তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে এবার ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির ডাক
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। এবারের কর্মসূচিতে বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার, ক্রেতা-বিক্রেতা, পরিবহন মালিক, শ্রমিক, অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবেন। ওইদিন বেলা ১১টায় নিজের কাজ বন্ধ করে সবাই ১৫ মিনিট নীরব দাঁড়িয়ে থাকবে। থেমে যাবে সব যানবাহন। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ট্রাক, বাস কিংবা ট্রেনের যাত্রী-চালক সবাই নীরবতা পালন করবেন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সব ধরনের কাজ বন্ধ রেখে তিস্তা নদীর অস্তিত্ব রক্ষার এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ক্লাস থেকে বিরত থাকবেন এবং শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, নভেম্বর মাসে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না হলে তিস্তাপারের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবিতে উত্তরের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তিস্তা নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী দুই কোটি মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে নদীর প্রবাহ ও পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে। নদীপারের মানুষের ন্যায্য অধিকারের প্রতীক হিসেবে পালিত হবে ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি । এই ১৫ মিনিটের নীরবতা হবে তিস্তাপারের মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি। এর মাধ্যমে জানানো হবে– ‘তিস্তা বাঁচলে উত্তরবঙ্গ বাঁচবে, তিস্তা বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।’
এর আগে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ জেলার ১১টি স্থানে একযোগে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। এতে লাখো মানুষ অংশ নেন। উপজেলা ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয়।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার নদীর তীরে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে তিস্তাপারের লাখো মানুষ। পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে কর্মসূচিটি একযোগে পালিত হয়। মশাল হাতে অংশগ্রহণকারীরা একযোগে স্লোগান দেন– ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই।’ মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচিতে লালমনিরহাটের তিস্তা সেতুর সংলগ্ন পয়েন্ট ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্ট পাশাপাশি হওয়ায় সেখানে লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত হয়।
এলাকাবাসীর বক্তব্য, জীবিকার অনিশ্চয়তায় তাদের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। নদী রক্ষায় জনগণের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রমাণ করে, তিস্তা ইস্যুটি এখন আর কেবল পরিবেশগত বা অর্থনৈতিক নয়, এটি উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন।
ঢাকা ভয়েস /এসএস
No comments