Adsterra

লোড হচ্ছে...

যেসব কারণে পারফেকশনিস্টরা মানসিক চাপে থাকেন

 

যেসব কারণে পারফেকশনিস্টরা মানসিক চাপে থাকেন,  ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, bangla news, bangladeshi news, today updat

কোনো কাজ নিখুঁতভাবে করতে, মনোযোগ দিতে এবং সেখান থেকে সেরা ফল অর্জন করার জন্য পারফেকশনিস্টরা প্রায়শই প্রশংসিত হন। কিন্তু একজন পারফেকশনিস্ট কাজে-কর্মে যতটা নিখুঁত, তাঁর মানসিক স্থিতিশীলতা কিন্তু ততটাই কম। কারণ, সেরা ও ত্রুটিহীন কাজ করতে গিয়ে মানসিকভাবে তাঁরা নানান চাপ, উদ্বেগ, এমনকি বিষণ্নতায় ভোগেন। জেনে নিন, নিখুঁত মানুষ হওয়ার চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও যেসব কারণে পারফেকশনিস্টরা মানসিক চাপে থাকেন।


অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা

সব কাজেরই সফল পরিপূর্ণতার লক্ষ্যে থাকেন বলে পারফেকশনিস্টরা প্রায়ই অতিরিক্ত চিন্তাভাবনার চক্রে আবর্তিত হতে থাকেন। ক্রমাগত কী হলে কী হবে, সেই চিন্তা ঘোরে তাঁদের মাথায়। এ ছাড়া যদি কাজগুলো ঠিকঠাক না হয়, তাহলে তার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকেন পারফেকশনিস্টরা। এই ভাবনাগুলো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়। ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মাত্রা বেড়ে যায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

এই অতিমাত্রার চিন্তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? নিজের কাজ ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করুন। এই ছোট অংশগুলো একটি একটি করে পূরণ করুন। অর্থাৎ একের পর দুই নিয়ে ভাবুন এবং দুই নম্বর কাজটি শেষ করুন ভালোভাবে। একেবারে ১০ নম্বর কাজটি কখন শেষ হবে বা পুরো কাজটি ঠিকভাবে শেষ হলো কি না, তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হলে নিজেই চাপে থাকবেন।


নিজেকে অনবরত অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা

অনেক পারফেকশনিস্ট অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে নিজের মূল্যায়ন করেন। তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে অন্যদের অর্জনের সঙ্গে নিজের কাজ এবং গুণগুলোকে পেছনের কাতারে ফেলে দেন। এতে করে আত্মবিশ্বাস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এ কারণে অনেকে হীনম্মন্যতায় ভোগেন।


উত্তরণের উপায় খুঁজছেন?

অন্য়ের অর্জনকে সাধুবাদ জানান। এর পাশাপাশি নিজের অবস্থান অনুযায়ী নিজে কী করতে পারছেন, সেটার মূল্যায়ন করুন। প্রয়োজনে ডায়েরিতে হিসাব রাখতে পারেন, এক মাসে আপনি কোন কোন কাজ ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছেন এবং এ বিষয়ে আপনি নিজে কতটা সন্তুষ্ট হয়েছেন।


ব্যর্থতা ও লোকলজ্জার ভয়

পারফেক্টশনিস্টরা ব্যর্থতাকে প্রবলভাবে ভয় পায়। তাঁরা ব্যর্থতাকে বিপর্যয়কর ও লজ্জার কারণ হিসেবে দেখেন। এ মনোভাব ব্যক্তি হিসেবে নিজেদের মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই চরম ভয় কেবল মানসিক চাপ সৃষ্টি করে না; বরং সাধারণ উদ্বেগজনিত ব্যাধির মতো আরও গুরুতর অবস্থার দিকেও ধাবিত করতে পারে।

ব্যর্থতা সম্পর্কে ধারণা পাল্টে নিন। চলার পথ অনেকটাই সহজ হয়ে উঠবে। ব্যর্থতাকে জীবন পরিবর্তনকারী বিপর্যয়ের পরিবর্তে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখুন। এতে মানসিক শক্তি মিলবে।


পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর চাপ

‘পরিপূর্ণতাবাদ’ ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। পারফেকশনিস্টরা পরিবার, পরিজন ও বন্ধুদের কাছে অবাস্তব প্রত্যাশার পাশাপাশি তাঁদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। এটি হতাশা ও সামাজিক উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। আপনি যদি পারফেশনিস্ট হয়ে থাকেন, তাহলে প্রিয়জনদের সঙ্গে আপনার এই প্রবণতা সম্পর্কে খোলামেলা জানিয়ে রাখুন এবং তাঁদের সঙ্গে নিখুঁত সম্পর্কের পরিবর্তে খাঁটি সংযোগ রাখার চেষ্টা করুন।


নিখুঁত কাজের চিন্তায় অনেক কাজে হাত না দেওয়া

‘করতে হলে ভালোভাবে করব, নয়তো করবই না।’ এটাই পারফেকশনিস্টদের মন্ত্র। সে জন্য তাঁরা যেকোনো কাজ নিখুঁতভাবে ভালো উপকরণ এবং অনুষঙ্গসহকারে করার চেষ্টা করেন। না হলে কাজটিই নাকচ করে দেন। এতে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন থেকে পিছিয়ে পড়েন এ ধরনের মানুষেরা। জীবনের সব কাজই নিখুঁত হওয়া এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিচ্ছন্ন হওয়া চাই—এই ধারণা পোষণ করার কারণে মানসিকভাবে তাঁরা খুব স্বচ্ছন্দে থাকতে পারেন না। জীবনের কোনো অংশে হেরে গেলেন কি না, এ নিয়ে তাঁরা সব সময় দুশ্চিন্তায় ভোগেন।


শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ

সবকিছু নিখুঁতভাবে করার চাপ কেবল মন ও মস্তিষ্কেই থাকে না, এর শারীরিক প্রভাবও রয়েছে। এসব প্রভাব প্রায়ই প্রকাশিত হয়। এ ধরনের ব্যক্তিরা ঘুমের সমস্যা ও দুশ্চিন্তার কারণে মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন। এই চাপ কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের শিথিলকরণ কৌশলগুলো দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।


নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনায় আটকে থাকা

পারফেকশনিস্টরা যেকোনো ঘটনাকে নির্দিষ্ট সূত্রে ফেলে দেখেন। ফলে সে অনুযায়ী ঘটনা না ঘটলে তাঁরা আশাহত তো হনই, পাশাপাশি পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া কিংবা অভিজ্ঞতা থেকে শেখাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এতে সামগ্রিক জীবনের সন্তুষ্টি কমে যায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য আরও খারাপের দিকে চলে যায়।


পরিত্রাণের পথ কী

প্রথমেই বলে রাখা ভালো, পারফেকশনিস্টরা কাজে ও সুন্দর জীবনযাপনের বেলায় খুবই ভালো। জীবনে রুটিনমাফিক কাজ করায় যেমন পারদর্শী, তেমনি সম্পর্কের দিক থেকেও তাঁরা অনুগত, সৎ ও দায়িত্বশীল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, জীবন কারও হাতে লেখা গল্প নয় যে নিখুঁত হবে। ফলে জীবনে অপারগতা, ভুলত্রুটি, অনিশ্চয়তা—সবই থাকবে। সে ক্ষেত্রে পারফেকশনিস্টরা অতিমাত্রায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। যাঁরা এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা সাইকোথেরাপিস্টের শরণাপন্ন হতে পারেন। তিনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করবেন এবং পারফেকশনিজম থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় বলে দিতে পারবেন।

পারফেকশনিস্ট বা পরিপূর্ণতাবাদী হওয়া আপাতদৃষ্টে ভালো মনে হতে পারে। তবু এটি প্রায়ই বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ। ফলে পারফেকশনিস্টরা নিজেদের এই নেতিবাচক দিকগুলো বুঝতে পারলে এর প্রভাব কমাতে নিজেরাই পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.