Adsterra

লোড হচ্ছে...

জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতিটি ধাপ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

 


জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতিটি ধাপ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি,ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News

জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন থেকে ব্যবহার প্রতিটি ধাপ মানব স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ‘ক্রেডল টু গ্রেভ: দ্য হেলথ টোল অব ফসিল ফুয়েলস অ্যান্ড দ্য ইম্পেরেটিভ ফর আ জাস্ট ট্রানজিশন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি লন্ডন থেকে প্রকাশ করা হয়। এটি প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্স (জিসিএইচএ)। এতে তেল, গ্যাস, কয়লা থেকে শুরু করে অন্যান্য সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি কীভাবে প্রতিটি ধাপে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।জিসিএইচএর ক্যাম্পেইন লিড শ্বেতা নারায়ণ বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি সরাসরি স্বাস্থ্যের ওপর আঘাত হানে, আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নারীদের গর্ভপাত ও শিশুদের লিউকেমিয়া থেকে শুরু করে হাঁপানি, ক্যানসার, স্ট্রোক এবং মানসিক স্বাস্থ্য পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করছে।তিনি সতর্ক করে বলেন, এমনকি আগামীকাল যদি কার্বন নিঃসরণ ধরে ফেলা সম্ভবও হয়, তবুও জীবাশ্ম জ্বালানি আমাদের বাতাস, পানি ও শরীরকে বিষাক্ত করতে থাকবে। এগুলো শুধু জলবায়ুর হুমকি নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও এক জরুরি সংকট।প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেওয়া হয়। এরমধ্যে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও সামাজিক ক্ষতির গোপন খরচও অন্তর্ভুক্ত। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রধান উপকারভোগী ধনীক শ্রেণী হলেও এর সরাসরি ভুক্তভোগী হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাবে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে স্বাস্থ্য বৈষম্য আরও ঘনীভূত করছে। এ সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।প্রতিবেদনটি বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক কেস স্টাডির ওপর ভিত্তি করে তৈরি— যার মধ্যে নাইজেরিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশের উদাহরণ রয়েছে।এতে বলা হয়েছে, মোজাম্বিকে গ্যাস সম্প্রসারণ প্রকল্প কৃষক ও জেলেদের উচ্ছেদ করেছে, সেখানে ক্ষুধা ও মানসিক স্বাস্থ্য সংকট ঘনীভূত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশেপাশের মানুষ বিষাক্ত বাতাস, দূষিত পানি ও স্বাস্থ্য সংকটে ভুগছে। ভারতের করবা এলাকায় কয়লাখনির পাশে বসবাসকারীরা হাঁপানি, যক্ষ্মা, জন্মগত ত্রুটি ও দূষিত পানির কারণে চর্মরোগে ভুগছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণ, কয়লা ও এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখোমুখি। তারা সতর্ক করেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্য সংকট আরও গভীর হবে, বৈষম্য বাড়বে এবং টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মূল স্থপতি ক্রিস্টিয়ানা ফিগেরেস বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির যুগ আমাদের বাতাসকে বিষাক্ত করেছে, স্বাস্থ্যের ক্ষতি করেছে এবং মানবিক মর্যাদা ভেঙে দিয়েছে। সে কারণে জ্বালানি রূপান্তর নিয়ে অবশ্যই দেরি করা উচিৎ নয়।মালয়েশিয়ার সানওয়ে সেন্টার ফর প্ল্যানেটারি হেলথের নির্বাহী পরিচালক ড. জেমিলাহ মাহমুদ বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়—এটি জনস্বাস্থ্যের জরুরি সংকট। জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে আমাদের নিষ্ক্রিয়তার মূল্য মানুষের জীবন দিয়ে মাপা হচ্ছে।জিসিএইচএর নির্বাহী পরিচালক ড. জেনি মিলার বলেছেন, এবার যথেষ্ট হয়েছে। নীতিনির্ধারকদের নতুন তেল, গ্যাস ও কয়লা প্রকল্প বন্ধ করতে হবে, বিদ্যমানগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে এবং এই প্রাণঘাতী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে দেওয়া ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে। কপ-৩০ হতে হবে কার্যকর পদক্ষেপের মুহূর্ত।প্রতিবেদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা শেষ করে জনস্বাস্থ্য, ন্যায়বিচার ও টেকসই ভবিষ্যৎকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে সরকার, সুশীল সমাজ ও স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.