অগ্নিনৃত্যে মাতলো হংকং : ঐতিহ্যের আগুনে আলোকিত তাই হ্যাং এলাকার রাস্তাঘাট
রবিবার হংকংয়ের তাই হ্যাং এলাকার রাস্তায় ফিরে এলো শতাব্দী প্রাচীন এক বিস্ময়কর ঐতিহ্য—অগ্নি-নৃত্য উৎসব। মধ্য-শরৎ উৎসবকে ঘিরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, হাজারো মানুষ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশাল অগ্নিময় ড্রাগনের fচারপাশে। দশ হাজার ধূপকাঠি জ্বালিয়ে তৈরি করা এই অগ্নি-ড্রাগনকে নাচিয়ে বেড়াচ্ছেন শিল্পীরা। ধূপকাঠির আগুনে ঝলমল করা এই ড্রাগনের নৃত্য দেখতে সত্যিই অভিভূত হয় দর্শকরা।
এই বিশাল কাঠামো বহন করতে লাগে তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী। তারা সংকীর্ণ গলিপথ দিয়ে ড্রাগনটিকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান, আর চারপাশে উল্লাসে মেতে ওঠে জনতা। নৃত্য শেষে ড্রাগনের শরীর থেকে ধূপকাঠি খুলে দর্শকদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয়—সৌভাগ্য ও আশীর্বাদের প্রতীক হিসেবে।
এই ঐতিহ্যটি হংকংয়ের জাতীয় অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। এটি শুধু উৎসব নয়, বরং সমাজের ঐক্য ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুন ট্রাম্পের চোখে নেতানিয়াহু ‘বোঝা’ হয়ে উঠছেন — ইসরায়েলি বিশ্লেষকের মন্তব্য
একজন নৃত্যশিল্পী বলেন, “গত বছর আমরা প্রবল বৃষ্টির মধ্যে নেচেছিলাম। আর এবার ঝড়ো বাতাসের মাঝেও নাচ চলেছে। এ অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা।”
আরেকজন বলেন, “এটি আমার তৃতীয় বছর। শুরুতে ভালো লাগে, কিন্তু মাঝামাঝি এসে শরীর ভেঙে যায়। শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে হয়। তবে শেষে মনে হয়, এই কষ্টটাই সবচেয়ে মহিমান্বিত।”
এই অনন্য নৃত্য দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু দর্শক আসেন। এক বিদেশি পর্যটক বলেন, “আমি অভিভূত। আগুনে আলোকিত এই ড্রাগনের নাচ সত্যিই অনন্য। ভিড়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, সেই উত্তাপ আর উচ্ছ্বাস—সব মিলিয়ে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।”
ঐতিহ্যটির সূচনা ১৮৮০ সালে, যখন তাই হ্যাং ছিল একটি ছোট মৎস্যগ্রাম। তখন গ্রামে এক ভয়াবহ মহামারী এবং এক বিশাল অজগর সাপের উপদ্রব দেখা দেয়। গ্রামবাসীরা তখন খড় ও বাঁশ দিয়ে এক বিশাল ড্রাগন তৈরি করে, সেটিতে ধূপকাঠি লাগিয়ে তিন দিন তিন রাত ধরে নাচ প্রদর্শন করেন। আশ্চর্যভাবে মহামারী থেমে যায়। সেখান থেকেই এই অগ্নিনৃত্যের সূচনা।
এ বছরও ৫ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিন রাত ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই নৃত্য। আগুন, ঐতিহ্য ও মানুষের ঐক্যের প্রতীক হয়ে জ্বলছে হংকংয়ের আকাশ।
ঢাকা ভয়েস /এসএস
No comments