
আড়ি শেষে ভাব হয়ে গেছে নাকি অনেক দিন আগেই, এখন আর বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বৈরথে ‘নাগিন ডান্স’ হয় না। মাঠে যাই হোক, বাইরে তাদের ভালো সম্পর্ক। লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কথা বলে আসার পর উপস্থিত ঢাকা-কলম্বোর সাংবাদিকরাও একমত– ‘এখন আর প্রেস বক্সেও সেই চাপা উত্তেজনা কাজ করে না।’ তবে সমর্থকদের ব্যাপার আলাদা, বাঘ-সিংহের লড়াই বলে তারা রক্ত গরম না করলে ম্যাচের মজাটাই বা কোথায়! ‘সমর্থকরা দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা পছন্দ করে বলে আমাদেরও খেলতে ভালো লাগে।’ গতকাল আবুধাবির সংবাদ সম্মেলনে লঙ্কান অধিনায়কের সরল স্বীকারোক্তি।লিটনকে জিজ্ঞাসা না করেই বলে দেওয়া যায় আসালঙ্কার ওই চেয়ারটিতে গতকাল তিনি বসলেও একই কথা বলতেন। আসলে দুই দলের মধ্যে এত বেশি মিল যে তারা একে অন্যের কাছে খোলা বইয়ের মতোই। তাদের খেলার ধরন থেকে শুরু করে মানসিকতাও কাছাকাছি। মিরপুর থেকে মেলবোর্ন, কলম্বো থেকে কলকাতা– অতীত বলে, দুই দলের টক্কর হয়েছে বহু জায়গায়। তবে আবুধাবির মঞ্চটা তাদের কাছে অনেকটাই অচেনা। হংকং ম্যাচের আগ পর্যন্ত এই মাঠে বাংলাদেশ যে দুটি টি২০ খেলেছে, তার মধ্যে শ্রীলঙ্কা নেই। তাই লিটনদের জন্য হাসারাঙ্গা রহস্য ভেদ করার মতোই আবুধাবির বাইশ গজও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।সেদিন দুবাইয়ের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে আসালঙ্কা বলেছিলেন, ‘তাঁর ঘুম পাচ্ছে, প্রশ্নের উত্তর পরে দেবেন।’ আসলে গত এক মাসে জিম্বাবুয়ে সিরিজে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিয়েছে লঙ্কানরা। হারারে, জোহানেসবার্গ হয়ে দুবাই নামার পর তাই চার দিনের অর্জিত ছুটি পেয়েছে তারা। গতকালই প্রথম আবুধাবির মাঠে এসে কিটস খুলেছেন কুশল, নিশাঙ্কারা। লিটনরাও এদিন মাঠমুখো হননি। তবে শুক্রবার শহরের সবচেয়ে বড় শেখ জায়েদ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন তাসকিনরা। প্রার্থনা কী করেছেন তা হয়তো বলেননি, তবে বুঝে নেওয়াই যায়, আজকের ম্যাচটি যে তাদের কাছে ভীষণভাবে কাঙ্ক্ষিত। দেশ থেকে যে দুটি ম্যাচ জিতবে বলে ‘টিক’ দিয়ে এসেছে টিম ম্যানেজমেন্ট, তার একটা নিশ্চিতভাবে হংকং হলে অন্যটা শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচ জিতলে সুপার ফোরে যাওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। হারলে অনেক যদি-কিন্তুর মধ্যে পড়ে যাবেন লিটনরা। তবে এই লঙ্কানদের সামনে আজ বুক ফুলিয়েই নামবে বাংলাদেশ। কেননা, এই জুলাইতেই তাদের ওখানে গিয়ে সিরিজ জিতে এসেছেন লিটনরা। কলম্বো-ডাম্বুলার সেই হারগুলোর কথা কি মনে পড়ে? কোন বাংলাদেশি সাংবাদিক নয় আসালঙ্কাকে এদিন খোঁচাটা দিয়েছিলেন তাদেরই দেশের এক সাংবাদিক। উত্তরে তিনি যা বললেন, তা অনেকটা এমন– আমরা কিন্তু তার পর অনেকটা সময় কাটিয়েছি। জিম্বাবুয়েতে সিরিজ জিতে এসেছি। ঠিক এখানেই দুই দলের যে মিল, সেটা নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। ক্রিকইনফোর এক পরিসংখ্যান বলছে দুটি দল গত এক দশকে টি২০তে প্রতি ম্যাচে সবচেয়ে কম গড়ে রান তুলেছে। ২০১৫ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ যেখানে ওভারপ্রতি ৭.৫৭ রান তুলেছে, শ্রীলঙ্কার গড় সেখানে ৭.৬৬। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা সেখানে নয়ের কাছাকাছি। এটি প্রমাণ করে আধুনিক টি২০ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০২৪ থেকে দুটি দলই গা ঝাড়া দিতে শুরু করেছে। পাওয়ার প্লেতে রান তোলার দুর্বলতা কাটিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা থাকে দুটি দলের টপ অর্ডারের মধ্যেই। তবে দুই দলের মিডল অর্ডারে কিন্তু সেই স্ট্রাগলের ব্যাপারটি রয়ে গেছে। বাংলাদেশের দিক থেকে তাওহীদ হৃদয় যদি এর টাটকা উদাহরণ হয় লঙ্কান সাংবাদিক কুল তাহলে এগিয়ে দেবেন নুয়ান্ডু ফার্নান্দোকে। পাওয়ার প্লে কিংবা ডেথ ওভার– ঝুঁকি নেওয়ার জায়গাগুলোতে দুই দলের অধিনায়করা বড্ড সেকেলে। হংকংয়ের বিপক্ষে জয়ের পর তাওহীদ হৃদয় যতই বলুক– চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু পারছিলাম না– বলুক না কেন, তাঁকে আজ রেখেই একাদশ সাজাবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার প্রথম ম্যাচ বলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি, তবে পাথুম, কুশল, পেরেরাদের দিয়েই চেনা লঙ্কা দেখা যাবে আবুধাবিতে। শুধু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে আজ বাড়তি চিন্তা করতে পারেন লিটন। কেননা তাঁকে ঘিরে অস্বস্তিটা লিটনদের বহুদিনের। তবে তানজিম সাকিবের মতোই বলতে হয়, ‘কে কী বলল, সেটা দেখার টাইম নাই।’ সত্যিই লঙ্কার সামনে এতটাই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। তাই নাগিন ডান্স না হোক মরুর ‘আল আয়ালা’ তো হতেই পারে!
No comments