%20(1).webp)
গাজায় অবৈধ অবরোধ ভাঙতে অর্ধশতাধিক নৌকা গাজার দিকে যাচ্ছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে মুক্ত এক গাজার। তবে তা কতটা সফল হতে পারবে দখলদার ইসরায়েলদের কারণে তা সময়ের অপেক্ষা। এরই মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী ৩৯টি নৌকা আটক করেছে। এই যাত্রার নাম গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা।গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা, যেটি গ্লোবাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা নামেও পরিচিত। এটি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি গঠিত একটি আন্তর্জাতিক নাগরিক উদ্যোগ। এর লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। ফ্লোটিলার নাম এসেছে সুমুদ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘অটলতা’ বা ‘অবিচল সহনশীলতা’, যা ফিলিস্তিনি জনজীবনের প্রতীকী শব্দ।সুমুদ ফ্লোটিলা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাহাজ বহর, যেটি গাজার মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলের আরোপিত নৌ অবরোধ চ্যালেঞ্জ করে সমুদ্রে যাত্রা করে। এর লক্ষ্য মূলত খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী গাজায় পৌঁছে দেওয়া, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনি সংকটের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা।আগে যেমন ফ্রিডম ফ্লোটিলা নামে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সুমুদ ফ্লোটিলা সেই ধারাবাহিকতারই অংশ-যেখানে অহিংস প্রতিরোধ ও মানবিক সাহায্যের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হয়।সহজ কথায় ফ্লোটিলা বলতে বোঝায় জাহাজ বা নৌযানের একটি ছোট বহর বা সমষ্টি, যেগুলো একসঙ্গে চলাচল করে বা কোনো নির্দিষ্ট সামরিক/কার্যকরী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত সামরিক ক্ষেত্রে ফ্লোটিলা শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি একটি নৌবাহিনীর ছোট ইউনিট, যেখানে কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ, টহল বোট, সাবমেরিন বা সহায়ক জাহাজ থাকে।ফ্লোটিলা একটি বড় ফ্লিট-এর ছোট অংশ। যেমন, একটি দেশের সমুদ্রবাহিনীতে বড় বহরকে ফ্লিট বলা হয়, আর সেই ফ্লিটের ভেতরে ছোট ছোট গ্রুপ থাকে-সেগুলো ফ্লোটিলা। কখনো কখনো বাণিজ্যিক জাহাজ বা মাছ ধরার নৌকাও ফ্লোটিলা আকারে চলাচল করে, অর্থাৎ একসঙ্গে একাধিক নৌযান।অন্যদিকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ছিল সমকালীন গণ-অভিযানগুলোর সবচেয়ে বড়গুলোর এক লক্ষ্য গাজা উপত্যকার ওপর আরোপিত মহাসামুদ্রিক অবরোধ চ্যালেঞ্জ করা ও সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসান্তারার যৌথ আয়োজনে গাজা যুদ্ধের সময় শুরু হয়। ফ্লোটিলায় ৪০টিরও বেশি জাহাজে ৪৪টিরও বেশি দেশের প্রায় ৫০০ অংশগ্রহণকারী যোগ দেন। ইতালীয় কার্গোতে ছিল ৪৫ টন ত্রাণসামগ্রী। এটি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নাগরিক-নেতৃত্বাধীন নৌবহর হিসেবে বিবেচিত।অংশগ্রহণকারীরা এসেছে চারদিকের দেশ থেকে স্পেন ও ইতালি থেকে শুরু করে গ্রীস, তিউনিশিয়া, উত্তর আফ্রিকার ছোট নৌপথ পর্যন্ত। প্রতিটি নৌযানকে একটি ‘কমিউনিটি জাহাজ’ হিসেবে দেখা হচ্ছিল যারা প্রত্যক্ষ মানবিক সামগ্রী বহন না ও করতে পারে, তবে তাদের রাজনৈতিক ও মানবিক সংকেত পাঠানোর স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল।
ফ্লোটিলার মুখ্য বক্তব্য ছিল: গাজায় অবরুদ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য-সহায়তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নজর আকর্ষণ এবং অবরোধকে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। অংশগ্রহণকারীরা বলেছে, তারা অহিংস, নাগরিক-বেসিসের এবং আইনি স্বীকৃতি প্রাপ্য উদ্যোগ চালাচ্ছেন; অপরদিকে ইসরায়েল বলেছে, এই অভিযানকে তারা উস্কানিমূলক ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে এবং প্রয়োজনে নৌ-অভিযান রুখতে আইনগত অধিকার বলবে। এই দুই মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যই আন্তর্জাতিক বিতর্ককে তীব্র করেছে।গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কেবল একটি নৌ-অভিযান নয়, এটি আন্তর্জাতিক নাগরিক কণ্ঠের এক প্রতীক, যেটা প্রশ্ন তোলে যুদ্ধ, অবরোধ ও মানবাধিকার সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সমাজ কীভাবে আচরণ করবে। ভবিষ্যতে একই ধাঁচের অভিযান আন্তর্জাতিক নীতির বিবর্তনকে প্রভাবিত করতে পারে আইনি রেয়ারিং, কূটনৈতিক বন্ধন এবং মানুষের বেসিক অধিকার নিশ্চিত করার উপায়গুলো এসবের উপর এই অভিজ্ঞতার প্রতিক্রিয়া নির্ভর করবে।
ঢাকা ভয়েস/এই
No comments