Adsterra

লোড হচ্ছে...

ইন্দোনেশিয়ায় এক ডেলিভারি রাইডারের মৃত্যু কীভাবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জন্ম দিল

 


ইন্দোনেশিয়ায় এক ডেলিভারি রাইডারের মৃত্যু কীভাবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জন্ম দিল ,  ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News

ইন্দোনেশিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা রাজনীতিবিদদের বাড়ি লুট করেছে, ভবনে আগুন ধরিয়েছে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সরকারের কঠোর অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয় এক তরুণ ডেলিভারি রাইডারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণির প্রতি ক্ষোভ থেকেই ২৫ আগস্ট রাজধানী জাকার্তায় প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। সংসদ সদস্যদের অতিরিক্ত বেতন ও ভাতার প্রতিবাদে জনগণ রাস্তায় নামে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের গাড়ির চাপায় ২১ বছর বয়সী মোটরসাইকেল রাইড-শেয়ার চালক আফফান কুরনিয়াওয়ান নিহত হলে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো এবং পুলিশ প্রধান ক্ষমা প্রার্থনা করলেও জনরোষ প্রশমিত হয়নি। বরং আন্দোলন পশ্চিম জাভা থেকে বালি ও লম্বক দ্বীপসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।সংসদ সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি ছিল এই প্রতিবাদের মূল কারণ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার একজন সংসদ সদস্য প্রতি মাসে একশো মিলিয়নের বেশি রুপিয়া (প্রায় ৬,১৫০ মার্কিন ডলার) বেতন পান, যা সাধারণ মানুষের গড় আয়ের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ আবাসন ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইন্দোনেশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইভ ওয়ারবার্টন বিবিসিকে বলেন, 'যখন সরকার কৃচ্ছ্র নীতি গ্রহণ করছে আর সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভুগছে, তখন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী শ্রেণির আয় বাড়ার খবর স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ তৈরি করে।'আফফানের মৃত্যুর পর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় পুলিশি জবাবদিহিতার দাবি। একই সঙ্গে দুর্নীতি, বৈষম্য ও অর্থনৈতিক চাপও বিক্ষোভে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে।পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও ঘোষণা দেন, রাজনীতিবিদদের কিছু রাষ্ট্রীয় সুবিধা কমানো হবে। তবে আন্দোলনকারীরা এটিকে যথেষ্ট মনে করছেন না। অল-ইন্দোনেশিয়ান স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হেরিয়ান্তো বিবিসিকে বলেন, এটি 'সঠিক দিকের পদক্ষেপ হলেও মূল সমস্যার সমাধান নয়।'অন্যদিকে সহিংসতা মোকাবিলায় প্রাবোও সেনা ও পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক বিধানসভার ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাকাসার শহরে স্থানীয় সংসদ ভবনে অগ্নিসংযোগে তিনজন নিহত হন। রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভকারীরা আঞ্চলিক আইনসভার সদস্যদের বাড়ি লুট করে। এ অবস্থায় প্রাবোও চীনে পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করেন।সংকটের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রভাব পড়েছে। টিকটক ইন্দোনেশিয়ায় সাময়িকভাবে লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ রেখেছে। হেরিয়ান্তো মন্তব্য করেন, কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া 'মিশ্র'। তার ভাষায়, 'একদিকে তারা সংলাপের চেষ্টা করেছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। যখন সংলাপের চেয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অগ্রাধিকার পায়, তখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।'এই আন্দোলন কোন দিকে যাবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রাবোও সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরীক্ষার মুহূর্ত। সংসদীয় সুবিধা কমানো ও আফফানের মৃত্যুর তদন্তের দাবির পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা কাঠামোগত সংস্কারের চাপ দিচ্ছে। হেরিয়ান্তো বলেন, 'সামাজিক আন্দোলন প্রায়ই জমে থাকা ক্ষোভ থেকে জন্ম নেয়, আর এ ধরনের পরিস্থিতি পরিবর্তনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।'


No comments

Powered by Blogger.