Adsterra

লোড হচ্ছে...

উম্মতের জন্য নবীজির ৭ উপদেশ

উম্মতের জন্য নবীজির ৭ উপদেশ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, bangla news, bangladeshi news, today update news

মানবজাতির ইতিহাসে নবী-রাসুলদের আগমন সর্বদাই মানবতার মুক্তি ও পথপ্রদর্শনের জন্য হয়েছে। তারা মানুষকে এক আল্লাহর উপাসনা, নৈতিকতা, আত্মশুদ্ধি ও মানবিকতার শিক্ষা দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যুগোপযোগী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। তার উপদেশ শুধু তৎকালীন আরব সমাজকে নয়, বরং সমগ্র মানবজাতিকে পথ দেখিয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা আলোর দিশা হয়ে থাকবে।

নবীজির জীবনযাত্রা ও বাণী উম্মতের জন্য অমূল্য সম্পদ। তিনি যেসব উপদেশ দিয়েছেন, সেগুলো একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপান, অন্যদিকে সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনের জন্য আলোকবর্তিকা। তার নির্দেশনা কেবল নামাজ, রোজা, হজ কিংবা জাকাতের মতো ইবাদতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের ক্ষুদ্রতম বিষয় থেকেও তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, পরিবারকে কীভাবে সময় দিতে হবে, কীভাবে নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সবই তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন।

নবীজি (সা.)-এর প্রতিটি উপদেশই মানুষের কল্যাণের জন্য। তার বাণীতে যেমন আল্লাহর প্রতি ভরসা ও নির্ভরশীল হওয়ার শিক্ষা আছে, তেমনি আছে দাম্পত্য জীবন ও পারিবারিক সম্পর্ককে সুন্দর করার দিকনির্দেশনা। আবার যেমন রয়েছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ইবাদতে মনোনিবেশ করার শিক্ষা, তেমনি রয়েছে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব এবং সংযমী ও সন্তুষ্ট থাকার পরামর্শ। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণী উল্লেখ করা হলো।

আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা : একদিন রাসুল (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বলেছেন, ‘হে কিশোর, আমি তোমাকে কিছু কথা শেখাব। তুমি আল্লাহর নির্দেশ সংরক্ষণ করবে, তোমাকেও তিনি সংরক্ষণ করবেন। তুমি আল্লাহর নির্দেশনা পালন করবে, তুমি তাকে তোমার সামনে পাবে। কোনো কিছু চাইলে আল্লাহর কাছে চাও। কারও কাছে সাহায্য চাইতে হলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। জেনে রাখো, পুরো জাতি তোমার উপকার করতে চাইলেও আল্লাহ যতটুকু তোমার জন্য লিখে রেখেছেন ততটুকুই হবে। তারা তোমার ক্ষতি করতে চাইলেও আল্লাহ যতটুকু তোমার জন্য লিখে রেখেছেন ততটুকু হবে। (কারণ তকদিরের) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠাগুলো শুকিয়ে গেছে।’ (তিরমিজি)

ইবাদতে নিয়োজিত থাকা : রাসুল (সা.) তার উম্মতকে বেশি বেশি মহান আল্লাহর ইবাদত করতে বলেছেন। মহান আল্লাহ যে সাত ধরনের ব্যক্তিকে আরশের নিচে ছায়া দেবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না, তাদের মধ্যে এক শ্রেণি হলেন, যারা বেশি বেশি মহান আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকেন।

সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করা : রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে যুবক সম্প্রদায়, তোমাদের কেউ সামর্থ্যবান হলে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা দৃষ্টি রক্ষা করে এবং লজ্জাস্থান রক্ষা করে। আর কেউ তা না পারলে সে যেন রোজা রাখে। কারণ তা তাকে নিয়ন্ত্রণ রাখবে।’ (সহিহ বুখারি)

পরিবারকে সময় দেওয়া : নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমাদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাও। তাদের শিক্ষা দাও। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ জানাও। আর নামাজের সময় যেন তোমাদের একজন আজান দেয়। অতঃপর তোমাদের কোনো প্রবীণ ব্যক্তি যেন তোমাদের ইমাম হন।’ (সহিহ বুখারি)

কৃতজ্ঞতা আদায় করা : মুয়াজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে বলেছেন, হে মুয়াজ, আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ অতঃপর তিনি বলেছেন, ‘হে মুয়াজ, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর কখনো এই দোয়া পড়া ছাড়বে না, আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদিকা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাকে সহযোগিতা করুন যেন আমি আপনাকে স্মরণ করি, কৃতজ্ঞতা জানাই ও আপনার ইবাদত সুন্দরভাবে করি। (আবু দাউদ)

জ্ঞানার্জন করা : জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করলে আমার বাবা আমাকে নিয়ে তার কাছে যান। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এ কিশোর বনু নাজ্জার গোত্রের সন্তান। ইতিমধ্যে সে আপনার ওপর মহান আল্লাহর অবতীর্ণ কোরআনের প্রায় ১০টি সুরা মুখস্থ করেছে। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) খুবই মুগ্ধ হলেন। তিনি বললেন, হে জায়েদ, তুমি আমার জন্য ইহুদিদের কিতাব শিখে নাও। আল্লাহর শপথ, আমি নিজের কিতাবের ব্যাপারে ইহুদিদের নিরাপদ মনে করি না। জায়েদ (রা.) বলেন, অতঃপর আমি তাদের কিতাব শিখতে শুরু করি। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই আমি তাতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করি। আমি রাসুল (সা.)-কে তাদের পাঠানো চিঠিপত্র পড়ে শোনাতাম। তার পক্ষ থেকে চিঠির উত্তর দেওয়া হতো। (সহিহ বুখারি)

সংযমী ও সন্তুষ্ট থাকা : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আবু হুরাইরা, আল্লাহভীরু হও। অর্থাৎ সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করো, তুমি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ইবাদতগুজার হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকে সন্তুষ্ট হও, সবচেয়ে ধনী হবে। তুমি নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য যা পছন্দ করো তা অন্য মুসলিম ও মুমিনের জন্য পছন্দ করো। নিজের জন্য যা অপছন্দ করো তা অন্যের জন্য অপছন্দ করো। তাহলে তুমি পরিপূর্ণ মুমিন বলে গণ্য হবে। পড়শীর সঙ্গে সুন্দরভাবে থাকো, তুমি পরিপূর্ণ মুসলিম বলে গণ্য হবে। বেশি হাসা পরিহার করো। কারণ বেশি হাসা অন্তর মৃত হওয়ার মতো।’ (তিরমিজি)

এই উপদেশগুলো শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং একজন মানুষকে প্রকৃত অর্থে সৎ, ন্যায়পরায়ণ, বিনয়ী ও মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ করে তোলে। বিশেষ করে আজকের সময়, যখন মানুষ ভোগবাদে আচ্ছন্ন, নৈতিকতার সংকটে নিপতিত এবং পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে, তখন নবীজির এই উপদেশগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। মানুষের অন্তরে ইমানকে দৃঢ় করা, আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়ানো, পরিবারে ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করা, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং জ্ঞান ও চরিত্রের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গড়ে তোলা, সবকিছুর দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় তার শিক্ষা থেকে।

নবীজির এ সাতটি উপদেশ এমন এক জীবনদর্শনের রূপরেখা, যা অনুসরণ করলে একজন মুসলমান শুধু আখেরাতেই সফল হবে না, বরং দুনিয়াতেও সম্মান, প্রশান্তি ও মর্যাদার অধিকারী হবে। তাই এগুলোকে আত্মস্থ করা এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা প্রতিটি মুমিনের জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই উপদেশগুলো যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Powered by Blogger.