পুরুষের উর্বরতাকে কমিয়ে দিতে পারে যেসব খাবার
বর্তমান সময়ে ব্যস্ত জীবনে ফাস্টফুড ও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের খাদ্যাভ্যাসের একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা জানাচ্ছে, এসব খাবার শুধু স্থূলতা বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিই বাড়ায় না, পুরুষদের উর্বরতাকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারে উপস্থিত অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট, সংরক্ষণকারী রাসায়নিক, হরমোন-দূষিত উপাদান এবং অতিরিক্ত চিনি পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি ও গঠন নষ্ট করতে পারে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই খাবার বেশি খাওয়া পুরুষদের শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফলিকল-উত্তেজক হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে।
কোন খাবারগুলো বেশি ক্ষতিকর
প্রসেসড মাংস : হটডগ, বেকন, সালামির মতো খাবার শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেয় এবং অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণুর হার বাড়ায়।
উচ্চ ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার : সম্পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুধ ও চিজ শুক্রাণুর গতি কমাতে পারে।
ট্রান্স ফ্যাট : ভাজা খাবার, বার্গার-ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও প্যাকেটজাত বেকড আইটেমে থাকা ট্রান্স ফ্যাট মোট শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস করে।
অতিরিক্ত সয়া : সয়ায় থাকা ফাইটো-ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
বিশেষত স্থূল পুরুষদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়।
উচ্চ মার্কারিযুক্ত মাছ : টুনা ও সোর্ডফিশের মতো মাছ অতিরিক্ত খেলে শুক্রাণুর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চিনি ও সফট ড্রিঙ্কস : অতিরিক্ত চিনি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, স্থূলতা ও টেস্টোস্টেরন হ্রাস ঘটায়। ফলে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কীটনাশক-দূষিত ফল ও সবজি : সরাসরি খাবার নয়, তবে পেস্টিসাইডযুক্ত শাক-সবজি ও ফল শুক্রাণুর গুণমান কমিয়ে দেয়।
চিকিৎসকদের মতে, পুরুষদের প্রজননক্ষমতা রক্ষার জন্য খাদ্যতালিকায় বেশি করে রাখতে হবে তাজা ফল, সবজি, পূর্ণ শস্য, বাদাম ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ। একইসঙ্গে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার, সফট ড্রিঙ্কস ও প্রসেসড মাংস যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
গবেষণা আরও বলছে, প্রক্রিয়াজাত খাবারের অতিরিক্ত ব্যবহার শুধু ওজনই বাড়ায় না, বরং একই ক্যালরির অন্য খাবারের তুলনায় শরীরে বেশি চর্বি জমাতে সাহায্য করে। ফলে পুরুষদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানের সক্ষমতাও বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ে।
এক কথায়, আপনি যা খান, তার প্রভাব আপনার দেহের প্রতিটি অংশে পড়ে। সুস্থ প্রজন্মের জন্য এখনই সচেতন হওয়া জরুরি। গবেষকরা জানাচ্ছেন, আধুনিক জীবনে বাড়ির বাইরে খাওয়ার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে এবং এর বড় অংশই অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার।
অনেক ক্ষেত্রেই ব্যস্ততার কারণে পুরুষরা সঠিক খাদ্যাভ্যাস মানতে পারেন না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়ছে তাদের হরমোন, প্রজনন ক্ষমতা ও সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। তাই নিয়মিত ব্যায়াম, ঘুম ও সুষম খাদ্য গ্রহণই এখন একমাত্র সমাধান।
No comments