Adsterra

লোড হচ্ছে...

কল্পনা ও ভালোবাসার মরণফাঁদ

কল্পনা ও ভালোবাসার মরণফাঁদ,ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh

জেনিফার লোপেজ সেই বিরল শিল্পীদের একজন, যিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে গান, অভিনয় ও নাচ। এই তিন ক্ষেত্রেই সমান দাপটের সঙ্গে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের দর্শকের কাছে লোপেজ প্রথম নায়িকা হিসেবে পরিচিতি পান ‘অ্যানাকোন্ডা’ সিনেমা দিয়ে। এরপর কাছাকাছি কয়েক বছরে তাঁর ‘সেলেনা’, ‘আউট অব সাইট’ সিনেমাগুলোও বিপুল জনপ্রিয়তা পায়;যা তাঁকে হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া লাতিন অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। পরবর্তী সময়ে ‘মেড ইন ম্যানহাটান’, ‘শ্যাল উই ড্যান্স’, ‘মনস্টার-ইন-ল’-এর মতো রোমান্টিক কমেডি সিনেমাগুলোতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে। একই সঙ্গে সমান্তরালে চলে তাঁর গানের ক্যারিয়ার। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘অন দ্য ৬’। এরপর ‘জে. লো’, ‘দিস ইজ মি... দেন’, ‘রিবার্থ’ অ্যালবামগুলো গায়িকা হিসেবে তাঁকে সারা বিশ্বে এক অনন্য পরিচিতি এনে দেয়। তাঁর গানের গীতিতে ক্ষমতায়ন, যৌনতা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বিচ্ছেদ সবই উঠে এসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ২০১০-এর পরের বছরগুলোতে গান ও অভিনয়ে মনোযোগ কিছুটা কমিয়ে ব্যবসায়িক উদ্যোগে বেশি মন দেন লোপেজ। তবে এবার আবারও পূর্ণ উদ্যমে নায়িকা হিসেবে ফিরছেন তিনি।

আগামীকাল বিশ্বজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে তাঁর অভিনীত বহুল প্রত্যাশিত সিনেমা ‘কিস অব দ্য স্পাইডার ওম্যান’। মিউজিক্যাল ড্রামা ঘরানার এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন ডিয়েগো লুনা, টোনাটিউহ, টনি ডোভোলানি, জোসেফিনা স্ক্যাগলিওন প্রমুখ। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’-খ্যাত নির্মাতা বিল কনডন।

অন্ধকার কারাগারের গা ঘেঁষে এক অদ্ভুত আলো-ছায়ার খেলা।কাঁটাতারের বেড়ার ওপাশে যেন অন্য এক পৃথিবী, যেখানে বাস্তব আর কল্পনা নিরন্তর একে অপরের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। ঠিক এমনই এক রহস্যময় ও গা-ছমছমে আবহ নিয়ে শুরু হয় ‘কিস অব দ্য স্পাইডার ওম্যান’। সময়টা আর্জেন্টিনার এক সামরিক শাসনামল। গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি নির্মম কারাগার, যেখানে বন্দি দুইজন মানুষ। একজন হলেন ভ্যালেন্টিন, এক আদর্শবাদী রাজনৈতিক আন্দোলনকারী। অন্যজন মোলিনা, এক সমকামী পুরুষ। বাইরের পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এই দুজন মানুষ ধীরে ধীরে, অনিচ্ছা ও আকর্ষণের এক দোলাচলে, এক অদ্ভুত ও গভীর বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে। মোলিনা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে কল্পনার এক জগতে। সেখানে সে মনে মনে রচনা করে একের পর এক সিনেমা। সেই সব সিনেমায় বারবার ফিরে আসে এক রহস্যময়ী নারী। যে নারী অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারিণী অথচ সমানভাবে ভয়ংকর। তাঁর ঠোঁটের হাসিতে যেমন প্রেমের আভাস, তেমনি মৃত্যুর নীরব আমন্ত্রণ। সেই নারীই ইংরিড লুনা, যাকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন জেনিফার লোপেজ।

মোলিনা চোখ বন্ধ করলেই কারাগারের নিষ্ঠুর দেয়াল গলে যায়, খুলে যায় সিনেমার রূপকথার পর্দা। জেনিফার লোপেজের কণ্ঠে তখন বেজে ওঠে ক্লাসিক হলিউড ধাঁচের গান, ঝলমলে পোশাকের ঝিলিক আর নৃত্যের মাদকতাময় তাল। একেকটা দৃশ্য যেন একেকটা স্বপ্ন, যেখানে বাস্তবের করুণ নিঃসঙ্গতা ধুয়ে মুছে যায় রঙিন আলোর সমারোহে। কিন্তু সেই স্বপ্নই একসময় রূপ নেয় বিপজ্জনক বিভীষিকায়। মোলিনা বুঝতে শুরু করে, যে নারী তাঁর কল্পনায় তাঁকে মুক্তি দেওয়ার স্বপ্ন দেখায়, সেই নারীই তাঁর ভেতরে ধীরে ধীরে বুনে দিচ্ছে এক জটিল জাল।ভালোবাসার, আত্মত্যাগের, আর শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর। ঠিক যেমন গল্পের স্পাইডার ওম্যান তাঁর শিকারকে এক মিষ্টি চুম্বনের মাধ্যমেই হত্যা করে। নির্মাতা বিল কনডন এই সিনেমায় নিপুণভাবে মিশিয়েছেন ব্রডওয়ে থিয়েটারের ঐতিহ্য, পুরোনো সিনেমার গ্ল্যামার, আর কারাগারের কর্কশ বাস্তবতা। আর জেলোর গানের সঙ্গে মিশে গেছে বন্দির নিঃশব্দ কান্না, কল্পনার উড়ান আর ভালোবাসার মায়া।

গত সপ্তাহে সানডান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সিনেমাটির বিশ্ব প্রিমিয়ার হওয়ার পর থেকেই এটি আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সমালোচকরা বলেছেন, ‘এ যেন পুরোনো হলিউডের জাদুকে ফিরিয়ে আনা, কিন্তু তা আজকের সময়ের বাস্তবতার গন্ধে মেশানো।’ কেউ কেউ বলছেন, লোপেজের কণ্ঠের গানগুলোতে রয়েছে জীবনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও উত্তাপ, আর তাঁর চোখে এক অদ্ভুত ক্লান্তি, যা একই সঙ্গে সুন্দর ও ভীতিকর। সিনেমার শেষ দৃশ্যে যখন কারাগারের আলো নিভে আসে, আর মোলিনা কল্পনার জগতে চিরতরে হারিয়ে যায়, তখন দর্শকও হয়তো টের পাবে। স্পাইডার ওম্যান আসলে কোনো নির্দিষ্ট নারী নয়, সে হয়তো মুক্তির এক প্রতীক, কিংবা হয়তো ভালোবাসারই এক মরণফাঁদ। ‘কিস অব দ্য স্পাইডার ওম্যান’ তাই শুধু একটি মিউজিক্যাল ড্রামা নয়, এটি মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম ও স্বপ্নের গভীর এক গল্প। যেখানে প্রতিটি চুম্বনই হতে পারে ভালোবাসার শেষ ইশারা, আর প্রতিটি কল্পনা হতে পারে বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন।


আরও পড়ুন  খাওয়ার সময় ফোন বা টিভি দেখলে যেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পার

ঢাকা ভয়েস /এসএস


No comments

Powered by Blogger.