Adsterra

লোড হচ্ছে...

বেলুচিস্তানে বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, কী আছে তাতে

 

বেলুচিস্তানে বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, কী আছে তাতে, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,

৪ জুন বেলুচিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ ‘সন্ত্রাসবিরোধী (বেলুচিস্তান সংশোধনী) আইন-২০২৫’ নামে একটি আইন পাস করেছে। এই আইন প্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য ব্যাপক ক্ষমতা এনে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিনের সহিংস সংকট মোকাবিলায় কার্যকর কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না সেখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাই এই ধরনের কঠোর আইনকেই হাতিয়ার হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।

তবে প্রশ্ন উঠছে, এই আইনের মাধ্যমে কি আদৌ সমস্যার সমাধান সম্ভব, না কি আগুনে ঘি ঢালা হবে? এই আইন মানবাধিকার গোষ্ঠী, আইনি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, এটি এই অঞ্চলে দমন-পীড়ন ও অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।


আইনটিতে কী বলা হয়েছে ? 

নতুন আইন অনুযায়ী, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং আইএসআইসহ সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আদালতে হাজির না করেই ৯০ দিন পর্যন্ত যে কাউকে আটক করতে পারবে। এটি শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে করা যাবে এবং এর জন্য বিচারিক তদারকি বা প্রক্রিয়ার কোনো প্রয়োজন হবে না।

পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ তদন্ত দলকে (জেআইটিএস) কারোর বিরুদ্ধে আটকাদেশ জারি করা, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির মতাদর্শগত প্রোফাইল তৈরি করা এবং পূর্বানুমতি ছাড়াই তল্লাশি ও জব্দ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এখন বেসামরিক তদারকি প্যানেলেও (civilian oversight panels) আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করবে।

সম্প্রতি বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক দমন-পীড়নের কারণে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতেই নতুন এ আইন পাস করা হলো।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আড়ালে বেলুচিস্তানে কী ঘটছেভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আড়ালে বেলুচিস্তানে কী ঘটছে


কেন এ আইন বিতর্কিত ?

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই আইন বেসামরিক পুলিশিং ও সামরিক অভিযানের মধ্যকার সীমানা অস্পষ্ট করে দিয়েছে। এর ফলে ব্যাপক নজরদারি এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের পথ তৈরি হবে, বিশেষ করে বেলুচ জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের নিশানা করা হতে পারে।

পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থা এই আইনটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে পাকিস্তানের সংবিধানের ১০ অনুচ্ছেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) মতো সাংবিধানিক সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।


                          ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বেলুচিস্তানের বর্তমান প্রেক্ষাপট

বেলুচিস্তানে কয়েক দশক ধরে ‘এনফোর্সড ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স’ বা বিনা বিচারে গুমের ঘটনা সেখানকার মানুষকে তাড়া করে ফিরছে। অসংখ্য পরিবার এখনো নিখোঁজ প্রিয়জনদের খোঁজ করছে, যাদের মধ্যে কিছু মানুষের ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কোনো খোঁজ নেই। অভিযোগ রয়েছে, তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতেই অপহৃত হয়েছে।

সন্দেহ হলেই বেলুচদের ৯০ দিন আটক রাখতে পারবে পাক সেনা ও আইএসআইসন্দেহ হলেই বেলুচদের ৯০ দিন আটক রাখতে পারবে পাক সেনা ও আইএসআই

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই নতুন আইন কার্যকরভাবে সেই পুরোনো অন্যায়গুলোকেই বৈধতা দেবে। তাঁদের মতে, নতুন এই আইনের ফলে বেলুচিস্তান এখন ‘বৈধ আটক অঞ্চলে’ (legalised detention zone) পরিণত হবে।

স্থানীয় নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী বেলুচ ইয়াকজেহতি কমিটি (বিওয়াইসি) এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা এটিকে বেসামরিক জীবনে সামরিকীকরণের একটি পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে।

বিওয়াইসি বলেছে, ‘এই আইন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ও স্বেচ্ছাচারী আটক থেকে সুরক্ষার মতো মৌলিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। আধুনিক ইতিহাসে অন্ধকার শাস্তির কৌশলকে প্রতিফলিত করে, যার মাধ্যমে নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এবং চীনে উইঘুর মুসলিমদের আটক রাখা অন্তর্ভুক্ত।’


পাকিস্তান সরকারের বক্তব্য

তবে, পাকিস্তান সরকার এই আইনটিকে সমর্থন করেছে এবং যুক্তি দিয়েছে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান জোরদার করার জন্য এটি অপরিহার্য। প্রাদেশিক এক মুখপাত্র বলেছেন, এই বিলটি কেবল রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িতদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। আইন মেনে চলা নাগরিকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

No comments

Powered by Blogger.