যেভাবে আলোচনায় আসেন ওসমান হাদি
ভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জুলাই আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ ওসমান হাদির রাজনৈতিক অবস্থান এবং তার তীব্র ভাষার বক্তব্যগুলোও সামনে আসছে।
শরীফ ওসমান বিন হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকার জন্য তিনি পরিচিতি পান।
হাদির গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে, বাবা ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায় হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু, পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এক সময় ইংরেজি শেখার কোচিং সেন্টার সাইফুরস এ শিক্ষকতা করেছেন হাদি। সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করছিলেন বলে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা জানিয়েছেন।
মাদ্রাসায় পড়ালেখা করায় এবং ভাষা ও পোশাকের কারণে তিনি শিবির কি না, সেই সন্দেহ অনেকে প্রকাশ করতেন। তবে তার সহকর্মীদের দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না হাদি; তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করতেন, একাধিক বইও লিখেছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ওসমান হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। ‘সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’ সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে শিবির নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকে ভোট করে ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার ওসমান হাদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বলেন, “এই রায় পুরো পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে।”
গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যদি ‘পুরনো ধারায়’ রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না।
বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীরও সমালোচনা করেছে হাদি। এর বাইরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা এবং দৃশ্যত পরিবর্তনের ঘাটতির সমালোচনা করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন।
চলতি বছর এনসিপির ডাকা মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসুচিতে সংঘর্ষের পর হাদি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন, যা আলোচনার জন্ম দেয়।
পরে বিতর্কের মুখে তিনি তার গালিকে ‘মুক্তির মহাকাব্য’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
গত নভেম্বর মাসে হাদি নিজের ফেইসবুক পেইজে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাকে ফোন এবং মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে, তার বাড়িতে আগুন দেওয়া ও তার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকরা তাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখছে। ‘জীবননাশের আশঙ্কা’ সত্ত্বেও তিনি ‘ইনসাফের লড়াই’ থেকে পিছিয়ে যাবেন না।
সম্প্রতি মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন হাদি। সেজন্য প্রতি শুক্রবারে তিনি জনসংযোগ করতেন।
হাদির একজন সহযোদ্ধা বলেন, জুমার নামাজের পর মসজিদে তাদের লিফলেট বিলি কর্মসূচি ছিল। কথা ছিল লিফলেট বিলি শেষে সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়ে দুপুরের খাবার খাবেন, আলোচনা করবেন। এর মধ্যেই হাদির ওপর হামলার খবর আসে।
পুলিশ বলছে, জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
চিকিৎসকের বরাতে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, “ওসমান হাদিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।”
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ইসরাফিল বলেন, “হাদী ভাই রিকশায় ছিলেন মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। হাদী ভাই চিকিৎসাধীন রয়েছে সবার কাছে দোয়া চাই।”
তাকে গুলি করার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন নাসির। এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “তফসিল ঘোষণার ঠিক পরের দিনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে প্রার্থী ও ভোটারদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমি শরীফ ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।”


No comments