Adsterra

লোড হচ্ছে...

সুদৃঢ় পরিবারকাঠামো গড়ায় ইসলামী দিকনির্দেশনা

সুদৃঢ় পরিবারকাঠামো গড়ায় ইসলামী দিকনির্দেশনা,ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh

আজকের আধুনিক সমাজে পরিবার যেন এক অচেনা আবহে ভেসে বেড়াচ্ছে। একসময় যা ছিল শান্তি, ভালোবাসা ও আত্মিক সান্ত্বনার কেন্দ্র, সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে তা হয়ে উঠছে টানাপড়েন, বিবাদ ও বিচ্ছেদের দুঃসহ দৃশ্যপট। ঘটছে বিবাহবিচ্ছেদ, দেখা দিচ্ছে পারিবারিক কলহ, মানবিক প্রাপ্তিটুকু থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন অবহেলিত মা-বাবা। এই সমস্যাগুলো শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, বরং সামাজিক সুস্থতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।

হুমকির মুখে পড়ছে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, একাকিত্বে জীবন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধরা আর ছিন্ন হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন।

অথচ ইসলাম পরিবারকে শুধু সামাজিক কাঠামো হিসেবে দেখেনি, বরং এটিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে মানবজীবনের মূল কেন্দ্র হিসেবে। পবিত্র কোরআন এ বিষয়ে বলছে : ‘তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।’ (সুরা : রোম, আয়াত : ২১) এই আয়াত পরিবারের মূল ভিত্তি ‘ভালোবাসা, দয়া ও শান্তি’ প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেয়।

তবে আমাদের সমাজে দেখা যায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা হারিয়ে যাচ্ছে, ছোট ছোট মতবিরোধ অশান্তিতে রূপ নিচ্ছে এবং ক্ষীণ হয়ে আসছে আত্মীয়তার বন্ধন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের জন্য সর্বোত্তম; আর আমি আমার পরিবারের জন্য তোমাদের সবার মধ্যে সর্বোত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৫)

এই হাদিস স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে প্রকৃত মহত্ত্ব অর্জিত হয় পরিবারকে সম্মান, ভালোবাসা ও যত্ন প্রদানের মাধ্যমে।

পরিবার ভাঙনের কিছু কারণ

আজকের পরিবার ভাঙনের পেছনে রয়েছে নানা কারণ। এর মধ্যে আছে ভোগবাদী জীবনধারা, যা ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার অবতারণা করছে এবং পারস্পরিক ভালোবাসাকে খর্ব করছে। রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব, যেখানে সম্পর্ককে অবহেলার মতো সংকট তৈরি হয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে অবিশ্বাস। সোশ্যাল মিডিয়ার অশ্লীল কনটেন্ট মানসিক দূরত্ব তৈরি করছে পরিবারে। অনেক অর্থনৈতিক চাপ পারিবারিক সম্পর্ক দুর্বল করছে। দৈনন্দিন জীবনের আর্থিক সংকট ও কর্মব্যস্ততা একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

আবার পরিবারের মূল কেন্দ্রবিন্দু মা-বাবার ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত অবহেলা ও সন্তান লালন-পালনে দায়িত্বহীনতাও সম্পর্কের টানাপড়েন বৃদ্ধি করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণও পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে দুর্বল করছে।

ইসলামে পরিবারের বন্ধন সুদৃঢ়করণের সমাধান

ইসলাম পরিবারের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুষম সমাধান দিয়েছে। নিম্নে সেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তুলে ধরা হলো

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ভিত্তি : ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে একে অন্যের ‘পোশাকস্বরূপ’ ঘোষণা করেছে। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৭) অর্থাৎ পোশাকের মতো তারা একে অপরকে রক্ষা করবে, আচ্ছাদন দেবে এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে।

মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব : আল্লাহ মা-বাবার প্রতি উত্তম আচরণকে নিজের ইবাদতের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। (সুরা : ইসরা, আয়াত : ২৩) যাতে পরিবারের মূল কেন্দ্র বৃদ্ধ মাতা-পিতার প্রতি সম্মান, দয়া ও ভালোবাসা প্রকাশের আবশ্যকতা প্রতীয়মান হয়েছে।

সন্তানের লালন-পালন : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই অভিভাবক এবং প্রত্যেকেই তার অধীনদের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৩৮) এখানে সন্তানকে উত্তম শিক্ষা ও আদব দিয়ে গড়ে তোলার ব্যাপারে মা-বাবার দায়বদ্ধতার কথা বিবৃত হয়েছে।

বিবাহবিচ্ছেদে সংযম : ইসলাম বিবাহবিচ্ছেদকে বৈধ করলেও একে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় বৈধ কাজ হিসেবে বিবেচনা করেছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৮) অর্থাৎ এটি শেষ অবলম্বন ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়।

পরিবারে ভাঙন শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবসান নয়, বরং এটি সমাজের ভিত্তি নড়বড়ে করে দেয়। ইসলামের নির্দেশনা হলো ভালোবাসা, ধৈর্য, দায়িত্বশীলতা ও আল্লাহভীতি দিয়ে পরিবারকে সুদৃঢ় করা। নবী (সা.) প্রদত্ত শিক্ষাগুলো ঘরে বাস্তবায়ন করলে সমাজে শান্তি ফিরবে, পারিবারিক বন্ধন পুনর্গঠিত হবে এবং ভাঙনের দুঃখজনক প্রবণতা হ্রাস পাবে। পরিবার তখন সত্যিই হয়ে উঠবে মমতার, ভালোবাসার এবং নান্দনিকতার আশ্রয়স্থল।

No comments

Powered by Blogger.