সুস্থ জীবনযাপনে কর্মক্ষমতা ও আয়ুষ্কাল বাড়ে
পৃথিবীর ৭০ ভাগেরও বেশি মানুষ নানা ক্রনিক রোগে ভুগছেন। যাদের বেশিরভাগই ওষুধের ওপর নির্ভরশীল। শুধু হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ। ডায়াবেটিসজনিত ও অন্যান্য সমস্যায় মারা যাচ্ছে বাকি মানুষগুলো।দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বা শিশুদের জীবনীশক্তিও শেষ হতে যাচ্ছে। তথ্য বলছে, অ্যালার্জি ইমিউন রেস্পিরেটরি সিস্টেম ইস্যুতে ভুগছে পৃথিবীর ৫৮ ভাগ শিশু। তিনজনের একজন শিশু অটিজম স্পেকট্রাম ডিজিজে আক্রান্ত। এখন টাইপ টু ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।ওবিসিটি বা স্থূলতাজনিত সমস্যায় ভুগছে ২২ ভাগ শিশু। ৯০ ভাগ শিশু ওরাল হেলথ জটিলতায় আছে।তবে আশার কথা হলো, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভার, কিডনি রোগসহ নানা অসংক্রামক ব্যাধি অনেকটাই প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা অনুসরণের মাধ্যমে। সুস্থতার ক্ষেত্রে ওষুধের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর না করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দিতে হবে।কেননা, সুস্থ জীবন যাপনে কর্মক্ষমতা ও আয়ুষ্কাল বাড়ে।রবিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ অডিটরিয়ামে বাংলাদেশস্থ আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টারের (এডব্লিউসি) আয়োজনে এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এডব্লিউসির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মজিবুল হকের নতুন গ্রন্থ ‘সুস্থতার মূলমন্ত্র’ এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল হেলথ২৪-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।এডব্লিউসির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহজাহান খান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. শাহজাহান, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আবুল কালাম আজাদ, চ্যানেল২৪-এর নির্বাহী পরিচালক দিলু খন্দকার, টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার।অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এডব্লিউসির উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইমতিয়াজের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল আলোচক হিসেবে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ দ্য সেন্টার অব ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনের কনসালটেন্ট অধ্যাপক ড. মজিবুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়। অধ্যাপক ড. মজিবুল হক বলেন, ‘আমার দীর্ঘ ১১ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এই বইটি লিখেছি আপনাদের জন্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটা মানুষের কেমন হেলদি লাইফ হওয়া উচিত, কেমন ডায়েট গ্রহণ করা উচিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেছি এই বইয়ে।’মূল প্রবন্ধে ড. মজিবুল হক বলেন, ‘পোলট্রি ডিম, পোলট্রি দুধ ও মাংস আমাদের প্রধান শত্রু। এগুলো যখন ছিল না তখন এত রোগ ছিল না। আমেরিকান এফডিএ এর ডাটা অনুযায়ী, ৭০ ভাগ অ্যান্টিবায়োটিক চলে যাচ্ছে এই ফার্মের মাছ, মুরগি, ডিমের মধ্যে। প্রতিদিন দুই-তিনবার অনিচ্ছাসত্ত্বে ও এসব অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের কারণে পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যাচ্ছে। ফলে আমরা রোগাক্রান্ত হচ্ছি।তাই সচেতন হয়ে সবার আগে দরকার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং সুস্থ জীবনযাপন করা। আজ থেকেই পোলট্রি খাবার বর্জন করে প্রাকৃতিক খাবারের দিকে মনোযোগী হতে হবে। দৈনন্দিন খাবারে শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, ডাল ও আঁশযুক্ত খাবারের ব্যবহার বাড়ানো, তেল-চর্বি ও অতিরিক্ত লবণ-চিনি কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত হেলথ স্ক্রিনিং বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেই এসব রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।স্বাস্থ্যসচিব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান তার বক্তৃতায় বলেন, ‘প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার হলে ব্যয়বহুল চিকিৎসার চাপ যেমন কমবে, তেমনি সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে মানুষের কর্মক্ষমতা ও আয়ুষ্কালও বাড়বে। তাই সবাইকে ন্যাচারাল খাবারদাবারের প্রতি জোর দিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে।
No comments