Adsterra

লোড হচ্ছে...

রাগ সংবরণের পুরস্কার জান্নাত

রাগ সংবরণের পুরস্কার জান্নাত,ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,bangladesh

রাগ মানুষের মন্দ স্বভাবগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাগ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রত্যেক মানুষেরই রাগ আছে। তবে কারও কম আর কারও বেশি। রাগ হলো অন্তরের অগ্নিশিখা, যা মানুষের শরীর ও মনে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাই রাগ মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর পাশাপাশি ব্যক্তির ধর্মীয়ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাগ সংবরণ করা মুমিনের গুণ। এর বিনিময়ে রয়েছে মহাপুরস্কার জান্নাত।

অনেক সময় রাগের কারণে স্বাভাবিক বুদ্ধি লোপ হওয়ায় অনেকে গর্হিত ও অন্যায় কাজ করে ফেলে, যা শরিয়তে ব্যাপকভাবে নিষেধ। তাই মানুষের মনে রাগ এলে তা সংবরণ করার চেষ্টা করা আবশ্যক। যাতে মানুষ গর্হিত ও অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। মূলত রাগ সংবরণ করা আদর্শ মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ।

রাগ মানুষের সহজাত একটি প্রবৃত্তি। রাগ অনিয়ন্ত্রিত হওয়া মানবীয় গুণের বিপরীত। আর আল্লাহতায়ালাও নিয়ন্ত্রণহীন রাগী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না। তাই রাগকে নিয়ন্ত্রণ করাই কাম্য। রাগ নিয়ন্ত্রণের অর্থ হলো, রাগ দমিয়ে রাখা এবং তা প্রকাশ না করা। আল্লাহতায়ালা রাগ নিয়ন্ত্রণকারীদের ভালোবাসেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান ১৩৪)

অনেক সময় রাগী ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। রাগ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাগ হলো ধ্বংসকারী ও বিবেক-বুদ্ধি বিনাশকারী। যখন রাগ আসে তখনই অবক্ষয় বিস্তার লাভ করে। যার কারণে অনায়াসে মুখে অশ্লীল কথা ও অঙ্গে অশ্লীল কাজ প্রকাশ পায়। রাগের বশবর্তী হয়ে মানুষ ঝগড়া-বিবাদ, খুন-খারাবি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ, বিচ্ছেদ, আত্মীয়ের সঙ্গে শত্রুতা, বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। মা-বাবা রাগী হলে সন্তানরা ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে বড় হয়। এটি তাদের ভবিষ্যতের ওপরও প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া রাগ কথাকে এলোমেলো, মেধাকে বিক্ষিপ্ত, বিবেককে আচ্ছাদিত এবং দুনিয়া ও আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয়।

আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অল্প কথায় কিছু উপদেশ দিন। রাসুল (সা.) বললেন, তুমি রাগ করো না। লোকটি কয়েকবার একই কথা বললেন। রাসুল (সা.) প্রত্যেকবারই বললেন, তুমি রাগ করো না।’ (সহিহ বুখারি)

পবিত্র কোরআনে রাগ সংবরণকারীর জন্য বর্ণিত হয়েছে মহা সুসংবাদ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের যা কিছু দেওয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগমাত্র। আল্লাহর কাছে যা আছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা করে। আর যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং যখন রাগান্বিত হয়, তখন ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা শুরা ৩৬-৩৭)

রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি জান্নাতে অভূতপূর্ব পুরস্কারে ভূষিত হবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের রাগ প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ) রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার রাগ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ)

যেসব বিষয়ে রাগ করা যাবে : আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কখনো নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কারও ওপর রাগ করেননি। তবে আল্লাহ ও শরিয়তের আহকামের ক্ষেত্রে তিনি কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেননি। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো নিজের কোনো ব্যাপারে কারোর কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে মহান আল্লাহর নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেললে, তিনি তার যথাবিহিত শাস্তির ব্যবস্থা করতেন।’ (সহিহ মুসলিম) অর্থাৎ শরয়ি বিষয়ে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করা বা ক্ষোভ প্রকাশ করা ক্ষতিকর নয়, বরং তা প্রকৃত মুমিনের আলামত। 

রাগ সংবরণের কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে বিবরণী উল্লেখ করা হলো

অজু করা : অজু মানুষের হৃদয় ও মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে এবং রাগ প্রশমিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয়ই পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় তখন সে যেন অজু করে।’ (সুনানে আবু দাউদ)

শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন : রাগের সময় অবস্থান পরিবর্তন করলে রাগের মাত্রা অনেকটাই হ্রাস পায়। আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। এতে যদি তার রাগ চলে যায় তাহলে তো ভালো। আর যদি না যায়, তবে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (সুনানে আবু দাউদ) তাতেও যদি রাগ দমন না হয় তাহলে ঠাণ্ডা পানি পান করা কাম্য, যাতে রাগের কারণে রক্তে যে উষ্ণতা সৃষ্টি হয় তা একদম শীতল হয়ে যায়।

আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা : রাগ শয়তানের প্ররোচনা। তাই আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা সবচেয়ে কার্যকর প্রতিকার। সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসুল (সা.)-এর সামনে দুই ব্যক্তি পরস্পরকে গালমন্দ করতে লাগল। আমরা তখন রাসুল (সা.)-এর পাশে বসা ছিলাম। এর মধ্যে একজন রাগ করে তার সাথিকে খুব গালমন্দ করছিল। এতে তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেল। তখন রাসুল (সা.) বললেন, আমি এমন একটি দোয়া জানি, যদি সে তা পড়ে তাহলে তার রাগ চলে যাবে। দোয়াটি হলো, আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম। অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (তিরমিজি)

চুপ থাকা : রাগ করে বলা কথাগুলো অনেক সময় অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তা ছাড়া কথা কাটাকাটি কিংবা চালাচালি হতে থাকলে ধীরে ধীরে রাগও তীব্র আকার ধারণ করে। এ জন্য রাগের সময় চুপ হয়ে যাওয়া উচিত। এত রাগ প্রশমিত হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো, যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাক, যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’

স্থান ত্যাগ করা : রেগে গিয়ে চিৎকার না করে যার ওপর রাগ হয়েছে তার সামনে থেকে সরে যান। রাগারাগিতে কোনো পক্ষেরই লাভ হয় না। রাগ সামলাতে না পারলে অল্প সময়ের জন্য হলেও ঘটনাস্থল ত্যাগ করুন। একটু হেঁটে আসুন। এতে রাগ বাড়ার সুযোগই তৈরি হবে না এবং আপনার মনও হয়তো একটু শান্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

ক্ষমা করা : মানুষ ভুল করবে, এটাই স্বাভাবিক। কোনো মানুষই একশ ভাগ সঠিক নয়। তাই কারও ভুলের জন্য রেগে যাওয়াটা মোটেও কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। রেগে গিয়ে তার ভুল কি ঠিক করতে পারবেন? না। তাহলে ভাবুন যা হওয়ার হয়ে গেছে, রাগ না করে ক্ষমা করে দিন। কেননা ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। ক্ষমা করলে মর্যাদা বাড়ে। যখন আপনি কাউকে ক্ষমা করবেন, তখন নিজের ভেতরে অপার্থিব একটা প্রশান্তি অনুভব করবেন। সেই সঙ্গে সমাজের মানুষের কাছেও আপনার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

No comments

Powered by Blogger.