গাজায় গণহত্যার ষোলকলা পূর্ণ
প্রথমত, সুরক্ষিত স্থানে (হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির) হামলার মাধ্যমে একটি জনগোষ্ঠীর লোকজনকে হত্যা; বেসামরিক নাগরিক ও অন্যান্য সুরক্ষিত স্থানে থাকা ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যাতে ব্যাপক হারে মানুষ মারা যায়।
দ্বিতীয়ত, বেসামরিক নাগরিক ও সুরক্ষিত বস্তুর ওপর সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে একটি জনগোষ্ঠীর মানুষের গুরুতর শারীরিক-মানসিক ক্ষতি করা; বন্দিদের সঙ্গে গুরুতর দুর্ব্যবহার করা; জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি ঘটানো ও পরিবেশ ধ্বংস করা।
তৃতীয়ত, ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জমি ধ্বংসের মাধ্যমে তাদের সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করতে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা; চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা নষ্ট করা; জোরপূর্বক অন্যত্র যেতে বাধ্য করা; প্রয়োজনীয় সহায়তা– পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ফিলিস্তিনিদের কাছে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া; প্রজনন ঠেকানো ও শিশুদের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।
চতুর্থত, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজার বৃহত্তম ফার্টিলিটি ক্লিনিকে হামলা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিদের বংশবৃদ্ধি ঠেকানো। এতে চার হাজার ভ্রূণ, এক হাজার শুক্রাণুর নমুনা ও নিষিক্ত ডিম্বাণু ধ্বংস হয়ে গেছে।জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে গণহত্যার আইনি সংজ্ঞা পূরণ করতে এটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে অপরাধী এ চার ধরনের কর্মকাণ্ডের যে কোনো একটি ধরন সংঘটিত করেছে, যার উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে একটি জনগোষ্ঠীটিকে ধ্বংস করা। ইসরায়েল চারটিই সংঘটিত করেছে।জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন বলছে, তারা ইসরায়েলের নেতাদের দেওয়া বিবৃতি বিশ্লেষণ করেছেন। এতে প্রমাণ মিলেছে, ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগ, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গণহত্যার উস্কানি দিয়েছেন। এ কারণে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও গুরুতর ক্ষতি করেছে। তারা ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক স্থানে পদ্ধতিগত এবং ব্যাপক আক্রমণ করেছে। গাজায় অবরোধ আরোপ করে এর জনসংখ্যাকে অনাহারে রেখে মেরেছে।
গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু
গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলের দুই কর্মকর্তা সিএনএনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ইসরায়েলের ট্যাঙ্কের বিশাল বহর গাজায় প্রবেশ করছে। বোমা হামলা ও লোকজনের বাস্তুচ্যুতির দৃশ্যও দেখা গেছে।শহরটির দখল ও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে একটি পরিকল্পনা গত মাসে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভায় ওই পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশ এ স্থল অভিযানের সমালোচনা করছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়েডেফুল এটিকে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ বলে বর্ণনা করেন।গত সপ্তাহ থেকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা সিটিতে নির্বিচারে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। তাদের হামলার প্রধান নিশানা শহরটির সুউচ্চ ভবন।ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেন, শুরুতে ধাপে ধাপে ও পর্যায়ক্রমে স্থল অভিযান চলবে। শহরটির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো খালি করার পর আইডিএফের ওই অভিযান শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত খুব কম এলাকা খালি করা সম্ভব হয়েছে।গত মাসে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলে, গাজা সিটিতে স্থল অভিযানের যে পরিকল্পনা ইসরায়েল করছে, তাতে সেখানে বসবাস করা ১০ লাখ ফিলিস্তিনির বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। গত সোমবার ইসরায়েলের এক সেনা কর্মকর্তা দাবি করেন, এখন পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি গাজা সিটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছুঁই ছুঁই
এ অবস্থায় গাজায় ইসরায়েলের হামলায় গতকাল এক দিনে আরও ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৯৬৪ জন। আহতের সংখ্যা এক লাখ ৭৩ হাজারের বেশি। এক দিনে অনাহারে মারা গেছেন আরও তিনজন। এতে অনাহার-অপুষ্টির মৃত্যুর সংখ্যা ৪২৮-এ পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে ১৪৬ শিশু রয়েছে। ত্রাণ নিতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৪৯৭ জন। উপত্যকার মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগই বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ৯০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছেন।
এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে লুক্সেমবার্গ
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ। গতকাল মঙ্গলবার দ্য জেরুজালেম পোস্ট জানায়, লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রিডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেত্তেল দেশটির এক পার্লামেন্টারি কমিশনকে জানিয়েছেন, তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। চলতি মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ অন্য দেশগুলো যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে, তখন লুক্সেমবার্গ এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত ঘোষণা দেবে।
আরও পড়ুন মন শান্ত করে যেসব তেল
No comments