Adsterra

লোড হচ্ছে...

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে ৪ আমল বেশি বেশি করবেন

 

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে ৪ আমল বেশি বেশি করবেন, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, bangla news, bangladeshi news, today upda

জীবন কখনোই একরকম থাকে না। কখনো আনন্দে ভরে ওঠে চারদিক, আবার কখনো ঝড়-ঝাপটায় যেন ভেঙে পড়ে সবকিছু। সংসারের অশান্তি, অর্থকষ্ট, চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তা, হঠাৎ অসুখ-বিসুখ কিংবা সামাজিক ঝামেলা; এসব সমস্যা থেকে বাঁচা কারও পক্ষেই সম্ভব না। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গ্রাম-শহর; সবাই কোনো না কোনো সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, যখন মনে হয় আর এগোনোর পথ নেই, যেন দেয়ালে ঠেকে গেছে পিঠ।

এই সময় মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। অনেকে ভরসা খোঁজেন বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়ের কাছে, কেউ আবার নিজের দুঃখ চেপে রেখে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েন। কিন্তু একজন ঈমানদারের আসল ভরসা তো মানুষ নয়, বরং মহান আল্লাহ। তিনি কখনো তাঁর বান্দাকে একা ছেড়ে দেন না। কোরআন-হাদিসে বারবার শেখানো হয়েছে, সংকট যত বড়ই হোক না কেন, আল্লাহর দিকে ফিরে গেলেই মিলবে শান্তি আর মুক্তির পথ।

তাই যখনই মনে হবে চারদিক অন্ধকার, কোনো রাস্তা খোলা নেই, তখনই আমাদের আসল কাজ হলো মহান রবের কাছে কান্নাকাটি করা, তাঁর দরবারে ফিরে যাওয়া। সঠিক আমলগুলো আঁকড়ে ধরলেই দেখা যাবে, যেখানে মানুষ সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, আল্লাহ সেখানে নতুন দরজা খুলে দিয়েছেন।


চলুন তাহলে জেনে নিই, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ৪টি আমল বেশি বেশি করতে হবে—


বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া

ইস্তিগফার অর্থ হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। যে কোনো বিপদ-আপদে বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি আমল। নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠ করলে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।

পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর অধিক বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন। এ ছাড়া দান করবেন বাগবাগিচা এবং নদীনালাও ।’ (সুরা নুহ : ১০-১২, সুরা ওয়াকিয়া : ৮২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তিগফার করবে, মহান আল্লাহ সংকট থেকে তার উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ : ১৫১৮)

এ ক্ষেত্রে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ছোট্ট একটি ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়তে পারেন। তা হলো, ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া-আতুবু ইলাইহি’ (أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ)।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।

এছাড়াও নিচের ইস্তিগফারটি পড়তে পারেন—

আরবি : أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

বাংলা : আসতাগফিরুল্লা-হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, ওয়া আতূবু ইলাইহি।

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে এই দোয়াটি পাঠ করবে, সে ব্যক্তি যদি যুদ্ধের ময়দান থেকেও পালিয়ে আসে, তারপরও তার গোনাহ মার্জিত হবে। (আবু দাউদ, তিরমিজি)

এছাড়া দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার বা সর্বোত্তম ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়তে পারেন।

আরবি

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

বাংলা : আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি, ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্‌দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্‌রি মা ছানা’তু, আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী, ফাগ্‌ফির্‌লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্‌যুনূবা ইল্লা আনতা।

হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যদি সে মারা যায়, তবে সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়ে নেবে, আর যদি ভোর হওয়ার আগেই সে মারা যায় তবে সে জান্নাতি হবে। (সহিহ বুখারি : হাদিস : ৫৮৬৭)


নবীজির (সা.) ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ

নবীজির ওপর দরুদ পড়া আল্লাহর হুকুম। আর বান্দা হুকুম পালন করলে মহান রব খুশি হন। এতে বান্দার মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়। এমনকি পবিত্র কোরআনেও মহান আল্লাহতায়ালা নবীজির (সা.) ওপর দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ রাসুলের ওপর ‘সালাত-দরুদ’ পড়েন। হে ইমানদারগণ, তোমরাও তার নামে দরুদ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।” (সুরা আহজাব : ৫৬)

এ ক্ষেত্রে ছোট্ট দরুদ হলো, সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (صلى الله عليه وسلم)। অর্থ : আল্লাহ তাঁর (রাসুল সা.) প্রতি রহমত (দয়া) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।

এছাড়া মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে এসেছে, একবার সাহাবিগণ নবীজিকে (সা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার ওপর সালাত-দরুদ আমরা কীভাবে পাঠ করব? উত্তরে তিনি ( সা.) বললেন, তোমরা বলবে,

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

বাংলা : আল্লা-হুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ— কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ— কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিম, ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! উম্মি নবী মুহাম্মাদের (সা.) ওপর এবং মুহাম্মাদের (সা.) পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন রহমত বর্ষণ করেছেন ইব্রাহিমের (আ.) ওপর এবং ইব্রাহিমের (আ.) পরিবারের ওপর। উম্মি নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও তার পরিবারকে বরকত দান করুন, যেমন ইব্রাহিম ও তার পরিবারকে বরকত দান করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত। (মুসলিম : ৭৯৩)

অন্যদিকে বান্দা নবীজির (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করলে এর সওয়াব আল্লাহর কাছে জমা থাকে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করবেন। তার ১০টি গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, আর আল্লাহর নৈকট্যের জন্য ১০টি মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। (নাসায়ি : ১২৯৭)


দোয়ায়ে ইউনূস পড়া

বিপদ-আপদে দোয়া কবুলের অন্যতম হাতিয়ার দোয়া ইউনূস। দোয়া ইউনুস মূলত সুরা আম্বিয়ার ৮৭ নম্বর আয়াত। আয়াতটি হলো,

لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

বাংলা : লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।

অর্থ : তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই, তুমি সুপবিত্র, নিশ্চয়ই আমি জালিমদের দলভুক্ত। (সুরা আম্বিয়া : ৮৭)

সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইউনুস (আ.) মাছের পেটের ভেতর দোয়া করেছিলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’ কোনো মুসলিম যখনই এই দোয়া করে, আল্লাহ্‌ অবশ্যই তার দোয়া কবুল করে থাকেন। (তিরমিজি : ৩৫০৫)


৪. ইসমে আজমের দোয়া

কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর কাছে তাঁর গুণাবলি স্মরণ করে সাহায্য চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় আল্লাহকে ডাকতে পারেন এভাবে-

اللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِىْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَه كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা বি-আন্নাকা আংতাল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস-সামাদ, আল্লাজি-লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ, ওয়ালাম-ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোনো মাবুদ নেই। তুমি এক ও অনন্য। তুমি অমুখাপেক্ষী ও স্বনির্ভর। যিনি কাউকে জন্মও দেননি। কারও থেকে জন্মও নন। যার কোনো সমকক্ষ নেই।

দোয়াটি শোনার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে তার ইস্মে আজম বা সর্বাধিক বড় ও সম্মানিত নামে ডাকল। এ নামে ডেকে তাঁর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে তা দান করেন এবং কেউ ডাকলে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। (আবু দাউদ : ১৪৯৬)

এ ছাড়া আরও অনেক ইসমে আজম রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমেও আল্লাহর কাছে চাইতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.