Adsterra

লোড হচ্ছে...

জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ শতাংশ

জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ শতাংশ, ,ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৫ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এটি গত এপ্রিলে প্রকাশিত সংস্থার পূর্বাভাসের চেয়ে কিছুটা কম। তখন তারা ৫ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। এডিবি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য কম হলেও গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের হওয়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে এটি ১ শতাংশীয় পয়েন্টেরও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে, গত অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এডিবি আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির নতুন প্রক্ষেপণ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পাল্টা শুল্কের প্রভাবে অনেক দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমছে। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশ ভালো। এ প্রসঙ্গে এডিবি বলেছে, গত এপ্রিলে প্রকাশিত প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন আর নতুন প্রাক্কলনের ব্যবধান খুব সামান্যই। যতটুকু কম তার পেছনে বড় কারণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এবং কঠোর রাজস্ব ও আর্থিক নীতির প্রভাব বিবেচনা। বিনিয়োগে এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। প্রতিবেদনে কিছু ঝুঁকির কথা বলা হয়। এর মধ্যে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, মার্কিন পাল্টা শুল্কের কারণে বাণিজ্য অনিশ্চয়তা, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানান খাতে ব্যয়জনিত মূল্যস্ফীতির চাপ ও আর্থিক খাতের নাজুক পরিস্থিতি।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে এডিবি আগের প্রতিবেদন থেকে নতুন প্রতিবেদনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এপ্রিলের মতো ৮ শতাংশেই স্থির রাখা হয়েছে মূল্যস্ফীতির হার। মূল্যস্ফীতির এ হার গত অর্থবছরের চেয়ে অনেক কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি হয় ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল।

এডিবির প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির পেছনে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ চেইনে প্রতিবন্ধতা ও টাকার মূল্যমান কমার কথা উল্লেখ করা হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা খাতে ব্যয়জনিত মূল্যস্ফীতির চাপ থাকতে পারে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, আগামীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন পাল্টা শুল্কের প্রভাব কী হতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা এখনও কাটেনি। এরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য খুব জরুরি। প্রতিবেদনের সুপারিশেও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এডিবির পক্ষ থেকে।

এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপে পড়তে পারে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।

মার্কিন শুল্কের প্রভাব

মার্কিন পাল্টা শুল্ক প্রসঙ্গে এডিবির প্রতিবদেনে বলা হয়, বাড়তি ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে, যা জিডিপির ওপরও প্রভাব রাখবে। নতুন শুল্কের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর গড় শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। এতে তৈরি পোশাকের শুল্ক ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। এ ছাড়া ম্যানমেইড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তুর সোয়েটারের মতো পণ্যের ওপর শুল্ক ৫২ শতাংশ পর্যন্ত। এটি কর্মসংস্থান বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের ওপর আনুপাতিক হারে বেশি প্রভাব ফেলবে। যদিও ভারত কিংবা চীনের ক্ষেত্রে মার্কিন শুল্ক আরও বেশি। এই দুই দেশে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির চাহিদা কমাতে পারে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের রপ্তানি কঠোর প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে। পোশাকের দাম কমাতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা বাধ্য হবে, যদি না তারা বাজারে বৈচিত্র্য আনতে পারে। এ ছাড়া নতুন বাণিজ্য চুক্তির সুযোগ খোঁজা এবং রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রতিবেদনে এডিবি বলেছে, চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হবে ভোগ ব্যয়। মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থাকা এবং রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে বেসরকারি ভোগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে সরকারি ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে। কঠোর আর্থিক ও রাজস্বনীতি বেসরকারি ও সরকারি উভয় বিনিয়োগকেই ব্যাহত করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণপত্রের ওপর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ফলে আমদানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান বাজারগুলোতে প্রত্যাশিত পুনরুদ্ধারের সঙ্গে রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক দেশটিতে রপ্তানির গতি ধীর করতে পারে। রপ্তানি খাতের সার্বিক এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.