ে রাজা পেরুমল নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। পেরুমল ইসলাম গ্রহণ করে তাজউদ্দিন নাম ধারণ করেন। সেখানে তিনি বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত করেন। ফেরার সময় ওমানের ডুফর নামক স্থানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অন্তিম দিন ঘনিয়ে আসছে বুঝতে পেরে তিনি মালাবারের স্বীয় নিযুক্ত শাসকদের উদ্দেশে পত্র লেখেন। অল্পদিন রোগভোগের পর তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

কিছুদিন পর মালিক বিন দিনার (রা.), মালিক বিন হবিব (রা.) ও তার সঙ্গী-সাথিরা তাজউদ্দিন ওরফে রাজা পেরুমলের পত্রটি নিয়ে কোডাঙ্গালু আসেন এবং স্থানীয় প্রশাসকদের হাতে রাজার পত্রটি তুলে দেন। সেই চিঠিতে রাজা স্বীয় রাজ্যে মসজিদ নির্মাণসহ ইসলাম প্রচারের জন্য প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজা পেরুমলের ইচ্ছানুসারে এবং স্থানীয় প্রশাসকদের উদ্যোগে ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে (৫ হিজরি) ‘চেরামন জুমা মসজিদ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

‘চেরামন জুমা মসজিদ’ একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত একই অবস্থায় ছিল। একাদশ শতাব্দীতে মসজিদটি বর্ধিত করে পুনর্নির্মাণ করা হয়। পরে মসজিদটি বিভিন্ন সময় সংস্কার তথা পুনর্নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে মসজিদটির আয়তন ব্যাপক বর্ধিত করা হয়। মসজিদটির ভেতরে একটি প্রাচীন তেল প্রদীপ আছে, যেটি সর্বদা আলোকময়। ধারণা করা হয়, এটি প্রায় এক হাজার বছর ধরে জ্বলছে। ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফরকালে বাদশাহ সালমানকে মসজিদটির একটি রেপ্লিকা উপহার দেন।

কেরালার অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের মতো এই মসজিদটিও সব ধর্মবিশ্বাসীদের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত। অমুসলমানরাও এই প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদটিতে তাদের সন্তানদের হাতেখড়ি দিয়ে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের কেরালার এই মসজিদটিতে দিনের কিছু কিছু সময় হিন্দুরাও প্রার্থনা করে থাকে। ভারত সরকার জাতিসংঘের সহায়তায় এই মসজিদটিসহ এর আশপাশে বিশাল এলাকাজুড়ে যেসব প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে, সেগুলোকে পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.