হজমের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের ঘনিষ্ঠ যোগ
আমরা সাধারণত মন খারাপকে আলাদা করে দেখি—ভাবি এটি কেবল মস্তিষ্কের ব্যাপার। কিন্তু গবেষণা বলছে, আমাদের মানসিক সুস্থতার সঙ্গে পেটের স্বাস্থ্য গভীরভাবে জড়িত। পেটকে বলা হয় ‘সেকেন্ড ব্রেইন’ বা দ্বিতীয় মস্তিষ্ক। হজমতন্ত্র আর মস্তিষ্কের মধ্যে রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ, যা আমাদের মেজাজ, চিন্তা, এমনকি ঘুমের ওপরও প্রভাব ফেলে।
পেট আর মস্তিষ্কের সেতুবন্ধন
আমাদের অন্ত্রে রয়েছে কোটি কোটি স্নায়ু কোষ, যেগুলো ভেগাস নার্ভের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। এই গাট-ব্রেইন অক্ষ মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। পেটের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে উদ্বেগ, বিরক্তি বা হালকা ডিপ্রেশনের মতো সমস্যাও বাড়তে পারে।
প্রোবায়োটিক ও ভালো ব্যাকটেরিয়ার শক্তি
অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত দরকারি। দই, ঘরে তৈরি আচার, কেফির বা ফারমেন্টেড খাবার এসব ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খেলে স্ট্রেস কমে, মেজাজ থাকে চাঙা।
খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব
অতিরিক্ত তেল-মশলা, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি পেটের মাইক্রোবায়োমের ক্ষতি করে। এর ফলে হজমে সমস্যা, গ্যাস, ফাঁপা ভাব থেকে শুরু করে মন খারাপও দেখা দিতে পারে। আঁশ সমৃদ্ধ ফল, সবজি, শস্য এবং পর্যাপ্ত পানি গাট মাইক্রোবায়োমকে সুষম রাখে।
ঘুম ও মানসিক চাপের যোগসূত্র
অল্প ঘুম বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ সরাসরি পেটের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে হজমে গোলমাল ঘটায়। নিয়মিত ঘুম, ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম পেটের ভারসাম্য বজায় রাখে, মানসিক শান্তিও আনে।
সহজ কিছু যত্ন
প্রতিদিনের খাবারে আঁশযুক্ত শাকসবজি ও ফল রাখুন।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
চাপ কমাতে ধ্যান বা মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন।
সুস্থ মন পেতে শুধু মস্তিষ্ক নয়, পেটের দিকেও নজর দিতে হবে। হজমতন্ত্র ভালো থাকলে মস্তিষ্কও পায় সঠিক সংকেত, মেজাজ থাকে স্থির ও আনন্দময়। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন শুরু হোক প্রতিদিনের প্লেট থেকেই।
No comments