দেহের গন্ধে লুকানো স্বাস্থ্যরহস্য
রক্তে কিটোন জমে যাওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীর শ্বাসে অনেক সময় ফলের মতো গন্ধ পাওয়া যায়। লিভারের রোগে মুখে বা প্রস্রাবে আসতে পারে টক বা সালফারের মতো গন্ধ। কিডনির সমস্যা হলে শ্বাসে অ্যামোনিয়ার মতো তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। যক্ষ্মা বা সংক্রমণে শ্বাস ও ত্বকে অদ্ভুত দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে।
আমাদের শরীর নীরবে নানা সংকেত পাঠায়। এরমধ্যে সবচেয়ে উপেক্ষিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি সংকেত হলো- দেহের গন্ধ। ঘাম, শ্বাস কিংবা ত্বকের ক্ষুদ্র রন্ধ্র দিয়ে নির্গত অসংখ্য রাসায়নিক যৌগ কেবল দুর্গন্ধ নয়, অনেক সময় তা আমাদের অসুস্থতার আগাম বার্তাও বহন করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা গেলে দেহের গন্ধই হতে পারে রোগ শনাক্তের এক নতুন নির্ভরযোগ্য উপায়।
২০১২ সালে স্কটল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত নার্স জয় মিলনে দাবি করেছিলেন—তিনি পারকিনসনস রোগের গন্ধ চিনতে পারেন। শুরুটা হয়েছিল তার স্বামী লেস-এর মাধ্যমে। লেসের শরীরে এক ধরনের নতুন মিষ্টি-মশলাদার গন্ধ টের পান তিনি, যা আসলে রোগের পূর্বলক্ষণ ছিল। পরে পারকিনসনস রোগীদের একটি সমাবেশে গিয়ে মিলনে বুঝতে পারেন—সব রোগীর দেহে একই ধরনের গন্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা প্রথমে বিষয়টি বিশ্বাস করেননি। তবে পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনি টি-শার্টের গন্ধ শুকে নিখুঁতভাবে রোগীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এমনকি এমন একজনকে চিহ্নিত করেছিলেন যে ব্যক্তি এক বছর পর পারকিনসনস রোগী বলে শনাক্ত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানবদেহে প্রায় ২৫ হাজার রাসায়নিক যৌগ আছে। যার মধ্যে কয়েক হাজার রোগের কারণে ভিন্নভাবে সক্রিয় হয়। উদাহরণস্বরূপ—রক্তে কিটোন জমে যাওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীর শ্বাসে অনেক সময় ফলের মতো গন্ধ পাওয়া যায়। লিভারের রোগে মুখে বা প্রস্রাবে আসতে পারে টক বা সালফারের মতো গন্ধ। কিডনির সমস্যা হলে শ্বাসে অ্যামোনিয়ার মতো তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। যক্ষ্মা বা সংক্রমণে শ্বাস ও ত্বকে অদ্ভুত দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে।
মানুষের নাক এত সূক্ষ্ম গন্ধ ধরতে সক্ষম নয়, কিন্তু কুকুরের ঘ্রাণশক্তি আমাদের চেয়ে হাজার গুণ বেশি। গবেষকরা কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, এমনকি ম্যালেরিয়ার মতো রোগ শনাক্ত করাতে সফল হয়েছেন।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা কুকুরের নাককে অনুকরণ করে তৈরি করছেন রোবোটিক নাক। এটি মানুষের ত্বক বা নিঃশ্বাস থেকে নির্গত ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড শনাক্ত করতে পারবে। এতে সহজে, ব্যথাহীন উপায়ে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
গন্ধের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় হওয়ায় গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা পারকিনসনস রোগীদের ত্বকের তেল বা সিবাম বিশ্লেষণ করে প্রায় ৩০টি বিশেষ যৌগ শনাক্ত করেছেন, যা সুস্থ মানুষের শরীরে থাকে না। তাদের লক্ষ্য হলো—ত্বকের সোয়াব টেস্ট তৈরি করা, যা রোগের প্রাথমিক ধাপেই রোগীকে সতর্ক করবে।
এমনকি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের শরীর থেকে নির্গত বিশেষ "ফলগন্ধী" রাসায়নিকও শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। এই রাসায়নিকই মশাকে আকর্ষণ করে। ভবিষ্যতে মশার ফাঁদ তৈরির কাজে এই বিশেষ যৌগ ব্যবহারের কথা ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health
No comments