Adsterra

লোড হচ্ছে...

কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া হয়েছে ?

 কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া হয়েছে, আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্


‘তিন সপ্তাহের বেশি ভুগতেছি আমি, জ্বরের প্রথমদিকে ডাক্তার ডেঙ্গু টেস্ট করিয়েছিলো। নেগেটিভ আসার কয়দিন পরে আবারো টেস্ট করতে দেয়। এবার চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে’ কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মাকসুদা আনছারী। তিনি জানান, ‘এখনো পায়ের গিরায় গিরায় এতো ভয়াবহ ব্যথা কেউ কল্পনা করতে পারবে না, এখনো হাঁটতে পারি না, পা নাড়াতে খুবই কষ্ট হয়।’

বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এডিস মশাবাহিত এই দুই রোগেরই উপসর্গ প্রায় একই রকম। এ কারণে অনেক রোগীরই প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গুর টেস্ট করানো হয়, কিন্তু এর ফল নেগেটিভ আসে। পরে আবারো টেস্ট করিয়ে চিকুনগুনিয়া রোগ সনাক্ত হয়েছে এমন কথা জানিয়েছেন অনেকেই। একই মশাবাহিত এই দুই রোগের উপসর্গ এক হলেও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের মূল পার্থক্যগুলো কী কী?

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মধ্যে কী পার্থক্য ?

প্রায় সব রোগীকেই মিজ আনছারীর মতো তীব্র ব্যথায় ভুগতে হয় চিকুনগুনিয়া রোগে। ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া রোগের উপসর্গ কাছাকাছি হলেও এরকম আরো বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে।

যার আরেকটি পার্থক্য হচ্ছে শরীরে র‍্যাশ অথবা গুটি হওয়া। ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে এটি বহুলভাবে দেখা গেলেও চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে র‍্যাশ হতে তেমন দেখা যায় না। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দুটিই ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। একই সময়ে এই দুটি রোগের প্রকোপ বাড়ার‌ এটিও একটি কারণ।

গত কয়েক বছর আগে যেমনটা ছিল, তার সাথে বর্তমানে ডেঙ্গুর উপসর্গের প্যাটার্ন বেশ খানিকটা পাল্টে গেছে।

ডেঙ্গুর উপসর্গ

* ডেঙ্গু জ্বরে এখন তীব্র তাপমাত্রা থাকে।

* চার-পাঁচদিন পরে শরীরে লাল লাল র‍্যাশ হয়। র‍্যাশটা বেশি হয়।

* ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অনেক সময় শক সিনড্রোমে চলে যায়।

* রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়। ফলে রক্তক্ষরণ হয়।

* একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।

* ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে ব্যথাও থাকে, তবে ততটা তীব্র নয়।

* অনেক সময় 'এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু' যেমন এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, হার্ট, কিডনিসহ শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে সেই অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়।

* ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা খেতে পারেন না, বমি করেন।


চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ

* চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীর প্রথমেই জ্বর হয়। কিন্তু দুই – তিন দিন পরে জ্বরের তীব্রতা খুব একটা বেশি থাকে না। পরে থেমে থেমে আবার রোগী জ্বরে আক্রান্ত হন। সেটা কখনো কখনো ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রিও হয়।

* শরীরে প্রতি জয়েন্টে জয়েন্টে তীব্র ব্যথা থাকে। প্রায় সব মাসলেও এই ব্যথা থাকে। তীব্র ব্যথায় রোগী হাঁটা - চলা করতে পারে না, বসলে উঠতে পারে না এমন পরিস্থিতিও তৈরি হয়। চিকিৎসক আব্দুল্লাহ জানান, এই জ্বরকে 'ল্যাংড়া জ্বর' ও বলা হয়।

* চিকুনগুনিয়া রোগের অন্যতম উপসর্গ জ্বরের পরে রোগীর পুরো শরীরের গিরায় গিরায় ব্যথা হয়। হাত – পা ফুলে যায়।

* শরীরে র‍্যাশ তেমন একটা হয় না বললেই চলে।

* তীব্র মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হয়।

* এই রোগে রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা রক্তক্ষরণ হয় না।

* রোগী শক সিনড্রোমে চলে যাওয়া অথবা এই রোগে মৃত্যুঝুঁকি একদমই নেই।

* অনেক সময় চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর স্কিন বা চামড়ায়ও প্রভাব পড়ে। অনেকের গায়ের রং কালো হয়ে যায়, চামড়া উঠে। ডেঙ্গুতে র‍্যাশ হলেও শরীরের চামড়া কালো হয়ে যায় না।

* এই রোগে মৃত্যুঝুঁকি না থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে ভুগতে হয় আক্রান্ত রোগীকে।

* চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, হার্ট বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

* খাবারে অনীহা এই রোগের রোগীদেরও রয়েছে।

উপসর্গ থেকে ধারণা পাওয়া গেলেও দুটি রোগের ক্ষেত্রেই ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করার মাধ্যমেই চিকিৎসক নিশ্চিত হতে পারেন যে রোগী ঠিক কী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।


ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া কখন, কীভাবে সনাক্ত হয় ?

বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়। এরপরে ২০১৭ সালে ব্যাপক হারে এই জ্বরে মানুষ আক্রান্ত হয়। এ বছর আবার এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ।

ডেঙ্গু রোগটি প্রথম ১৯৬০ সালের দিকে সনাক্ত হয় এই অঞ্চলে। পরে ২০০০ সালে আবার মহামারী আকারে ডেঙ্গু দেখা দেয় বাংলাদেশে। এরপর থেকে দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্যাটার্নের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় মানুষ।

জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে টেস্ট করালে ডেঙ্গু সনাক্ত করা যায়। তবে এর বেশি সময় পার হলে তা আর সনাক্ত হয় না।

কিন্তু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিন থেকে এক সপ্তাহ পরে চিকুনগুনিয়ার টেস্ট করতে হয়। তবে এই সময়ের আগে টেস্ট করলে চিকুনগুনিয়া সনাক্ত হয় না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আইসিটি ফর চিকুনগুনিয়া টেস্টের মাধ্যমে এই রোগ সনাক্ত করা যায়।

‘রোগের শুরুর দিকে প্রথমে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা সনাক্ত করতে হবে। জ্বরের সাতদিন পরে আইসিটি ফর চিকুনগুনিয়া টেস্ট করলে তা সনাক্ত হয়" বলেন ইসলাম।

এই রোগে সারা গায়ে ব্যথা থাকে, জয়েন্ট পেইন খুব বেশি হয় বলে চিকিৎসকরা চিকুনগুনিয়া বুঝতে পারেন।

আর্থাইটিস বাতে যে ধরনের ব্যথা হয় ঠিক সেই ধরনের মারাত্মক ব্যথা হয়। এই ধরনের ব্যথাতে ব্যথার ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যেহেতু ডেঙ্গুতে আমরা একদমই ব্যথার ওষুধ দিতে চাই না, সেহেতু শুরুতেই যদি ডেঙ্গু না এটা শনাক্ত করা যায়, তাহলে চিকুনগুনিয়ার জন্য কিছু ব্যথার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও চিকুনগুনিয়া সনাক্ত হওয়ার আরেকটি নির্দিষ্ট টেস্ট বা পরীক্ষা আরটি–পিসিআর।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসের আরএনএ সনাক্ত করা হয়। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে এই টেস্ট বেশি কার্যকর। আর চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীর দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সনাক্ত করা হয় সেরোলজি টেস্টের মাধ্যমে। এই টেস্টও পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে করতে হয় বলে জানান চিকিৎসকরা।


চিকিৎসা কী দেওয়া হয় ?

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীকে একই ধরনের চিকিৎসা সাধারণত দেওয়া হয়। সাধারণত ‘সিস্টেমেটিক সাপোর্টিভ সিস্টেম’ বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানান চিকিৎসকরা। জ্বরের জন্য সাধারণত প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ এবং ব্যথার জন্য সাধারণত পেইনকিলার দেওয়া হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

ডেঙ্গু রোগীর রক্তে প্লাটিলেট ও হিমোগ্লোবিন কমে গেলে, রক্তক্ষরণ হয়। ফলে রোগীকে অনেক সময় রক্তও দিতে হয়। তবে চিকুনগুনিয়াতে এসব সমস্যা হয় না বলে শুধু ব্যথা কমানোর জন্য পেইনকিলার দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীকে থেরাপিও দিতে হয় বলে জানান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ বি এম আব্দুল্লাহ।

দুই রোগের রোগীদেরই প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার ও ফল খেতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, শরবত, জুস, গ্লুকোজ, স্যুপ, দুধ খেতে হয়। অনেক সময় বমির কারণে খাবার খেতে না পারলে তখন স্যালাইনও দেয়া হয়। তবে চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীকে তরল খাবারের পাশাপাশি বিশেষ করে ফল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health

ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।


Follow Me -

Facebook : Dr. Abida Sultana 

Youtube : Dr. Abida Sultana 

X : Dr. Abida Sultana 

tiktik : Dr. Abida Sultana 

No comments

Powered by Blogger.