কাতার ইস্যুতে রুবিওর সফরের মধ্যেই গাজায় অভিযান তীব্র করেছে ইসরাইল
ইসরাইলি বাহিনী গাজা সিটিতে অন্তত ৩০টি আবাসিক ভবন ধ্বংস করেছে এবং হাজারো মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে বলে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। এর মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কাতার ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরাইলে পৌঁছেছেন।
ইসরাইল জানিয়েছে, তারা গাজা সিটি সম্পূর্ণ দখলে নেবে। প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। হামাসকে নির্মূল করার ঘোষিত লক্ষ্যের অংশ হিসেবে ইসরাইল গাজা সিটিকে ‘প্রতিরোধ বাহিনীর শেষ ঘাঁটি’ আখ্যা দিয়ে আক্রমণ বাড়িয়েছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর দোহায় হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর ইসরাইলের বিমান হামলা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক নিন্দার জন্ম দেয়। এর জেরেই কাতার সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জরুরি আরব-ইসলামিক সম্মেলন ডেকেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, ওয়াশিংটনের আলোচনার মূল বিষয় হবে হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জিম্মির মুক্তি, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে, এবং গাজার পুনর্গঠন। তিনি বলেন, যা হয়েছে, হয়ে গেছে। এখন ইসরায়েলি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করব।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ওয়েস্টার্ন ওয়াল প্রার্থনাস্থলে যান রুবিও। এর আগে তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা দোহায় বিমান হামলাকে ‘একতরফা উত্তেজনা সৃষ্টি’ বলে উল্লেখ করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করেনি।
এদিকে, নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করেছেন। এতে করে ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য দাবিকৃত জমি কেটে নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত সতর্ক করেছে যে, এটি আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন কেন কাতারে হামলা চালাতে রাজি হয়নি মোসাদ ?
মানবিক বিপর্যয় তীব্র
গাজা সিটিতে ইসরাইলি দখল অভিযানের ফলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দু’জন ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন। এ নিয়ে এ ধরনের মৃত্যু বেড়ে দাড়িয়েছে কমপক্ষে ৪২২ জনে, যাদের মধ্যে ১৪৫ শিশু।
ইসরাইল এ বছরের শুরুর দিকে টানা ১১ সপ্তাহ গাজায় খাদ্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে কিছু সহায়তা ঢুকতে দেওয়া হলেও জাতিসংঘ বলছে, তা মোটেও যথেষ্ট নয়।
১ হাজার ৬০০ ভবন ধ্বংস
ইসরাইলি বাহিনী এর মধ্যে গাজার অন্তত চারটি পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। অন্তত তিনটি অঞ্চল প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেনারা এখন কেন্দ্র ও পশ্চিমাংশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
হামাসের দাবি, ১১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইল অন্তত ১ হাজার ৬০০ আবাসিক ভবন ও ১৩ হাজার তাবু ধ্বংস করেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু গত সপ্তাহে গাজা সিটিতে ৫০০-এর বেশি স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
রোববার পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৮ জন গাজা সিটিতেই।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরাইলের গাজায় যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
No comments