Adsterra

লোড হচ্ছে...

সিসিইউ, আইসিইউ, ভেন্টিলেশন— কোন পরিস্থিতিতে রোগীকে কোথায় নেওয়া হয়?

ICU, CCU, HDU, লাইফ সাপোর্ট, ভেন্টিলেশন, রোগী রেফার, হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট, করোনারি কেয়ার ইউনিট, চিকিৎসা প্রক্রিয়া, হাসপাতাল পরিচর্যা

আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ, লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশন—এই শব্দগুলো আমরা শুনে থাকলেও সবাই কি বুঝি এগুলো আসলে কী? কোন পরিস্থিতিতে রোগীকে কোথায় নেওয়া হয়?
শারীরিক অবস্থার কোন পর্যায়ে রোগীকে ডাক্তার কোথায় রেফার করেন, সেখানে কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয় এগুলো নিয়ে অস্পষ্টতা যেমন আছে, আবার ভুল ধারণাও রয়েছে।

এইচডিইউ বলতে কী বোঝায়?
এইচডিইউ–এর পূর্ণরূপ ‘হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট’। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ না, আবার স্বাভাবিকও না, অতিরিক্ত মনিটরিং প্রয়োজন— এমন অবস্থায় রোগীকে এইচডিইউতে পাঠানো হয়।
ওয়ার্ড বা কেবিন এবং আইসিইউ-এর মাঝামাঝি যে অবস্থা সেটি হলো এইচডিইউ।
রোগীর অবস্থার পরিমাপ হয় ‘ভাইটালস’ দেখে। যেমন হার্ট রেট, রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে গেছে কি না, এসিডের পরিমাণ কী রকম, লবণের মাত্রা, ইউরিন আউটপুট ইত্যাদি। এসব যখন অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে তখন প্রয়োজন হয় বিশেষ পর্যবেক্ষণের।
ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, ভাইটালসগুলো যখন এলোমেলো হয় তখন কিছু সার্টেইন ক্রাইটেরিয়া থেকে বুঝি রোগীর স্পেশাল মনিটরিং লাগবে, সেই অনুযায়ী তাকে লেভেল–১ বা লেভেল–২ কেয়ারে পাঠানো হয়।উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরুন কারো জ্বর হয়েছে। সেই জ্বরের পেছনে অনেকগুলো কারণ হতে পারে। যেমন, জ্বরটা ইনফেকশন থেকে হতে পারে, টাইফয়েড থেকে হতে পারে, সেপসিস (কোনো একটা জায়গায় হয়ত ঘা হয়েছে বা পচন হয়েছে, সেখান থেকে হয়ত পুরো শরীর ছড়িয়ে পড়ছে) এর কারণেও হতে পারে।
ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, যদি এমন কোনো জটিল সমস্যা থেকে জ্বরটা আসে তার কারণে ভারসাম্য হারাতে পারে ‘ভাইটালস’গুলো।
তখন অবস্থা বুঝে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রোগীকে কেবিন বা ওয়ার্ডেই রাখা হবে, নাকি এইচডিইউতে পাঠানো হবে।

রোগীকে কখন সিসিইউতে নিতে হয়?
সিসিইউ-এর পূর্ণরূপ ‘করোনারি কেয়ার ইউনিট’। মূলত হৃদরোগজনিত জরুরি অবস্থা যেমন, হার্ট অ্যাটাক, অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম এসব ক্ষেত্রে রোগীকে সিসিইউতে রেফার করা হয়।
ডা. আবিদা সুলতানা, যে ধরনের হার্ট পেশেন্টকে কেবিন বা ওয়ার্ডে রাখলে যেকোনো মুহূর্তে হার্ট ডেটরিয়েট করতে পারে, হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তখন আমরা তাকে সিসিইউতে রাখি।
তবে সঙ্গে যদি আরো কোনো জটিলতা থাকে, মাল্টিপল অর্গান সাপোর্ট দরকার হয় যেমন, ফুসফুস, কিডনি বা ব্রেন, পেশেন্টকে তখন প্রয়োজন বুঝে আইসিইওতেও রেফার করা হতে পারে।
তবে সহজ করে বললে শুধু হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতার পেশেন্টদের জন্য সিসিইউ।

আইসিইউ কী?
আইসিইউ-এর পূর্ণরূপ ‘ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’। কোনো কোনো হাসপাতালে এটিকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটও বলা হয়। রোগীর যখন একাধিক অঙ্গের জন্য সাপোর্ট প্রয়োজন হয়, সেই অবস্থার জন্য আইসিইউ।
কোনো রোগী হয়ত এইচডিইউতে আছে, কিন্তু তাও তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে, যেমন, কিডনি সমস্যা এমন পর্যায়ে যে তাকে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে; অথবা ফুসফুস প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন নিতে পারছে না, কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে তখন তাকে আইসিইউতে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব অঙ্গ সক্রিয় রাখার জন্য বাহ্যিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া হয়। এমন নয় যে পেশেন্টকে আইসিউতে আনার আগে তাকে এইচডিইউতেই থাকতে হবে।
পেশেন্ট সরাসরি কেবিন বা ওয়ার্ড থেকে এমনকি ইমার্জেন্সিতেও অনেক সময় এমন পেশেন্ট পাওয়া যায় যাদের তৎক্ষণাৎ আইসিইউ-এর সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। নতুবা তারা খুব দ্রুত মৃত্যুর মুখেও পড়তে পারেন।

বিশেষায়িত ইউনিট
এইচডিইউ-এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাগ দেখা যায়। যেমন : কার্ডিয়াক এইচডিইউ আছে, মেডিক্যাল এইচডিইউ আছে।
আর পূর্বে আইসিইউ-এর ক্ষেত্রে বিশেষায়িত কোনো ইউনিট না থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউ-এরও কিছু বিশেষায়িত ইউনিট দেখা যাচ্ছে। যেমন : সার্জিক্যাল আইসিইউ, মেডিক্যাল আইসিইউ, নিউরো আইসিইউ, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, নিওনাটাল আইসিইউ, রেসপিরেটরি আইসিইউ ইত্যাদি। লিভার আইসিইও নতুন করে চালু হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।
তবে সিসিইউ যেহেতু শুধু হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত রোগীদের জন্য, এর আর কোনো বিশেষায়িত ইউনিট নেই।

ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট
খুব সংকটময় অবস্থায় শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্রম সচল রাখার প্রক্রিয়া হলো ভেন্টিলেশন। সাধারণ মানুষ যেটাকে বলে লাইফ সাপোর্ট।
ডা. আবিদা সুলতানার মতে, যে পেশেন্টের ফুসফুস খারাপ, অক্সিজেন নিতেই পারছে না, অথবা যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যাওয়া উচিত তা একেবারেই বের করতে পারছে না, তখন তাকে যে সাপোর্ট দেওয়া হয়, সেটাই লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশন।
কিডনির সমস্যা গুরুতর হলেও চিকিৎসা দেওয়ার মতো সময়টা পাওয়া যায়। কিন্তু যদি শ্বাসযন্ত্র ঠিকভাবে কাজ না করে, তখন চিকিৎসা শুরু করার মতো সময়ও পাওয়া যায় না। চার থেকে আট মিনিটের মধ্যে রোগীর ব্রেন পার্মানেন্টলি ড্যামেজ হওয়া শুরু করে।
এমন মুহূর্তে শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্রম সচল রাখার মাধ্যম এটি। যেহেতু এটার গুরুত্ব অনেক বেশি, তাই এটিকে লাইফ সাপোর্টও বলেন অনেকে।

লাইফ সাপোর্ট মানেই কি নিশ্চিত মৃত্যু?
লাইফ সাপোর্ট মানেই নিশ্চিত মৃত্যু—এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে।
ডা. আবিদা বলেন, আমাদের আইসিইউতে এই মুহূর্তে একজন ক্যান্সারের পেশেন্ট আছেন, যার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল। কিডনি ফেইল করেছে। সঙ্গে বড় নিউমোনিয়া। পেশেন্টের এটেন্ডেন্টকে যখন বললাম লাইফ সাপোর্টে নেওয়া লাগবে, তারাও একই কথা বললেন— লাইফ সাপোর্টে দিলে তো কেউ ফেরে না! কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়।
তার মতে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশন একটা চিকিৎসা প্রক্রিয়া। যখন এই প্রক্রিয়া এসেছে, তা রোগীকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। এটা একটা ট্রিটমেন্ট অপশন।
লাইফ সাপোর্ট মানেই নিশ্চিত মৃত্যু—এই ধারণার পেছনে দুটি বিষয়কে দায়ী করেছেন তিনি। এক. আর্থিক সক্ষমতা, দুই. আইসিইউ বেডের স্বল্পতা।

এই দুইটি বিষয়ের কারণে চিকিৎসকরা ‘টার্মিনাল স্টেজ’ এ গিয়ে রোগীকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশন রেফার করেন। অথচ সেই রোগীয় হয়ত আরো দুইদিন আগে এই সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল।
আর্থিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন সময়ে রোগীর এটেন্ডেন্ট কনসেন্ট দেন, যখন তাকে ফেরানো কঠিন হয়ে যায়।
ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, দেশের অনেক হাসপাতালে এমন আইসিইউ আছে যারা মিনিমাম কোয়ালিটিও মেনটেইন করে না। আন্তর্জাতিক মান মেনে চলে না। তাদের কথা আলাদা।
তবে ঢাকার একটি হাসপাতালের আইসিইউ-এর গত এক বছরের হার উল্লেখ করে ডা. আবিদা সুলতানা জানান, ৬০-৭০ শতাংশ পেশেন্ট ফিরে এসেছেন তাদের আইসিইউ থেকে।
তিনি জানান, এমনও হয়েছে যে, এক পেশেন্টকে তিনবার ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি ফিরে এসেছেন।
এখানে ফিরে আসা বলতে মৃত্যু থেকে বেঁচে ফেরার কথা বলা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেক বয়স্ক যারা বেঁচে ফিরেছেন বা যাদের শরীরে আরো কোনো জটিলতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে ‘কোয়ালিটি অব লাইফ’ কম্প্রোমাইজড হয়। অর্থাৎ, শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, আর একই রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবার প্রতিক্রিয়া একই রকম থাকে না। সবার আউটকামও একই রকম থাকে না। বয়স, জেনেটিক্স, রোগের ইতিহাস সবকিছুর ওপর নির্ভর করে একজন রোগী তার চিকিৎসায় কেমন রেসপন্স করবে।

No comments

Powered by Blogger.